Recruitment Scam: ‘চাকরিটা পরীক্ষা দিয়েই পেয়েছে তো?’, মেয়েকে পাত্রস্থ করার আগে কি খোঁজ বাড়বে?

Nileswar Sanyal | Edited By: সায়নী জোয়ারদার

Mar 13, 2023 | 1:31 AM

Jalpaiguri: শিক্ষক পছন্দের কারণ হিসাবে বলা হত, শিক্ষক সমাজ গড়ার কারিগর। তাই সমাজে তাঁদের অন্য সম্মান।

Recruitment Scam: চাকরিটা পরীক্ষা দিয়েই পেয়েছে তো?, মেয়েকে পাত্রস্থ করার আগে কি খোঁজ বাড়বে?
পাত্র শিক্ষক শুনলেই চাপ। প্রতীকী ছবি।

Follow Us

জলপাইগুড়ি: মেয়েকে পাত্রস্থ করার ক্ষেত্রে অধিকাংশ বাবা-মায়ের প্রথম পছন্দই থাকে শিক্ষক (School Teacher)। কারণ, শিক্ষক-জামাই মানেই নির্ঝঞ্ঝাট কর্মজীবন। কাজ একেবারে মাপা সময়ে, ছুটিছাটারও অভাব নেই। আনুসঙ্গিক সুযোগ সুবিধাও মন্দ নয়। আর সবথেকে বড় কথা হল, একজন শিক্ষক ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ার কারিগর। মাটির তালকে যেভাবে নিজের দক্ষতায় মূর্তিতে রূপান্তরিত করেন শিল্পী, শিক্ষকও সেভাবেই ছোট ছোট শিশুদের ভবিষ্যৎ গড়েন। তিনি সমাজ গড়ার বিশ্বকর্মা। কিন্তু গত এক দেড় বছরে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে রাজ্যজুড়ে যে তোলপাড় চলছে, ভুয়ো শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে আদালতের নির্দেশে একের পর এক চাকরি বাতিল; তাতে এখন কিছুটা থতমত মেয়ের মা-বাবারাও। মেয়ের সম্বন্ধ আসা ছেলে যদি শিক্ষক হন, তাহলে তাঁরা জেনে নিচ্ছেন, ‘চাকরিটা পরীক্ষা দিয়েই পেয়েছো তো?’ মেয়ের বাবা মায়ের কেউ কেউ বলছেন, প্রয়োজনে শিক্ষিত ছেলে হলে ব্যবসা করতে চাইলে সাহায্যও করতে রাজি। তবে শিক্ষক হলে সবদিক না দেখেশুনে মোটে মেয়ে দেবেন না। সত্যি যদি এই অবস্থা চলতে থাকে তবে কি আগামিদিনে শিক্ষক কিংবা সরকারি চাকুরে ছেলে পাত্রীই পাবে না? সেই উত্তর খুঁজতে টিভি নাইন বাংলার পক্ষ থেকে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলা হয়। প্রশ্ন শুনেই ময়নাগুড়ির বাসিন্দা রমা বর্মন বলেন, “চারপাশে যা চলছে, তাতে শিক্ষিত বেকার যুবককে ব্যবসার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে তার সঙ্গে বাড়ির মেয়ের বিয়ে দেব। কিন্তু শিক্ষকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়াটা ঝুঁকির হয়ে যাচ্ছে দেখছি।”

প্রশ্ন উঠছে, তবে কি আদালতের নির্দেশে চাকরি যাওয়ার প্রভাব পড়ল ছাদনাতলায়ও? একটা সময় গ্রাম হোক কিংবা শহর, গৃহস্থের বিবাহযোগ্য মেয়ের সম্বন্ধ করতে গেলে প্রথম প্রশ্নই থাকত, ‘ছেলে কি সরকারি চাকরি করে?’ এবার তাতে যেন কিছুটা দ্বিধা জুড়ে গেল।

আগে বিয়ের সম্বন্ধ আসলে ঘটকের কাছে মেয়ের বাবা, মা প্রশ্ন করতেন ছেলে কী করে? সরকারি কর্মচারী? উত্তর হ্যাঁ এলে, পরের প্রশ্নই থাকত স্কুলে নাকি অন্য কোনও সরকারি দফতরে? অর্থাৎ বিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম পছন্দই ছিল শিক্ষক পাত্র।

শিক্ষক পছন্দের কারণ হিসাবে বলা হত, শিক্ষক সমাজ গড়ার কারিগর। তাই সমাজে তাঁদের অন্য সম্মান। কিন্তু গত কয়েক মাসে এ রাজ্যে যা ঘটেছে, তাতে শিক্ষক সম্পর্কে ধারণাটাই হঠাৎ করে বদলে যেতে শুরু করেছে। টাকার বদলে কেউ যদি চাকরি কিনে শিক্ষক হয়ে সমাজ গড়তে যান, তাহলে সে সমাজ যে কীভাবে গঠন হবে, তা তো চিন্তা ব্যক্ত করলেন অনেকে।

জলপাইগুড়ি কেরানি পাড়ার বাসিন্দা সীমা দাস জানান, “মেয়ের বিয়ে দেওয়ার আগে অবশ্যই পাত্র সম্পর্কে ভাল করে খোঁজ নেব। যদি সেই ছেলে অতি সম্প্রতি চাকরি পেয়ে থাকে তাহলে তো আরও বেশি করে খবর নেব। চারপাশে যা শুনছি।”

জলপাইগুড়ি অশোকনগরের মমতা দাসেরও এক কথা, “নিয়োগকাণ্ড সামনে আসার পর আমরা অভিভাবকেরা মেয়ের বিয়ে দেওয়া নিয়ে অথৈ জলে পড়ে গেলাম। একেই তো সরকারি চাকরি তেমন ভাবে হচ্ছে না। তার উপর একের পর এক চাকরি বাতিল হয়ে যাচ্ছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতেও রোজই লোক ছাঁটাইয়ের কথা শুনি। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে যদি পাত্র ভাল ব্যবসা করেন, তবে অবশ্যই এগোব।”

জলপাইগুড়ি বাহাদুর গ্রামপঞ্চায়েতের বাসিন্দা তথা সমাজকর্মী মজিদ আলম জানান, “এইসব দেখার পর তো আমি ভেবেছি বাড়ির মেয়েকে গ্রামের কোনও কৃষক, টোটো চালক কিংবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিয়ে দেব। কারণ, দিনের শেষে সামান্য কিছু হলেও নিশ্চিত আয় আছে। এই আয়ে অসৎ পথে হাঁটার কোনও সুযোগও নেই। খেটে আনা পয়সা।”

এ বিষয়ে বিজেপি শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতি তনয় দাসের বক্তব্য, “দুর্নীতিকাণ্ড এখন এই রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি সামাজিক পরিস্থিতিতেও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।” তবে তৃণমূলের মুখপাত্র তথা জলপাইগুড়ি জেলাপরিষদের সহকারী সভাধিপতি দুলাল দেবনাথের কথায়, “জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে তিন বিধাতা নিয়ে। যার যেখানে বিবাহ লেখা আছে তার সেখানেই হবে। তা কেউ খণ্ডাতে পারবে না।”

Next Article