দত্তপুকুর: এগরার বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের (Egra blast) তিন মাস পর একই ঘটনার সাক্ষী হল উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরের (Duttapukur) নীলগঞ্জ এলাকার বাসিন্দারা। কেবল বিস্ফোরণ নয়, গোটা ঘটনাতেই যেন এগরার সঙ্গে মিলে গেল দত্তপুকুর। এগরার ওই বাজি কারখানার মালিক একবার গ্রেফতার হওয়ার পর ফের বেআইনি বাজি কারখানায় সামিল হন এবং ওই কারখানায় বিস্ফোরণে তাঁর মৃত্যু হয়। দত্তপুকুরের এই বেআইনি বাজি কারখানার মালিক কেরামত শেখের (Keramat Sheikh) কী পরিণতি হয়েছে এখনও স্পষ্ট নয়। তবে এগরার বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের পর গ্রেফতার হয়েছিল কেরামত। কিন্তু, তারপরেও সে শুধরোয়নি। এগরার ভানুর মতোই জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ফের বাজি তৈরির খেলায় মেতে ওঠে কেরামত।
পুলিশ সূত্রে খবর, এগরায় বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের পর জেলায়-জেলায় বেআইনি বাজি কারখানায় তল্লাশি অভিযান চালায় জেলা পুলিশ। সেই অভিযানে দত্তপুকুরের নীলগঞ্জ এলাকা থেকে ৩৭ টন বেআইনি বাজি উদ্ধার হয়। তখনই কেরামত শেখ গ্রেফতার হয়। যদিও গ্রেফতারির কয়েকদিন পরেই সে জামিন পেয়ে যায়। তারপর ফের বাজি তৈরির কাজে মেতে ওঠে কেরামত।
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, দত্তপুকুরের নীলগঞ্জ এলাকায় সামসুলের বাড়ি ভাড়া নিয়ে কেরামত বেআইনিভাবে বাজি তৈরির ব্যবসা করছিল। মুর্শিদাবাদ থেকে কর্মী নিয়ে এসে বাজি তৈরি করত সে। প্রতিবেশী রমজান আলির বাড়ির দোতলায় সারি সারি মেস ঘর রয়েছে। সেখানেই ওই কর্মীরা থাকত। এদিনের বিস্ফোরণের পর ওই সমস্ত মেস ঘর খালি। বেগতিক বুঝে সকলে পালিয়েছে বলে অনুমান। এদিকে, কেরামতের ব্যবসার কথা জানতেন না বলে দাবি তাঁর প্রথম স্ত্রী রুবি বিবির। তাঁর দাবি, কেরামত অন্যের বাজি কারখানার কর্মী ছিলেন। তবে বেআইনি ব্যবসা জমানোর পাশাপাশি কেরামতের পারিবারিক জীবনও বেশ রঙিন। তার দুই স্ত্রী এবং চার সন্তান রয়েছে। চার সন্তানের মধ্যেই এদিনের বিস্ফোরণে একজনের মৃত্যু হয়। তিনি কেরামত শেখের প্রথম স্ত্রী রুবি বিবির বড় ছেলে রবিউল। এদিকে, বিস্ফোরণের পর থেকে কেরামতের হদিশ মেলেনি। তাঁরও মৃত্যু হয়েছে বলেই পরিবারের আশঙ্কা।
এদিকে, বিস্ফোরণস্থলে উদ্ধারকাজ অব্যাহত। কংক্রিটের বাড়ির ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে দেহের খোঁজ চলছে। আর উদ্ধারকাজ চালানোর সময়ও বেশ কয়েকটি ছোট-ছোট বিস্ফোরণের সম্মুখীন হতে হয় উদ্ধারকারী দলের কর্মীদের। উদ্ধারকারী দলের এক কর্মী জানান, পাশের বাড়ির ভাঙা ছাদের অংশ টানতে গিয়েই ছোট ছোট বিস্ফোরণ। ওই ছাদে বিভিন্ন আকৃতির আলু বোমা বাজি মজুত করা ছিল। বেগতিক বুঝেই পুলিশ দ্রুত দমকল বাহিনী ডাকে এবং ধ্বংসস্তূপে বোমার উপর জল দিয়ে বোমা নিষ্ক্রিয় করার কাজ শুরু করে। আবার বিস্ফোরণস্থল থেকে ৫০ মিটার দূরে বাঁশ বাগানে ত্রিপলের নীচে আলু বোমা এবং চটপটি বোমা তৈরি হতে দেখা যায়। আবার কেরামত শেখের বিজনেস পার্টনার আজবুর রহমানের প্রাসাদপম বাড়ির পিছনে মজুত প্রায় ৫০ থেকে ৬০ বস্তা আলু বোমা। সবমিলিয়ে, কেরামত যে ভালোই বেআইনি বাজির ব্যবসা জমিয়েছিল, তা স্পষ্ট। এবার তার খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ।