কেউ বলছেন ‘ভুল হল’, অনেকে থাকছেন লোকচক্ষুর আড়ালে, কীভাবে সময় কাটাচ্ছেন দলবদলুরা?

ঋদ্ধীশ দত্ত |

May 04, 2021 | 4:52 PM

আপতত লোকচক্ষুর আড়ালে গিয়ে অনেকটাই নিভৃতে সময় কাটাচ্ছেন ভোটের আগেই বিজেপিতে হাইজাম্প মারা একসময়ের এই তাবড় তৃণমূল নেতারা।

কেউ বলছেন ভুল হল, অনেকে থাকছেন লোকচক্ষুর আড়ালে, কীভাবে সময় কাটাচ্ছেন দলবদলুরা?
নিজস্ব চিত্র

Follow Us

তাঁদের দলবদলের পর রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একটি অংশ একে ডুবন্ত জাহাজ ছেড়ে পালানোর উপমা দিয়ে ব্যাখ্যা করেছিলেন। আরেক অংশ দাবি করেছিলেন, নিজের ভুল তাঁরা বুঝতে পারবেন। ২ মে-র পর দেখা যাচ্ছে, যে জাহাজ ছেড়ে তাঁরা পালিয়েছিলেন, তা আদৌ ডোবেনি। অন্যদিকে যে তরীতে তাঁরা নিজেদের ভাসিয়েছেন, তার যাত্রাপথ অনেকটা দূর্গম হতে যাচ্ছে। ফলে দলবদলু সেই প্রাক্তন তৃণমূল এবং অধুনা বিজেপি নেতাদের নেতাদের নিয়ে যে কথা হবেই, সেটা তাঁরা নিজেরাও জানেন। সম্ভবত সেই কারণেই আপতত লোকচক্ষুর আড়ালে গিয়ে অনেকটাই নিভৃতে সময় কাটাচ্ছেন ভোটের আগেই বিজেপিতে হাইজাম্প মারা একসময়ের এই তাবড় তৃণমূল নেতারা।

শুভেন্দু অধিকারী

ফাইল চিত্র

একুশের যুদ্ধে আলবাত অসাধ্য সাধন করে দেখিয়েছেন শুভেন্দু। হারিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যিনি শুধু নিজের মুখ দেখিয়ে ২১৩ টি বিধানসভায় জয়লাভ করেছেন, তাঁকে আটকে দিয়েছেন শিশিরপুত্র। কিন্তু নিটফল? চুপচাপ শান্তিকুঞ্জে বসে সময় কাটাতে হচ্ছে শুভেন্দুকে।

এই নির্বাচন শুভেন্দুর কাছে ব্যক্তিগতভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকলেও বিজেপি দ্রুত ভুলতে চাইবে। ৩ থেকে ৭৭ পৌঁছনোকে খাটো করে দেখার কোনও অবকাশ নেই ঠিকই। কিন্তু সঙ্গে এটাও সত্যি যে ডঙ্কানিনাদ অমিত শাহ, জেপি নাড্ডা বা স্থানীয় স্তরে দিলীপ-শুভেন্দুরা করেছিলেন, তার ধারেকাছেও যেতে পারেনি বিজেপি। ফলে নিজের জয়ের সার্টিফিকেট সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেই মুখে কুলুপ এটে নিয়েছেন তিনি। রবিবার রাতে হলদিয়ার গণনা কেন্দ্র থেকে শান্তিকুঞ্জে ঢোকার পর আর ঘর থেকে বেরোতে দেখা যায়নি তাঁকে। সংবাদমাধ্যমের ফোনও তেমন একটা ধরছেন না।

রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়

ফাইল ছবি

দলবদলুদের মধ্যে শুভেন্দু এই লড়াই জিতে গেলেও বাকিদের অবস্থা শোচনীয়। প্রথমেই বলতে হয় প্রাক্তন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা। ভোটের লড়াইয়ে পুরোপুরি নাকানিচোবানি খেয়েছেন তিনি। কল্যাণ ঘোষের কাছে হেরেছেন প্রায় ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে। তারপর থেকে সংবাদ মাধ্যম বা নিজের ঘনিষ্ঠ মহলেও টুঁ শব্দটা করেননি রাজীব। কেবলমাত্র ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছিলেন। সেখানে মানুষের রায় মাথা পেতে নেওয়ার কথা বলেন তিনি। এরপরই পুরোপুরি একা করে নেন নিজেকে। সূত্রের খবর, বর্তমানে নিজের কলকাতার বাড়িতেই রয়েছেন রাজীব। নিজের মতো সময় কাটাচ্ছেন সেখানে।

প্রবীর ঘোষাল

ফাইল ছবি

অমিত শাহের পাঠানো চাটার্ড বিমানে চেপে যে কজন তৃণমূল বিধায়ক বা নেতা বিজেপিতে যোগ দিতে দিল্লি উড়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হুগলি উত্তরপাড়ার এই বিধায়ক। তিনিও সেখানে অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিকের কাছে প্রায় ৪০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন। আর হারের পর থেকেই একা সময় কাটাচ্ছেন।

প্রবীরবাবুর নিজস্ব বাড়ি রয়েছে কোন্ননগরে। রবিবার ফলাফল প্রকাশ পাওয়া শুরু করার পরই নিজের বাড়িতে রয়েছেন। রাজনীতি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে বিশেষ কথা বলছেন না। আগামী দিনে কী করবেন, নিজের রাজনৈতিক গাড়ির স্টিয়ারিং কোনদিকে ঘোরাবেন, তা এখনও নিশ্চিত করেননি।

বৈশালী ডালমিয়া

জগমোহন কন্যা বৈশালী ডালমিয়া ২০১৬ সালে বালি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করেন মমতা। তিনি জয়ী হয়েছিলেন ঠিকই। তবে তাঁর বিরুদ্ধে বালির তুলনায় কলকাতায় বেশি সময় কাটানোর অভিযোগ তুলতেন দলের একাংশের নেতারা। ফলে একটা চাপা ক্ষোভ ছিলই। বৈশালীও ছিলেন চাটার্ড বিমানে চেপে দিল্লিতে গিয়ে গেরুয়া শিবিরে যোগ দেওয়ার দলে। কিন্তু ভোটযুদ্ধে হেরে গিয়ে আপতত সেই কলকাতার বাড়িতেই সময় কাটাচ্ছেন বৈশালী। তিনি রাজনীতি চালিয়ে যাবেন কি না সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে ইতিমধ্যেই।

রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য

রবীন্দ্রনাথ ভট্টচার্য

ফল প্রকাশের পর দলবদলুদের মধ্যে একমাত্র মুখ খুলেছেন সিঙ্গুরের চারবারের প্রাক্তন বিধায়ক। টিকিট না পেয়ে শিবির বদলের সিদ্ধান্ত যে তাঁর ভুল ছিল এবং সেই কারণেই এহেন ফল হয়েছে, তা নিজের মুখেই দ্ব্যর্থহীন ভাষায় স্বীকার করেছেন রবীন্দ্রনাথ। বয়স ৯০ উর্ধ্ব হলেও আপাতত রাজনীতি চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে তাঁর। তবে তিনি বিজেপিতেই থাকবেন, নাকি পুরনো দলে ইউ-টার্ন মারবেন, তা নিয়ে জল্পনা এখনও জিইয়ে রেখেছেন রবীন্দ্রনাথ। সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আরও কিছুটা সময় চেয়েছেন তিনি।

জিতেন্দ্র তিওয়ারি

ফাইল ছবি

তৃণমূলে থাকার সময় আসানসোল পুরসভার মেয়র ছিলেন তিনি। ছিলেন পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়কও। তা সত্ত্বেও একবার তৃণমূল ছেড়ে প্রায় বিজেপিতে চলে গিয়েই ফিরে আসেন তিনি। এরপর ফের পাকাপাকিভাবে চলে যান বিজেপিতে। টিকিট পান। কিন্তু নিজের চেনা আসনেই হেরে যান জিতেন্দ্র। আপাতত পরাজয় স্বীকার করে তিনিও চার দেওয়ালের মধ্যে নিজেকে বন্দি করে নিয়েছেন। সংবাদ মাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে চাননি এখনও পর্যন্ত।

 

Next Article