মালদহ: একেবারে পিকনিকের মেজাজ। যে রানওয়েতে বিমানের যাতায়াত সেখানেই বিক্রি হচ্ছে ফুচকা। পাওয়া যাচ্ছে পপকর্ন, থেকে বাদাম-ঝালমুড়ি। কেউ কেউ আবার রানওয়েতেই যোগাসন শুরু করে দিয়েছে, কেউ দৌঁড়াচ্ছেন তো কেউ করছেন জগিং। পাশে চলছে ক্রিকেট, ফুটবলের ম্যাচও। শুধু তাই নয়, পিলপিল করে ঢুকছে গরু-ছাগলের দলও। চলছে টোটো, বাইক, সাইকেল, এমনকী চারচাকাও। অথচ যে রানওয়েতে এই ছবি দেখা যাচ্ছে তার জন্য ২০১৭ সালে ১৭ কোটি টাকারও বেশি খরচ হয়ে গিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এ ছবি আসলে মালদহ এয়ারপোর্টের।
ইতিহাস বলছে, ষাটের দশকের শুরু থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত এখানে চালু ছিল বিমান পরিষেবা। এখানে যে রানওয়ে রয়েছে তা কোচবিহার বিমানবন্দর তো বটেই, অন্য অনেক বিমানবন্দরের থেকেই বড়। বর্তমানে ৩৫০ একর জায়গার অধিকাংশই বেদখল হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। কিন্তু, কেন এই বেহাল দশা। উত্তর খুঁজতে গিয়ে শোনা যাচ্ছে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের কথা। একাধিকবার বন্দর চালুর বিষয়ে কথা হলেও কিন্তু রাজনীতির মারপ্যাঁচে তা এখন বিশ বাঁও জলে। এদিকে যে এলাকায় এই বিমানবন্দর পড়ে তা আদপে দক্ষিণ মালদহ কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। এখানে আবার বরাবরের দাপট রয়েছে কংগ্রেসের। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকের মতে যেহেতু রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল বা কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপির এখানে ক্ষমতা কম তার ফলে ‘বঞ্চনা’ বাড়ছে। কারণ বিমানবন্দর চালু হয়ে গেলে তার সব কৃতিত্ব চলে যাবে এলাকার সাংসদের কাঁধে। যদিও রয়েছে ভিন্ন মতও। এখন তো রোজই মেলা বসে এই বিমানবন্দরে।
শোনা যায়, গনিখান চৌধুরীর উদ্যোগেই ষাটের দশকে এই বিমানবন্দর চালু হয়। তারপর থেকে নিয়মিত বিমান চলাচল করতো। ১৯৮৬ সালের পর পাকাপাকিভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ইংরেজবাজার থেকে দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। কার্যত শহরের প্রাণকেন্দ্রে থেকেও বর্তমানে বন্দরের এই বেহাল দশায় উঠছে প্রশ্ন। ৩৫০ একরের এই বিমানবন্দরে রয়েছে ১৪৫০ মিটার লম্বা ও ৩০ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট রানওয়ে রয়েছে। মাঝে মাঝে ভোটের সময় এখানে হেলিকপ্টর নামে বিশেষ অতিথি বা নেতা মন্ত্রীরা এলে। বিমানবন্দরটির উন্নয়নের জন্য ১৭ কোটি ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দও করা হয় ২০১৭ সালে। নতুন করে রানওয়ে তৈরি হয়। কিন্তু, সেখানেই এখন চলছে ‘মেলা’, সঙ্গে খেলাও।