মালদা: করোনা আর লকডাউনের সুযোগে উত্তরবঙ্গ জুড়ে রমরমিয়ে চলছে বিষাক্ত ভেজাল সরষের তেলের ব্যবসা। যা খেয়ে অসুস্থ হচ্ছেন অনেকেই। এর মূল কারখানা গুলো তৈরি হয়েছে মালদায়। খবর পেয়ে অভিযান চালাল পুলিশ। হাতেনাতে ধরল সেই কারখানা। মালদার চাঁচল, গাজোল, হরিশ্চন্দ্রপুর, সামসির বিভিন্ন গোপন জায়গায় ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠছে ভেজাল সরষের তেলের ব্যবসা।
কী ভাবে তৈরি হয় এই ভেজাল তেল?
মূলত, বাজার থেকে খুব কম দামে পুরনো নষ্ট হয়ে যাওয়া পাম তেল কেনা হয়। বার বার সেই তেল গরম করা হয়, তার রঙের পরিবর্তন আনার জন্যে।পাশাপাশি তাতে মেশানো হয় বিষাক্ত রঙ, রাসায়নিক। যা দেখতে এবং ঝাঁঝে সরষের তেলের মতোই হুবহু হয়ে যায়। কিন্তু এই তেল খাওয়ার পক্ষে বিপজ্জনক। নিয়মিত খেলে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সেই তেলই ব্র্যান্ডেড নামি কোম্পানির মোড়কে বোতল বা টিনে প্যাক করে বাজারের বিভিন্ন দোকানে দেওয়া হয়। পাঠানো হয় উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বাজারে।এমনকি মুর্শিদাবাদেও যায়।
বহু জায়গা থেকে এই তেল খেয়ে অসুস্থ হওয়ার খবর পেয়ে তৎপর হয় মালদা জেলা স্বাস্থ্য দফতর এবং জেলা প্রশাসন। কারখানার খোঁজে পুলিশের সাহায্যে অভিযানে নামেন আধিকারিকরা। এরপরেই চাঁচলের কান্ডারণ এলাকায় খোঁজ মেলে একটি ভেজাল তেলের কারখানার। সেখানে খুব গোপনে চালানো হচ্ছে কারখানা। অভিযানের খবর পেয়েই জিনিসপত্র ফেলে পালাতে শুরু করে সকলে। তবু পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়।তবে মূল অভিযুক্ত এখনও পলাতক। উদ্ধার হয় মেশিনপত্র, বিভিন্ন রাসায়নিক, পাম তেল এবং বিভিন্ন কোম্পানির লেবেল লাগানো তেলের টিন, বোতল। যার মধ্যে ভরা ছিল বিষাক্ত ভেজাল তেল। আধিকারিকরা তেল ও বিভিন্ন রাসায়নিকের নমূনা সংগ্রহ করেছেন পরীক্ষার জন্যে। খোঁজ চালানো হচ্ছে আরও কারখানার। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে পাঁচ জনকে। এদিকে এই ঘটনা সামনে আসায় আতঙ্কিত এলাকার মানুষ। দোকান থেকে সরষের তেল কিনতেও ভয় পাচ্ছেন তাঁরা। এই করোনা পরিস্থিতিতে খাওয়ারেও বিষ আবার কোন বিপদ ডেকে আনবে এই আশঙ্কা রয়েই যাচ্ছে।
মহকুমা শাসক সঞ্জয় পাল ও উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়ন্ত বিশ্বাসের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়। সঞ্জয় পাল বলেন, ‘লকডাউনের সময় গোপনে কারখানা চালানো হচ্ছিল। সেখানে নকল সরষের তেল তৈরি করে বাজারে পাঠানো হচ্ছিল। আমরা খবর পেয়ে পুলিশকে জানাই।পুলিশের সাহায্যে এখানে হানা দি্ই। পাঁচজনকে আমরা গ্রেফতার করেছি।বাকিদের খোঁজ চলছে। এ জাতীয় কারখানা আর কত আছে তা আমরা খতিয়ে দেখছি।
অন্যদিকে, জয়ন্ত বিশ্বাস জানান নিম্ন মানের পাম তেলকে বার বার গরম করা হচ্ছিল। কিছু কেমিক্যাল মেশানো হয়। এই সব কিছুর স্যাম্পেল সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষা করা হবে। চিকিৎসক দের কথায়, এই জাতীয় তেল চরম অস্বাস্থ্যকর। বিভিন্ন স্নায়ু রোগ, কিডনির সমস্যা থেকে শুরু করে ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।