মালদা: ইংরেজবাজারে দেদার নদীর চড় দখল করে বাড়ি বানানোর অভিযোগ। আর এই অভিযোগ বিরোধীরা নয়, এই অভিযোগ তুলছেন তৃণমূলের মালদা জেলার সহসভাপতি দুলাল সরকার। এর সঙ্গে যে দলের একাংশের মদত রয়েছে, সেকথাও অকপটে মেনে নিচ্ছেন তিনি। দুলালবাবু নিজেও ইংরেজবাজার পুরসভার কাউন্সিলর। টিভি নাইন বাংলাকে তিনি বলেন, “কিছু অসাধু মানুষ এখানে ঢুকে আমাদের নদীর চড়গুলিকে দখল করছে। সেখানে বাড়ি করছে। ওই এলাকাগুলিতে বিজেপির কাউন্সিলররা রয়েছেন। অবশ্যই কাউন্সিলরদের কিছু না কিছু হাত আছে এখানে। আমাদের কাউন্সিলরদের লোকেরাও এর মধ্যে জড়িত আছে। পয়সা নিচ্ছে কি না, সেটা আমার জানা নেই, কিন্তু নদীর চড়গুলিতে এসে সবাই বসবাস করছে। নদীর মূলস্রোত নষ্ট হচ্ছে। প্রশাসন থেকে কিছু বলা হয় না।”
নদীর চড় বেআইনিভাবে বিক্রির অভিযোগে এদিন বিরোধীদের পাশাপাশি দলের একাংশকেও কাঠগড়ায় তুললেন তৃণমূলের জেলা সহসভাপতি। তাঁর স্পষ্ট কথা, “পুলিশের উচিত এদের উঠিয়ে দেওয়া। যারা কিনেছে, তাদের কাছে দলিল আছে কি? যাদের নামে কিনেছে, যারা টাকা দিয়ে বিক্রি করেছে, তাদের অবিলম্বে এফআইআর হওয়া উচিত। সে তৃণমূল হোক, বিজেপি হোক, কংগ্রেস হোক। আমার পার্টির ছেলেরা হলে, তাদেরও গ্রেফতার করা উচিত।”
এই নদীর চড়ে যাঁরা থাকছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে উঠে আসল আরও মারাত্মক তথ্য। তাঁরা বলছেন, যখন তাঁরা এই জমি কিনেছিলেন তখন কাঠা পিছু ৭০ হাজার টাকায় কিনেছিলেন। সেই দাম এখন উঠছে কাঠা পিছু ৩ লাখ টাকা বা তারও বেশি। এই নদীর জমি খাস জায়গা বলেই তাঁদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে বলে দাবি বাসিন্দাদের। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, তাঁরা পুরসভাকে কর দেন, বিদ্যুতের বিলও দেন। এলাকার মহিলারা নিজেরাও বলছেন, বেআইনিভাবেই থাকছেন। তাঁদের বক্তব্য, ‘জানি বেআইনি, কিন্তু কী করব! আমাদের পয়সা নেই বলেই তো এখানে এসেছি।’
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যয়ান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর সঙ্গেও। তাঁর অবশ্য দাবি, নদীর চড়ে বাড়ি বানিয়ে থাকা মানুষজনদের থেকে কোনও কর নিচ্ছে না পুরসভা। পুরসভার চেয়ারম্যান অবশ্য আশ্বস্ত করেছেন, তাঁদের কাছে কোনও অভিযোগ গেলে এই বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে।
সেচ দফতরের ওয়ার্ক অ্যাসিস্ট্যান্ট চিরঞ্জীব মিশ্রও জানাচ্ছেন, ‘বিষয়টি যে আমাদের নজরে আসেনি, তা নয়। সেচ দফতরের তরফে আমরা দেখেছি, নদীর বেডে এবং নদীর পাড়ে পিলার দিয়ে অনেকে পাকা বাড়ি বানিয়েছে। সেচ দফতরের তরফে এই নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণের চেষ্টা চলছে।’ তিনি আরও জানান, নদীর বেডে যে জমি থাকে, সেটা কখনও খাস জমি হতে পারে না।