স্রেফ মনে এসেছিল একটাই কারণ, খুঁটিতে বেঁধে শরীর চিরে দিলেন ওঁরা! ছুটির সকালের নৃশংসতা

Maldah: রবিবার সকালেও ওই ব্যক্তিকে এলাকায় ইতঃস্তত ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। লোকজন নানাভাবে তাকে প্রশ্ন করতে থাকে।

স্রেফ মনে এসেছিল একটাই কারণ, খুঁটিতে বেঁধে শরীর চিরে দিলেন ওঁরা! ছুটির সকালের নৃশংসতা
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 05, 2021 | 9:49 AM

মালদা: কোনও প্রমাণ ছিল না হাতে। ছিল বলতে কেবল মনে সন্দেহ। আর তার বশেই মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে বাঁশ ও লাঠি দিয়ে চলল বেধড়ক মারধর। মর্মান্তিক ঙটনা পুরাতন মালাদ ব্লকের মঙ্গলবাড়ি গৌড় কলেজ সংলগ্ন ভারত পেট্রোল পাম্পের সামনে।

এলাকার বেশ কিছুদিন ধরেই অনেক সাইকেল খোয়া যাচ্ছিল। অন্কের মনেই সন্দেহ দানা বাঁধছিল। এলাকারই কেউ হয়তো এই চুরির ঘটনায় জড়িত। এরইমধ্যে ওই এলাকা থেকে উধাও হয় বেশ কয়েকটি বাইকও। ফলে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ আরও বাড়তে থাকে।

গত কয়েক মাস ধরে ওই এলাকায় একটি ব্যক্তির আনাগোনা শুরু হয়। উসকো খুশকো চুল, পরনে ছেড়া জামাকাপড়, ময়লা চিটে পড়া গা-হাত-পা! চুলে জটা পড়েছে। ওই ব্যক্তিই উদ্দেশ্যহীনভাবে এলাকায় ঘোরাফেরা করতে থাকেন। এর-তার কাছ থেকে খাবার চেয়েচিন্তে খায়। মাঝেমধ্যে খাবারের দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। সকলের অলক্ষ্যে কিছু নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে ধমক খায়।

এলাকার লোকজনের সন্দেহ গিয়ে পড়ে তাঁর ওপর। এলাকাবাসীদের মনে হতে থাকে, সেই হয়তো কোনওভাবে এই বাইক চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত! পাগল সেজে এলাকায় ঘুরে বেড়ায়, রেইকি করে, তারপর সুযোগ বুঝে বাইক নিয়ে চম্পট দেয়, ঠিক এমনটাই ধারণা জন্মে যায় এলাকাবাসীর মনে। অনেকে গুজবও ছড়াতে থাকেন। প্রায় উল্কা গতিতে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে গুজব।

রবিবার সকালেও ওই ব্যক্তিকে এলাকায় ইতঃস্তত ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। লোকজন নানাভাবে তাকে প্রশ্ন করতে থাকে। কিন্তু কোনও প্রশ্নরই যে তার ঠিকঠাক উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা নেই! আর সেই বোধটাই হয়তো ছিল না এলাকাবাসীদের একাংশের। কোনও প্রমাণ ছাড়াই তাঁরা ধরে নিলেন বাইক চুরির ঘটনায় জড়িত রয়েছেন ওই ব্যক্তিই।

এরপরই শাস্তি। সামনে থাকা ইলেকট্রিক খুঁটিতে তাকে দড়ি দিয়ে বাধা হয়। এরপর চলে উত্তম মধ্যম! লাঠি, লোহার রড দিয়ে চলে এলোপাথাড়ি মারধর। মার খেতে খেতে একসময়ে ঝুঁকে পড়ে সে, রক্তাক্ত শরীরটা ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যায়। এলাকারই অনান্য বাসিন্দারা বাধা দেন। কিন্তু উন্মত্ত জনতা তা শুনতে নারাজ। এরপর খবর যায় থানায়। পুলিশ এসে কোনওভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, “কোনওভাবে আমরা ওদের আটকাতে পারে নি। বহু চেষ্টা করছিলাম বোঝানোর। আরে ওই মানুষটার এমনিতেই মাথার ঠিক নেই। দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আর যদিও তা না হয়, কোনও তথ্য প্রমাণ ছাড়া কীভাবে একজনকে এভাবে নৃশংশভাবে মারধর করা যায়। আমরা আটকাতে না পেরেই পুলিশকে খবর দিই। এখনই প্রশাসনই যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে।”

মঙ্গলবাড়ি ফাঁড়ির পুলিশ গিয়ে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে মঙ্গলবাড়ি ফাঁড়ির পুলিশ। এই বিষয়ে মালদা জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া জানান, যারা এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আরও পড়ুন: ঘুটঘুটে কালো অন্ধকারের মধ্যে শুধু জ্বলত দুটো চোখ, আলো ফেলতেই ঝলসে যেত! ধরা পড়ল চা বাগানের বিভীষিকা