মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের সঙ্গে ওঠাবসা, নীলবাতি গাড়িতে যাতায়াত! পুলিশের জালে এই ভুয়ো অফিসার

Fake Officer: স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এলাকায় বেশ 'দাপুটে অফিসার' বলেই নাকি পরিচিত ছিলেন রাধারানি। তবে এলাকায় সেভাবে কোনও বিরোধে জড়াননি তিনি।

মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের সঙ্গে ওঠাবসা, নীলবাতি গাড়িতে যাতায়াত! পুলিশের জালে এই ভুয়ো অফিসার
বাঁদিকে মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের সঙ্গে, ডানদিকে রাধারানী বিশ্বাস, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 07, 2021 | 5:23 PM

নদিয়া: ‘বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান, এ বার ঘুঘু তোমার বধিব পরাণ।’ রাজ্যে ভুয়ো টিকাকাণ্ড থেকে জাল পদাধিকারী, পরিস্থিতির নিরিখে বোধহয় এই প্রবাদটি সর্বাধিক প্রযোজ্য বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দেবাঞ্জন-সনাতনের ‘দেখানো পথেই’  তাঁর ‘পথচলা’! তিনি রাধারানি বিশ্বাস। ভুয়ো সিআইডি (CID) আধিকারিকের পরিচয় দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠল রাধারানির বিরুদ্ধে। বুধবার, শান্তিপুরের পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাগানে পাড়া এলাকার কাদের শেখের বাড়ি থেকে অভিযুক্তকে আটক করল কোতোয়ালি থানার পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে খবর, গত তিনদিন ধরে নিজের পরিচয় গোপন করে বাগানে পাড়া এলাকায় নিজের গাড়ির চালকের সঙ্গে  কাদের শেখের বাড়িতে তাঁর আত্মীয়ের পরিচয়ে আত্মগোপন করেছিলেন রাধারানি। বুধবার গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযোগ, রাধারানি দীর্ঘদিন ধরেই সিআইডি অফিসারের পরিচয় দিয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়াতেন। কখনও কাউকে চাকরি দেওয়ার নাম করে কখনও বা ভয় দেখিয়ে বা মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছিলেন রাধারানি। নীলবাতি গাড়িতেই যাতায়াত করতেন তিনি। নানা অনুষ্ঠানে রাজ্যের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের সঙ্গেও এক মঞ্চে দেখা গিয়েছে রাধারানিকে। শাসক শিবিরের নানা কর্মসূচিতেও অংশগ্রহণ করেন রাধারানি। সিআইডি অফিসার হওয়ায় এলাকায় দাপট ছিল তাঁর।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এলাকায় বেশ ‘দাপুটে অফিসার’ বলেই নাকি পরিচিত ছিলেন রাধারানি। তবে এলাকায় সেভাবে কোনও বিরোধে জড়াননি তিনি। অনেকেই চাকরির প্রত্যাশায় তাঁর কাছে যেত। এক-দুজনের বোধহয় তাঁর সুপারিশে চাকরিও হয়। কিন্তু পরে, টাকা পেয়ে চাকরি না দিতে পারায় তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তোলেন একাধিক মানুষ। এরপরেই সন্দেহ হয় সকলের। বিগত কিছুদিন রাধারানিকে এলাকাতেও দেখা যায়নি বলে দাবি করেন স্থানীয়রা। তারপরেই পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে।

প্রশ্ন উঠছে সকলের চোখ এড়িয়ে কী করে দিনের পর দিন এভাবে ভুয়ো সিআইডির পরিচয়ে প্রতারণা কীর্তি চালিয়ে গেলেন রাধারানি? নেপথ্যে কোনও বড় নেতৃত্বের যোগসাজশ রয়েছে কি না তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। শাসক শিবিরের একাধিক কর্মসূচিতে দেখা গিয়েছে রাধারানিকে। এই খবর প্রকাশ হতেই বেশ অস্বস্তিতে তৃণমূল। জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে জানানো হয়েছে, অনেকেই নানা কর্মসূচি করেন। জনহিতকর কর্মসূচিতে অনেক নেতামন্ত্রী গিয়ে থাকেন। তারমানেই এই নয় যে, সেই নেতা বা মন্ত্রী ওই প্রতারকের ঘনিষ্ঠ কেউ। পুলিশ এর নিরপেক্ষ তদন্ত করুক।

FAKE CID OFFICER IN NADIA

তৃণমুূলের কর্মসূচিতে উজ্জ্বল বিশ্বাসের সঙ্গে রাধারানি, নিজস্ব চিত্র

উল্লেখ্য, ভুয়ো ভ্য়াকসিনকাণ্ডে ধৃত দেবাঞ্জন দেব নিজেকে কলকাতা পুরসভার যুগ্ম কমিশনার রূপে পরিচয় দেন। দেবাঞ্জনকাণ্ডের ঝড় না থামতেই সনাতন রায় চৌধুরী নামে এক ভুয়ো সিবিআই কর্তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ বার সেই তালিকায় তৃতীয় স্থানে রাধারানি বিশ্বাস।

লক্ষ্যণীয়ভাবে, এই সকল ভুয়ো পদাধিকারীরা ধরা পড়ার পরেই কোনও না কোনও হেভিওয়েট নেতৃত্বের নাম জড়িয়েছে। দেবাঞ্জনরে সঙ্গে রাজ্যের পরিবহমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের ছবি দেখা গিয়েছিল। যদিও, সেই যোগসূত্র অস্বীকার করেন ফিরহাদ। ভুয়ো সিবিআই পদকর্তা সনাতন রায়চৌধুরীর ক্ষেত্রে রুদ্রনীল ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারী-সহ একাধিক নেতৃত্বের ছবি পাওয়া গিয়েছে। এমনকী, বিজেপির সদস্যপদও পেয়েছেন তিনি এমন কার্ডও পাওয়া গিয়েছে। এই ক্ষেত্রেও  সেই সূত্র অস্বীকার করেছে সংশ্লিষ্ট দল। এ বার সেই তালিকাতে রাধারানিও। রাজ্যের হেভিওয়েট নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা গিয়েছে তাঁকেও। ওয়াকিবহাল মহলের মতে,  প্রত্যেক ক্ষেত্রেই  এই ভুয়ো পদাধিকারীরা নিজেদের ‘ক্লিনচিট’ দিতে কার্যত  ব্যবহার করছেন নেতৃত্বদের। কিন্তু, প্রশ্ন উঠছে, দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতারণা চললেও কেন বুঝতে পারেননি কেউ? নাকি, এর পেছনে কোনও ‘রাঘব-বোয়ালের’ নেপথ্য যোগ  রয়েছে তা স্পষ্ট নয়। প্রতারণাকাণ্ডে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

আরও পড়ুন: না চাইতেই অ্যাকাউন্টে ২৫ হাজার! ‘রূপশ্রী’ প্রকল্পে বিবাহিত মহিলারাও পাচ্ছেন টাকা, নেপথ্যে কারা?