বারাসত: বারাসাতে কাজীপাড়ায় নিখোঁজ বাচ্চা দেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই ঘটনায় তার জ্যেঠা আঞ্জীব নবীকে গ্রেফতার করেছে। আর তাঁকে জেরা করে যে তথ্য উঠে আসছে তদন্তকারীদের হাতে, তাতে রীতিমতো শিহরিত দুঁদে পুলিশ কর্তারা। আঞ্জীব নবী অত্যন্ত ধারালো মস্তিষ্কের খুনি এমনটা মনে করছে বারাসত থানার পুলিশ। খুন করবার পর নিজের ভাইপোর দেহ কবর দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কারণ গত ৩০ বছর ধরে আঞ্জীব নবী কবর খোঁড়ার কাজ করেন। এবং একইসঙ্গে মুসলিম মতে কারোর মৃত্যু হলে তাকে যে গোসল করানো হয়, কবর দেওয়ার আগে সেই গোসল করানোর কাজও আঞ্জীব করতেন। সে কারণে তিনি মসজিদের পাশের কবরস্থানে চাবিও নিয়ে রেখেছিল ৭ দিন আগে। খুন করবার সাতদিন আগে কবরস্থানের চাবি নিয়ে রাখা পুলিশের কাছে যথেষ্ট সন্দেহজনক ছিল। মানে প্রথম থেকেই আঞ্জীব নবী ঠিক করে রেখেছিল খুন করে তাকে কবর দিয়ে দেবে। তবে ঘটনার তদন্তে পুলিশি তৎপরতায় সুযোগ পাওয়া যাচ্ছিল না। এ কারণেই আঞ্জীব বারবার খুনের দিশা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে চাইছিল। বারবার পুলিশকে পরিবারকে এলাকার মানুষকে নামাজের পর বলছিল, কেউ ওকে খুন করে উত্তরের দিকে নিয়ে গেছে।
যদি একবার সুযোগ বার করা যেত তাহলে হয়তো সে কবর দিয়ে দিত ওই পরিত্যক্ত বাড়িতে। আর কবর দিয়ে দিলে পুলিশের পক্ষে এই ঘটনার তদন্ত আনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়তো। তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, খুন করে গলায় ঝুলিয়ে দেবে সেটাও সে আগে থেকে ঠিক করেছিল সেই জন্য ভাইয়ের বাড়ি থেকেই একটি শাড়ি চুরি করে নিয়ে ঘুরছিল।ঘটনার দিন ছটা পঞ্চাশ থেকে ৭:৩০ এর মধ্যে খুন হয়। গালে চড় দিয়ে গলা টিপে খুন করে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে দেয় পরিত্যক্ত বাড়িতে। কিন্তু তারপর একটু দিশেহারা হয়ে গিয়েছিল সে মসজিদে যায় বটে নামাজ পড়িয়েছে কিন্তু সেই দিনের নামাজ পড়ানোর ঘটনা তার মনে নেই।
আটটা চল্লিশ নাগাদ তার মসজিদ থেকে তার বাড়ি যাওয়ার পথে মাঝখানে যে সিসিটিভি সেখানে তাকে দেখা যায় কিন্তু সে কখন বাড়ি গেছিল সে বিষয়ে পরিষ্কার করে বলতে পারে না। বাড়িতে সেই দিন সে কি করছিল এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে পুলিশের কাছে বারবার বলে ভারত পাকিস্তানের ম্যাচ দেখেছে। পুলিশ জেরায় জিজ্ঞাসা করে যেদিন ভারত পাকিস্তানের খেলায় কী কী হয়েছে সে সম্পর্কে আঞ্জীব কিছু বলতে পারেনি।
বাড়ির লোক জিজ্ঞাসার সময় বলে পুলিশের কাছে সেই দিন বাড়িতে সিরিয়াল চলছিল তাই আঞ্জীব তাদের সঙ্গে দেখেছে। কিন্তু পরের দিন থেকে আঞ্জীব আবার সতর্ক থাকে। পুলিশকে একাধিকভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিল। কিডনি পাচার থেকে ছেলে ধরা এসমস্ত প্রচার আসলে নিজেকে খুন থেকে আড়াল রাখবার জন্য পুলিশে জিজ্ঞাসাবাদে এই সমস্ত তথ্য উঠে এসছে আঞ্জীবের মুখ থেকে। মৃত ফারদিনের বাবা ও মায়ের সামনে বসে আঞ্জীব পুলিশের কাছে সমস্ত কথা স্বীকার করেছে।