সন্দেশখালি: হাওয়া বদলাতে শুরু করেছে সন্দেশখালির। একটা সময়ে অভিযোগই নিতে চাইতেন না, নামই শুনতে চাইতেন না। বছরের পর বছর ঘুরেছে। ফাইলে জমেছে ধূলো। আর এখন অতি তৎপর BLRO আধিকারিকরা। এখন সন্দেশখালির BLRO অফিসে অভিযোগ জানানোর লম্বা লাইন। সন্দেশখালির ত্রিমণি বাজার সংলগ্ন ভূমি রাজস্ব দফতরে শয়ে শয়ে মানুষ জমি ফেরতেই আবেদন জানিয়ে অভিযোগপত্র জমা করছেন। প্রত্যেক দিন দফতরে ভিড় জমাচ্ছেন গ্রামের শয়ে শয়ে বাসিন্দা। তাতে পৌষ মাস ভূমি রাজস্ব দফতরের অফিস সংলগ্ন ফটো কপির দোকান মালিকের। বিক্রি বেড়ে গিয়েছে তাঁর।
গ্রামবাসীরাই অভিযোগ করছেন, এই সেদিনও ভুয়ো নথি দেখিয়ে জমি হাতানোর নথি আসল বলে দাবি করতে ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর। সন্দেশখালির এক ভুক্তভোগী বলছেন, “বছরের পর বছর এই যে দুয়ারে সরকার হচ্ছে, তাতে হাঁটু সমান ধূলো জমে গিয়েছে একটা ফাইলও খোলা হয়নি। পাট্টা তো মোটেও হয়নি। পয়সা দিয়েও হয়নি আর পার্টির বিল ছাড়াও হয়নি।” আরেক ভুক্তভোগী বলেন, “বিএলআরও-ওই তো ঠিক নেই। ২০১৫ সাল থেকে ২০২৪ সাল হল, আমাকে কোনও রসিদও দেয়নি। আরও ব্যাপার আছে, আমি ২ বিঘা জমি বিক্রি করেছি, কিন্তু দেখা যাচ্ছে, তাঁর নামে ৪ বিঘা হয়ে যাচ্ছে। সরষের মধ্যেই ভূত রয়েছে।”
আরেক প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, “পার্টি বললে হবে, না বললে হবে না। এর সঠিক তদন্ত হওয়ার দরকার, কিন্তু আজ পর্যন্ত হয়নি। তদন্ত করার কেউ সাহসও পায়নি।” আরেক ব্যক্তি বলেন, “সর্বনাশা দুর্নীতি। ১৪৩ বিঘা জমি কীভাবে আলমগির, শেখ শাহজাহান আর তার মেয়ে সুমায়ার নামে কীভাবে রেকর্ড হল?” ঝুপখালি, বেড়মজুর, সন্দেশখালির হাজার হাজার বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, তাঁদের জমির রেকর্ড বদলে যাচ্ছে। আর সে অভিযোগ জানাতে গেলে কথাই শোনা হত না। কিন্তু এখন সন্দেশখালির হাওয়া ঘুরতে শুরু করেছে। সন্দেশখালিতে এখন একটা ভিন্ন ছবি।
ত্রিমণি বাজারে গেলে দেখা যাচ্ছে, প্রতিটি দোকানে বসে অভিযোগপত্র লিখছেন ভুক্তভোগীরা। ফটোকপির বিক্রি বেড়ে গিয়েছে। জমি ফিরে পাওয়ার আশা দেখা যাচ্ছে সন্দেশখালি। সন্দেশখালির বিডিও বলছেন, “বিএলআরও তো অন্যায় করেছেন। এটা তো জাস্টিফায়েড নয়। পেপার দেখতে হবে। জমি তো রাবার নয় যে টাহলে বাড়বে। বিএলআরও তো এই বিষয়টি দেখবে। সব রিপোর্ট আমরা করেছি।”
সন্দেশখালির মহিলারাই প্রথম দেখাতে পেরেছেন, অধিকার বুঝে নেওয়ার লড়াই। প্রত্যন্ত দ্বীপ এলাকার মহিলারা দেখিয়ে দিলেন কীভাবে শাহজাহান-জমানার ইতি টানতে হয়। এখন ‘জমি খেকো’ শাহজাহান ও তার ঘনিষ্ঠরা হাজতে। শাহজাহান ও তাঁর অনুগামীদের অত্যাচারের যে অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে কেঁপে উঠেছিল গোটা বাংলা। সন্দেশখালি রাতারাতি হয়ে উঠেছিল জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুও। লোকসভা নির্বাচনের আগে বাংলার ‘ভোট নিয়ন্ত্রক’ সন্দেশখালিতে রাজনৈতিক জমি পোক্ত করতে চাইছে রাজনৈতক দলগুলি। ইতিমধ্যেই বসিরহাটের প্রার্থী হয়েছেন হাজি নরুল ইসলাম। আর এসবের মাঝেই হাওয়া বদলাতে শুরু করেছে সন্দেশখালির। যা সেখানকার মানুষের কাছে অবিশ্বাস্যই বটে!