উত্তর ২৪ পরগনা: ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের জেরে আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে শাসক-বিরোধী তরজা। সম্প্রতি রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের দিল্লিতে বৈঠক ও উত্তরবঙ্গ সফর নিয়ে সরব হয়েছে তৃণমূল। এ বার রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে তীব্র নিশানা করলেন কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র।
বৃহস্পতিবার, তৃণমূল বিধায়ক বলেন, “রাজ্যপালকে দেখলে পরকীয়ার কথা মনে হয়। কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের সম্পর্ক খারাপ করার পেছনে জগদীপ ধনখড়ই দায়ী। সব বিষয়ে ওঁর এই নাক গলানোটা মোটেও ভালভাবে নিচ্ছে না কেউ। সাধারণ মানুষের কাছেও খিল্লির জায়গায় চলে যাচ্ছেন তিনি। লোকে পরকীয়া করলে যেমন অন্য মানুষের ঘর ভাঙে, অন্যের ঘরে উঁকিঝুঁকি দেয়, সেইরকম করছেন রাজ্যপাল।” বিধায়ক আরও বলেন, “রাজ্যপালের বোঝা উচিত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওঁর চাকর নন। তিনবারের নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা। কিছুদিন আগে যখন ধনখড়ের জন্মদিন ছিল তখন মমতাদি বাড়িতে কেক পাঠিয়েছিলেন। শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। রাজ্যপালের কি কোনও বোধ নেই!”
এখানেই থামেননি তৃণমূল বিধায়ক। বিরোধের সুর উচ্চগ্রামে তুলে মদন বলেন, “ধনখড় নিজের দিকে নজর দিন। নিজেকে খিল্লির জায়গায়, মস্তির জায়গায় নিয়ে গিয়েছেন। মানুষ তাঁকে দেখলেই হাসছে। ছোটরা সুর করে পড়ছে, ‘জল পড়ে পাতা পড়ে, পাগলা হাতির মাথা নড়ে’। ওঁর কাজ কি এখন লোকের ব্যক্তিগত জীবনে প্রবেশ করা! একটা অসভ্য অভদ্র লোক! একটা হাতি পোষা! একে সরিয়ে দেওয়া হোক। আমি বিধায়ক হয়ে বলছি, ওঁকে সরিয়ে দেওয়া হোক, বাংলার চেহারা পাল্টে যাবে। রাজ্যপালের উচিত সরকারকে সাহায্য করা, তা না করে খালি অন্য দিকে মন দিচ্ছেন রাজ্যপাল। ওঁর পদত্যাগ করা উচিত। ওঁ সম্মানের যোগ্য় নন।”
কার্যত, রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত নতুন নয়। এর আগে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের অপসারণ চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের তরফেও একাধিকবার রাজ্যপালকে তীব্র আক্রমণ করা হয়েছে। কিছুদিন আগেই নারদ মামলায় যে সকল হেভিওয়েট নেতার নাম জড়িয়েছিল তাঁদের মধ্যে অন্য়তম ছিলেন মদন মিত্র। তৃণমূলের চার হেভিওয়েট নেতার বিরুদ্ধে সিবিআইকে (CBI) চার্জশিট পেশ করার অনুমতি দেন রাজ্যপালই।
সম্প্রতি, বঙ্গে ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস ও রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার রিপোর্ট দিতে দিল্লি যাত্রা করেছিলেন রাজ্যপাল (Jagdeep Dhankhar) এমনই ইঙ্গিত মিলেছিল রাজভবন সূত্রে। গত সপ্তাহে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী রাজ্য়ের ভোট পরবর্তী হিংসার খতিয়ান তুলে ধরতে রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন। তারপরেই রাজ্য সরকারকে কড়া ভাষায় আইনশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে চিঠি লেখেন ধনখড়। নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে তা নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। এই মর্মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক সারেন রাজ্যপাল। গত সোমবার উত্তরবঙ্গেও সফর সারেন ধনখড়।
ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস নিয়ে শাসক-বিরোধী মামলা গড়ায় হাইকোর্টে। বৃহস্পতিবারই রাজ্যে এসে পৌঁছয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ৮ সদস্যের প্রতিনিধি দল। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে বিস্তারিত রিপোর্ট আদালতে জমা দেবে এই বিশেষ কমিটি। পাশাপাশি রাজ্যপালকে বিধায়কের এ হেন আক্রমণকে সমর্থন করতে নারাজ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এর ফলে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত যে আরও বাড়বে তাও মনে করছেন বিশ্লেষকদের একাংশ।
আরও পড়ুন: ধোপে টিকল না মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন, বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গে পৌঁছল ৮ সদস্যের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধির দল