উত্তর ২৪ পরগনা: হাসপাতালের সামনে প্রচুর ওষুধের দোকান। দিবারাত্র সে দোকান খোলাও থাকে। রোগীরা সেখান থেকে ওষুধ কেনেন। কিন্তু তাতেও হচ্ছে না। ওষুধ বেঁচতে এবারে হাসপাতালের ভিতর ডাক্তারের পাশেই আসনেই বিক্রেতা। ক্যামেরা দেখে আবার নিজের পরিচয়ও গোপন করছেন তাঁরা। পানিহাটি রাজ্য সাধারণ হাসপাতালে সক্রিয় দালাল চক্র।এমনকি হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে দেখা গেল, চিকিৎসকের আসনেই বসে রয়েছেন ওষুধ বিক্রেতা।
বেশ কয়েকদিন ধরে পানিহাটি রাজ্য সাধারণ হাসপাতাল থেকে অভিযোগ আসছিল, বহিরাগত কিছু মানুষ সরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ও আউটডোরে চিকিৎসকদের সঙ্গে ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকেন। যে সমস্ত রোগীরা হাসপাতালে আসে চিকিৎসার জন্য। সেই সমস্ত রোগী ও তাঁর পরিবারের লোকজনদের কয়েকজন ডাক্তারের সাহায্যে নিয়ে হাসপাতালের বাইরে নির্দিষ্ট ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ নেওয়ার কথা বলা হয় বলে অভিযোগ। মোটা অঙ্কের কমিশনের টাকার ভিত্তিতে এই ধরনের কাজ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছিল।
হাসপাতালের আউটডোরে চিকিৎসকদের ঘরে তাঁর চেয়ারে দালাল চক্রের পান্ডা দেবাশিস দাশগুপ্তকে বসে থাকতে দেখা যায় । সেই ছবি ধরা পড়ে TV9 বাংলার গোপন ক্যামেরায়। সরাসরি সেই ব্যক্তিকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন ডাক্তার দেখাতে এসেছেন।
তারপর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁকে চিনতে অস্বীকার করেন। তারপরে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি চোরের মত পালিয়ে যান। একটি সরকারি হাসপাতালে দিনের পর দিন এভাবেই চলছে দালালচক্রের রমরমা। অভিযুক্ত দেবাশিস দাসগুপ্ত নিজেই দোকানে বসে স্বীকার করছেন, এই হাসপাতালের অনেক চিকিৎসকরা তাঁর চেম্বারে বসেন। ফলাও করে সেই চিকিৎসকদের নামে বোর্ডও লাগানো রয়েছে তাঁর ওষুধের দোকানে। হাসপাতালের সামনেই চলছে এই ব্যবসা।
গোটা ঘটনা শোনার হতবাক হাসপাতালের সুপার। হাসপাতালে সুপার শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কোনও সরকারি হাসপাতালের দফতরে ঢুকে চিকিৎসকদের চেয়ারে বসতে পারেন না বহিরাগত কোনও ব্যাক্তি।” গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করে উপযুক্ত ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছেন হাসপাতাল সুপার। গোটা ঘটনায় চিকিৎসকরা অবশ্য কোনও মন্তব্যই করতে চাননি।
হাসপাতালের এই দালাল চক্রের ঘটনায় সরব হয়েছে রোগীর আত্মীয় পরিজনরাও। এক জন বলেন, “এই অভিযোগ নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরেই হাসপাতালে এমন ঘটনা ঘটে চলেছে। আমাদের সেখান থেকেই ওষুধ কেনার জন্য বাধ্য করা হয়।”
বিরোধী দলগুলিও এই নিয়ে সরব। বিজেপি নেতা জয় সাহা বলেন, “এ আর নতুন কী! সারা বাংলা জুড়েই এই ধরনের অনাচার চলছে। মাথার ওপর কারোর হাত না থাকলে কি আর এই কাজ সম্ভব?” তৃণমূল নেতৃত্বের অবশ্য বক্তব্য, এই নিয়ে তাঁরা কোনও মন্তব্য করবেন না, কারণ এটি হাসপাতালের ব্যাপার।