ব্যারাকপুর: নতুনরা সবাই ভাল, পুরনোরাই খারাপ! পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁর উত্তরসূরীর গলায় যে বার্তা শোনা গিয়েছিল, জ্যোতিপ্রিয় গ্রেফতার হওয়ার পর তারই পুনরাবৃত্তি! সম্প্রতি দুর্নীতি ইস্যুতে তৃণমূল নেতাদের একাংশ যা বলছে, তাতে ইঙ্গিত অনেকটা এরকমই। শিক্ষা, খাদ্য, পুরসভা- সব ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে বর্তমানে তৃণমূল সরকার কার্যত কোণঠাসা। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পর যখন আবারও একজন মন্ত্রী কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে গ্রেফতার হয়েছেন, তখন মন্ত্রিসভার সদস্যদের মুখে এক অন্য বার্তা। তাঁদের দাবি, ২০২১ সালের মন্ত্রিসভা নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই, যা অভিযোগ তা ২০২১-এর আগের। একই সুর সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক ও খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের গলায়। রাজনৈতিক মহল প্রশ্ন তুলছে, খোদ মন্ত্রীরাই কি শাসক দলের অন্দরে উস্কে দিচ্ছেন আদি-নব্য বিতর্ক? নাকি গা থেকে দুর্নীতির বালু ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন মন্ত্রীরা?
বালুর হাতে থাকা সেই দফতরই এখন রথীনের হাতে। দুর্নীতি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “২০২১-এর পরে যদি এমন কোনও তথ্য কারও কাছে থেকে থাকে, তাহলে আমি বলতে পারব। আগের ব্যাপারটা বলা মুস্কিল।” দায়িত্ব হাতে পাওয়ার পর সম্পূর্ণ স্ক্রুটিনি করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বিষয়টা আরও স্পষ্ট করে দিলেন বালুর জেলার নেতা পার্থ ভৌমিক। দীর্ঘদিন দলের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও ২০২২ সালে মন্ত্রিসভার রদবদলের সময় প্রথম মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন পার্থ ভৌমিক। তাঁকে প্রশ্ন করা হলে, তাঁর স্পষ্ট জবাব, ‘২০২১-এর পর গত আড়াই বছরে কেউ কোনও অভিযোগ দেখাতে পারেনি।’ এই প্রসঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ‘নতুন তৃণমূলে’র কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন দুর্নীতি নিয়ে ‘জিরো টলারেন্স’-এর কথাও।
দলের অন্দরে আদি-নব্য দ্বন্দ্ব নিয়ে কানাঘুষো শোনা যায় প্রায়ই। সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে তরুণ নেতাদের মত পার্থক্যের কথাও বলেন কেউ কেউ। তবে মন্ত্রীদের মুখে এই ধরনের বার্তা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় আর এক মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কথাও। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী যখন গ্রেফতার হলেন, তখন পরোক্ষে পূর্বসূরীর দায় এড়িয়ে গিয়েছিলেন বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীও। তাঁর আমলে যে কোনও দুর্নীতি হয়নি, সে কথা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।