বারাসত: আজ বারাসতে প্রচারে ঝড় তুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিজেপি মহিলা মোর্চার আয়োজনে বারাসতে শক্তি সম্মান সমাবেশে যোগ নমোর। সন্দেশখালিকাণ্ডের জেরে তোলপাড় দেশ। সেই আবহেই উত্তর ২৪ পরগনায় মোদী। টার্গেট মহিলা ভোট। মোদী সভায় উপস্থিত সন্দেশখালির নির্যাতিতারাও। সন্দেশখালিকাণ্ড নিয়ে মোদীর আক্রমণের ঝাঁজ আরও কতটা বাড়ে, সেটাই এদিনের সভার ফোকাস।
আমরা সস্তায় সিল্ডার দিচ্ছি। কিন্তু উজ্বালা কানেকশনের জন্য ১৪ লাখেরও বেশি অ্যাপ্লিকেশন পেন্ডিং পড়ে রয়েছে বাংলাতেই। যেখানে যেখানে জোট সরকার আছে, এই ধরনের সমস্যা হচ্ছে। বাংলায় পিএম আবাস যোজনায় ২৪ লক্ষ মহিলার নামে রয়েছে। মহিলাদের সুরক্ষা মোদীর গ্যারান্টি। আমাদের রাষ্ট্রপতি আদিবাসী সমাজে জন্ম নিয়েছেন। মোদী মুসলিম মহিলাদের তিন তালাক থেকে মুক্তি দিয়েছে। ইন্ডি-জোটের লোক তখনও কী করেছিল, মনে আছে? বাংলায় তৃণমূল নামের যে গ্রহণ লেগে রয়েছে, তাতে অগ্রগতি আটকে যাবে।
মুদ্রা যোজনায় নিজের ব্যবসা শুরু করার বিষয়েও মেয়েরাই এগিয়ে। ১.৫ লক্ষ কেবল বাংলার মহিলাই উপকৃত। PM কিষাণ সম্মানেও ৩ কোটি মহিলা কৃষকও প্রথমবার টাকা পেয়েছেন। আমরা পিএম বিশ্বকর্মা যোজনা এনেছি। ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করা হচ্ছে তাতে। মোদী গ্রামের মহিলাদের জন্য নমো ড্রোন দিদি যোজনা শুরু করা হয়েছে। তাতে ড্রোন, পাইলটের ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। তাতে মহিলাদের ড্রোন দেওয়া হবে, তাতে চাষের কাজে ব্যবহার করা হবে।
জনধন যোজনায় কয়েক কোটি মহিলা অ্যাকাউন্ট খুলেছে। তার মধ্যে কেবল তিন কোটি মহিলা বাংলারই। স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে মহিলার সংখ্যা ১০ কোটির বেশি পেরিয়ে গিয়েছে। বাংলার স্বনির্ভর গোষ্ঠীকেও ৯০ হাজার কোটি টাকার সাহায্য করা হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে, শিল্পে, কুটিরশিল্পে মহিলারা অগ্রণী। আমাদের প্রয়াস গ্রামের থাকা আপনাদের মতো মহিলাকে লাখপতি দিদি বানানো। গ্রামে গ্রামে এত লাখপতি দিদি যখন থাকবে, তাহলে গ্রামের ছবিটাই বদলে যাবে। ১ কোটি মহিলাকে লাখপতি দিদি বানাতে বিজেপি সফল। বাংলাতেও ১৬ লক্ষের বেশি মহিলা লাখপতি দিদি হয়ে গিয়েছেন।
মা-বোনেদের সঙ্গে অত্যাচার করে তৃণমূল ঘোর পাপ করেছে। সন্দেশখালিতে যা যা হয়েছে, তাতে যে কারোর মাথা লজ্জায় ডুবে যাবে। কিন্তু এখানকার তৃণমূলের সরকারের আপনার দুঃখে কিছু যায় আসে না। বাংলার মহিলাদের দোষীদের বাঁচাতে পুরো শক্তি লাগিয়েছে। কিন্তু হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খেয়েছে রাজ্য। গরিব, দলিত আদিবাসী মহিলাদের সঙ্গে তৃণমূলের নেতারা জায়গায় অত্যাচার করছে, কিন্তু TMC সরকারকে আপনার অত্যাচারী নেতার ওপর ভরসা রয়েছে, বাংলার মা-বোনেদের ওপর ভরসা নেই। এই কারণেই বাংলার মেয়েরা আক্রোশে রয়েছে। এই আক্রোশ সন্দেশখালি পর্যন্তই সীমিত নেই, সম্পূর্ণ বাংলাতেই সন্দেশখালির ঝড় উঠবে। আমি দেখছি তৃণমূলের মাফিয়ারাজ ধ্বংস করতে বাংলার নারীশক্তি জেগে উঠবে। সন্দেশখালির মহিলারাই দেখিয়েছে, তাঁদের আওয়াজ শুনবে কেবল বিজেপি। তোলাবাজদের হয়ে কাজ করা তৃণমূল সরকার মেয়েদের কথা শুনবে না। যেখানে কেন্দ্র সরকার ধর্ষণের মতো অভিযোগের জন্য ফাঁসির সাজার ব্যবস্থা করেছে। মহিলারা যাতে অভিযোগ জানাতে পারে, তাই মহিলা হেল্পলাইন বানিয়েছে। কিন্তু এখানে এই সুবিধা লাগু হতে দিচ্ছে না।
গোটা দেশবাসী এখন মোদীর পরিবার বলছে। কিছু মানুষের মনে হয়, কোনও রাজনৈতিক নেতা আমাকে গালি দিয়েছে, তাই আপনাদের সবাইকে নিজের পরিবার বলছি। আসলে আজ সত্যিটা বলছি। আমি অনেক ছোটো বয়সে ঘর থেকে একটা ঝোলা নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলাম। পরিবার ছেড়ে দেশের কোণায় কোণায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। কিছু খোঁজার চেষ্টা করছিলাম। আমার পকেটে কখনও এক পয়সাও ছিল না। কিন্তু আপনার জেনে গর্ব হবে, আমার পকেটে পয়সা ছিল না, না কোনও মাথার ওপর ছাদ ছিল। শুধু আমার কাঁধে ঝোলা ছিল। কোনও না কোনও মা-বাবা, কোনও বোন, আমাকে প্রশ্নটা করেই ফেলত, ‘বাবা তুমি কি কিছু খেয়েছো?’ আমি আজ বলছি, সালের পর সাল আমি পরিবার ছেড়ে ছিলাম। আমার পকেটে পয়সাও ছিল না। কিন্তু আমি এক দিনই খালি পেটে থাকি নি। তাই আমি বলি, এটাই আমার পরিবার। ১৪৪ কোটে দেশবাসী আমার পরিবার।
গোটা দেশ বলছে, বাংলা বলছে, প্রত্যেক মা বোন বলছে, ‘এই বার NDA সরকার।’ কেন্দ্র সরকারে NDA সরকারের জয়ের নিশ্চয়তা দেখে ইন্ডিয়া জোটের সকলেই আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন। তাই মোদীকে গালি দিতে শুরু করেছে। আজকাল আমার পরিবারের ব্যাপারেও কথা বলছে। ওরা বলছে, মোদীর নিজের পরিবারই নেই। তাই আমি পরিবারবাদের বিরুদ্ধে কথা বলছে। ওরা জানতে চায়, আমার পরিবার কোথায়? পরিবারবাদের ওই মানুষগুলো আজ এখানে এসে দেখে যাক। এটাই তো আমার পরিবার।
আপনারা পরম্পরা ভেঙেছে। পুরুষের ম্যারাথন তো শুনেছেন, এবার গ্রামে গ্রামে মহিলারা নারীশক্তি বন্দনার জন্য দৌড়েছেন। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়েছেন। দেশের পাবলিক ট্রান্সপোর্টকে আধুনিক বানানো হয়েছে। আমি যখন ছোটবেলায় কলকাতায় এসেছিলাম, তখন আকর্ষণ ছিল, মেট্রো দেখব। এখন কলকাতা মেট্রো এটার সাক্ষী বিজেপি সরকার কতটা দ্রুত গতিতে বিকাশ করছে। ২০১৪ সালের আগে গত ৪০ বছরে কলকাতা মেট্রোর কেবল ২৮ কিলোমিটার রুট হয়েছিল। কিন্তু বিজেপির আমলে এই ১০ বছরে আরও ৩১ কিলোমিটার রুট বেড়ে গিয়েছে মেট্রোর।
‘জয় মা কালী’, ‘জয় মা দুর্গা’ বলে ভাষণ শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলার মা-বোনেরা ও ভাই বন্ধুকে প্রণাম। আজকের এই সভার ভিড়ই প্রমাণ করছে, বিজেপি কীভাবে নারীশক্তিকে বিকশিত ভারতের শক্তি বানাচ্ছে। দেশের মহিলারা প্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদের এই সভার সঙ্গে যুক্ত হতে পারছেন।
স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাঁথার স্টিচে তৈরি করা মা দূর্গার ছবিও মোদীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। ফাল্গুনী পাত্র মোদীর হাতে তুলে দেন বাবা লোকনাথের মূর্তি।
মোদী সভামঞ্চে উঠতেই মহিলাদের ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে এলাকা। মোদীকে মা কালীর মূর্তি দিয়ে সম্মান জানানো হয়। সম্মান জানান রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
বেলা সওয়া বারোটা নাগাদ বারাসতের সভায় উপস্থিত হন নরেন্দ্র মোদী। মোদীর সভায় উপস্থিত রয়েছেন সন্দেশখালির মহিলারা।