WB Panchayat Polls 2023: ৬০ নয়, মেরেকেটে ৩৫! তাও কেউ শৌচকর্মে ব্যস্ত, কেউ জেরক্সে, নিরাপত্তা নিয়েও বসিরহাটে মনোনয়নে ‘ব্যর্থ’ বিজেপি প্রার্থীরা
WB Panchayat Polls 2023: মনোনয়ন জমা দিতে না পারা প্রার্থীদের বক্তব্য, তাঁরা কেউ মনোনয়ন সংক্রান্ত নথি জেরক্স করতে, কেউ আবার ফটো তুলতে, কেউ শৌচকর্মের জন্য বাইরে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা চারটের মধ্যে ফিরতে পারেননি। যার ফলে তাঁরা মহকুমা শাসকের দফতরে আর ঢুকতে পারেননি।
বসিরহাট: মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়ে নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বসিরহাটের বিজেপির ৬০ প্রার্থী। বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট তাঁদের পুলিশ নিয়ে মনোনয়ন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। তবুও তাঁরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি। মনোনয়নের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও বিচারপতি অমৃতা সিনহা পুলিশি নিরাপত্তায় বিজেপি প্রার্থীদের মনোনয়নের জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। তবুও ৬০ জন প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারলেন না, মনোনয়ন জমা দিলেন কেবল ৩৫ জনই। শাসক নেতৃত্বের বক্তব্য, এতে আরও একবার বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতার ছবি প্রকাশ পেল।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার পর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একাধিক অশান্তির খবর প্রকাশ্যে এসেছে। মনোনয়নপর্ব ঘিরে রাজ্যে ইতিমধ্যে ৫টি খুনের অভিযোগও সামনে এসেছে। মনোনয়নে বাধা পাওয়ারও অভিযোগ উঠেছে একাধিক। সন্দেশখালি-১ এবং ২, মিনাখা, ন্যাজাট এবং হাড়োয়া, বসিরহাটের চারটি ব্লকের ৬০ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিতে পারছেন না বলে অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। শুক্রবার সেই মামলার রায় দেন হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা। সেই রায়ে উল্লেখ ছিল, চারটি ব্লকের যে সমস্ত বিজেপি প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি, তাঁরা ১৬ জুন শুক্রবার বিকাল ৪টের মধ্যে বসিরহাট মহকুমা শাসকের দফতরে গিয়ে মনোনয়ন জমা দিতে পারবেন। বিচারপতি বলেন, “বসিরহাটের মহকুমা শাসকের দফতরের বিপরীতে বিজেপি দলীয় কার্যালয়ে প্রার্থীরা থাকবেন। তাঁরা রাস্তা টপকে এপারে আসবেন। পুলিশ নিরাপত্তা দিয়ে প্রার্থীদের মহকুমাশাসকের দফতরে ঢোকাবেন।”
এই রায় পাওয়ার পরে যথেষ্টই স্বস্তিতে ছিল বিজেপি। শুক্রবার আদালতের রায়ের পরেই একে একে বিজেপির প্রার্থীরা বসিরহাট মহকুমা শাসকের দফতরে এসে জড়ো হন। তারপর শুরু হয় মনোনয়ন প্রক্রিয়া। হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল শুক্রবার ৬০ জন বিজেপি প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিতে পারবেন। অথচ বিজেপি ওই চারটি ব্লক মিলে মোট ৪১ জন প্রার্থীকে জোগাড় করতে সক্ষম হয়। সেই ৪১ জন প্রার্থী মহকুমা শাসকের দফতরে গিয়ে ডিসিআরও কাটেন। তাঁদের মধ্যে ৩১ জন মনোনয়ন জমা দেন গ্রাম পঞ্চায়েতে ও বাকি চারজন জমা দেন পঞ্চায়েত সমিতিতে। অর্থাৎ মোট ৩৫ জন বিজেপি প্রার্থী মনোনয়ন দেন।
হাইকোর্টের যেহেতু নির্দেশ ছিল, চারটের পরে কোনওরকম মনোনয়ন গ্রহণ করা হবে না। সেই নির্দেশ মতো, শুক্রবার বিকাল চারটের পর বন্ধ করে দেওয়া হয় বসিরহাট মহকুমা শাসকের দফতরের মূল গেট। তা জানতে পেরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিজেপি নেতারা। তাঁরা বলেন, “পক্ষপাতিত্ব করা হচ্ছে। বেশ কয়েকজন বিজেপি প্রার্থী মহকুমা শাসকের দফতরে ঢুকতে পারেননি।”
মনোনয়ন জমা দিতে না পারা প্রার্থীদের বক্তব্য, তাঁরা কেউ মনোনয়ন সংক্রান্ত নথি জেরক্স করতে, কেউ আবার ফটো তুলতে, কেউ শৌচকর্মের জন্য বাইরে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা চারটের মধ্যে ফিরতে পারেননি। যার ফলে তাঁরা মহকুমা শাসকের দফতরে আর ঢুকতে পারেননি।
এবিষয়ে বিজেপির বসিরহাট সংগঠনিক জেলার সভাপতি তাপস ঘোষ বলেন, “আমরা কম সময়ের নোটিসে এই মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু করেছিলাম। সন্দেশখালি, হাড়োয়া বা মিনাখাঁ থেকে বসিরহাটে আসতেই প্রচুর সময় লেগে যায়। সেই সময়ের সময়ের মধ্যে আমাদের অনেক প্রার্থী এসে পৌঁছাতে পারেননি। পাশাপাশি যাঁরা পৌঁছেছিল তাঁদের নথি জেরক্স-সহ অন্যান্য কাজ করতে একটু বাইরে গিয়েছিলেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় গেট। যার ফলে তাঁরাও মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি।”
অপরদিকে বিজেপির এই মনোনয়ন জমা দিতে না পারাকে কটাক্ষ করেন তৃণমূলের বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার আইএনটিটিইউসির সভাপতি কৌশিক দত্ত। তিনি বলেন, “বিজেপির কোনও সংগঠন নেই, জনসমর্থন নেই। নিজেরাই প্রার্থী খুঁজতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। মনোনয়ন জমা দেওয়ার একটি অতিরিক্ত তারিখ হাইকোর্টের নির্দেশে পাওয়ার পরেও তাঁরা তাঁদের কাঙ্খিত টার্গেটে সফল হতে পারেননি। আসলে বিজেপি প্রার্থীই জোগাড় করতে পারেনি। তাঁদেরই সাংগঠনিক ত্রুটি রয়েছে। সেই জন্য তারা শাসক তৃণমূলকে দোষারোপ করার চেষ্টা করছে।”