Thakurnagar: ‘নিয়মিত গাঁজার আড্ডা বসে’, মমতাবালার কটাক্ষ ; সিবিআই তদন্ত চাইলেন শান্তনু

Aritra Ghosh | Edited By: সায়নী জোয়ারদার

Jun 12, 2023 | 7:25 PM

North 24 Parganas: রবিবার তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় গিয়েছিলেন ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়িতে। সেখানে মন্দিরে পুজো দিতে গেলে বাধার মুখে পড়েন সাংসদ। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় সেখানে।

Thakurnagar: ‘নিয়মিত গাঁজার আড্ডা বসে, মমতাবালার কটাক্ষ ; সিবিআই তদন্ত চাইলেন শান্তনু
শান্তনু ঠাকুর ও মমতাবালা ঠাকুর।

Follow Us

উত্তর ২৪ পরগনা: ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়িতে গেলেও মূল মন্দিরে ঢুকতে পারেননি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। রবিবারের এই ঘটনাকে সামনে রেখে এই মুহূর্তে তপ্ত রাজ্য রাজনীতির পারদ। অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি মমতাবালা ঠাকুরের অভিযোগ, বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের অঙ্গুলিহেলনেই এই ঘটনা ঘটেছে। পাল্টা শান্তনু ঠাকুরের দাবি, অভিষেক ৫-১০ হাজার পুলিশ নিয়ে মন্দিরে ঢুকতে চেয়েছিলেন। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য, মন্দিরের পূজারিকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বার করে দিয়ে মন্দিরের দখল নিতে চাওয়া হয় রবিবার। যা অপ্রত্যাশিত, অন্যায়। তিনি চান, রবিবারের ঘটনার সিবিআই তদন্ত হোক। তাহলেই মূল ঘটনা সামনে আসবে। পাল্টা শান্তনুকে নিশানা করে মমতাবালা বিস্ফোরক মন্তব্য করে বলেন, “গাঁজা খাওয়া হয়েছে ঠাকুরবাড়ি চত্বরে।”

রবিবারের ঘটনা প্রসঙ্গে মমতাবালা ঠাকুর জানান, নবজোয়ার কর্মসূচিতে গিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন মন্দিরেই গিয়েছেন। ঠাকুরবাড়িও তার অন্যথা ছিল না। কিন্তু শান্তনু ঠাকুর এই ঘটনাকে রাজনীতির রং দিয়ে এমন নজিরবিহীন কাণ্ড ঘটিয়েছেন। মমতাবালার কথায়, “উনি ঠাকুরবাড়িতে এসে পুজো করে বেরিয়ে যাবেন সেটাই কথা ছিল। রাজনীতির কিছুই ছিল না। অথচ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর যে আচরণ করলেন, এতটা নোংরামি আমরা ভাবতেই পারি না। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা নিয়ে মন্দিরের ভিতরে ঢুকে ঠাকুরের মালা ছিড়ে যা করলেন। ভক্তরা সেখানে গিয়েছিলেন, দরজা আটকে শান্তনু ঠাকুরের সামনে দাঁড়িয়ে মেরেছে।”

যদিও শান্তনু ঠাকুরের পাল্টা বক্তব্য, অশান্তির হোতা রাজ্যের তিন মন্ত্রী। শান্তনু ঠাকুরের কথায়, “ঘটনার সমস্ত ভিডিয়ো ফুটেজ দেখাব। কালকের ঘটনার সিবিআই তদন্ত হোক। তাহলে মূল বিষয়টা সামনে চলে আসবে। সিসিটিভি ক্যামেরা আছে ওখানে। কারা পুরোহিতদের গায়ে হাত দিয়েছে সামনে আসবে। আমাকে সে কারণে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে ভক্তদের রক্ষা করতে হয়েছে। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, ব্রাত্য বসু, সুজিত বসুরা যখন ঢুকেছেন, তখনই গুন্ডাবাহিনী নিয়ে এসে মন্দিরের পুরোহিত ও ভক্তদের উপর আঘাত করেছে। সমস্ত ফুটেজ আছে। এখন পুলিশ, বিএমওএইচ পিঠ বাঁচাতে অনেক কিছুই করবে।”

একইসঙ্গে শান্তনু ঠাকুরের অভিযোগ গাইঘাটা থানার পুলিশ আধিকারিক তাঁকে লোক দিয়ে এনকাউন্টার করানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। শান্তনু বলেন, “পুলিশ পিঠ বাঁচাতে যা খুশি করেছে। গাইঘাটা থানার বলাই ঘোষ বলেছেন, শান্তনু ঠাকুরকে লোক দিয়ে এনকাউন্টার করিয়ে দেবেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মদত ছাড়া এটা ঘটে না। আর পুলিশ এখন বাঁচতে আমাদের বিরুদ্ধে কেস দিয়েছে। আমরাও এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যাব। একজন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর বাড়িতে এভাবে পুলিশ দিয়ে হেনস্থা করা হচ্ছে।

তবে মমতাবালা ঠাকুরের দাবি, রবিবার ঠাকুরবাড়িতে যা ঘটেছে, তা তাঁদের কৌলিন্যে আঘাত করেছে। মমতাবালার কথায়, যে হরিগুরুচাঁদ জাতপাত ভেঙে দিয়ে মানবতা ধর্ম সৃষ্টি করেছেন, সেখানে দাঁড়িয়ে এমন ঘটনা ঘটাল। এটা কারও পৈত্রিক ভিটে নয়। মন্দিরে সকলের অধিকার। এটা দেবোত্তর করে গিয়েছেন আমার শাশুড়ি। অথচ রবিবার সব ভাং গাঁজা খেয়ে যা তা করল। আমি মনে করি এরা ঠাকুর বংশের কলঙ্ক। শান্তনু ঠাকুর, সুব্রত ঠাকুর, মঞ্জুল ঠাকুর কলঙ্ক ছাড়া আর কী। কুলাঙ্গার না হলে এসব করতে পারে।” একইসঙ্গে মমতাবালার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ, “পুকুরের ধারে গাঁজার আড্ডা বসে এখানে নিয়মিত। ঘর করে গাঁজার আড্ডা বসিয়েছে। আমার শ্বশুর, শাশুড়ি, স্বামী থাকতে এমনকী আমি যখন সাংসদ ছিলাম এগুলো কখনও ঠাকুরবাড়িতে হয়নি। এখন ওখানে প্রতিদিন গাঁজা খাওয়া হয়। কোন সভ্য জগতে এসব হয়? ”

যদিও শান্তনু ঠাকুর মমতাবালার প্রসঙ্গ উঠতেই বলেন, “হু ইজ মমতাবালা? কে উনি? কোথায় ছিলেন? ২০১৫ সালের আগে মমতাবালা ঠাকুর কোথায় ছিলেন? ঠাকুরবাড়ির মতুয়া সমাজ কবে চিনেছে তাঁকে? উনি ঠাকুরবাড়ির ইতিহাস নিয়ে বলছেন, ২০১৫ সালের আগে টানা ৫ দিন ঠাকুরবাড়িতেই তো থাকেননি তিনি। উনি প্রমাণ দিলে আমি পদ ছেড়ে দেব, মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেবো।” ঠাকুরবাড়িতে রবিবারের ঘটনার আঁচ শুধু যে রাজ্য রাজনীতিতেই নয়, ঠাকুর পরিবারের অন্দরেও তাপ বাড়াচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য।

এ প্রসঙ্গে সোমবার তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “অভিষেক ঠাকুরবাড়িতে পুজো দিতে যাচ্ছিলেন। রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না। মমতার সঙ্গে ঠাকুরবাড়ির নাড়ির যোগ। কিন্তু গতকাল মন্দির বন্ধ রেখে জুতো পরা বাহিনী নিয়ে মন্দির অপবিত্র করেছে। বিজেপির নেতারা যখন পুজো দেন, কেউ কোথাও বাধা দেয় না। অভিষেকের পুজো দেওয়ার অধিকার কেড়েছেন শান্তনু। নবজোয়ারকে ভয় পেয়েছেন।”

Next Article