একসময় বলা হত ‘বাংলার অক্সফোর্ড’, সেই ভাটপাড়া এখন যেন ত্রাসের রাজত্ব! জেল থেকে চলছে নিয়ন্ত্রণ?

Nov 13, 2024 | 11:11 PM

Bhatpara: রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বর্তমান তৃণমূল সাংসদ বোঝাতে চাইছেন বিহারের কায়দায় জেলে বসে নিয়ন্ত্রণ করছে গ্যাংস্টার। তাহলে বিহারের মতো বাংলাতেও কি জেল থেকে সব নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে?

একসময় বলা হত বাংলার অক্সফোর্ড, সেই ভাটপাড়া এখন যেন ত্রাসের রাজত্ব! জেল থেকে চলছে নিয়ন্ত্রণ?

Follow Us

ভাটপাড়া: বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসে নবদ্বীপের পর যে জনপদের নাম আসে তা হল ভাটপাড়া। ভাটপাড়ার নাম হয়েছিল ‘নব-নবদ্বীপ’। বলা হত বাংলার অক্সফোর্ডও। একদা পড়াশোনার পীঠস্থান ছিল ভাটপাড়া। আর আজ সেখানে ত্রাসের চাষ! বোমা-গুলি-সংঘর্ষ লেগেই থাকে। এবার থানার কাছেই চলল গুলি। খুন হয়ে গেলেন তৃণমূল নেতা।

একটা বিষয় লক্ষ্যণীয়। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০১২ সালে তৈরি হয় কমিশনারেট। কলকাতা লাগোয়া নাগেরবাজার থেকে উত্তর ২৪ পরগনার শেষ প্রান্ত হালিশহর, ২৪টি থানা এলাকা এই কমিশনারেটের অন্তর্ভুক্ত। ২০‍১৯-এর লোকসভা ভোট থেকে হিসেব করলে দেখা যাবে, বারবার ব্যারাকপুরের সিপি বদল হয়েছে তবে গণ্ডগোল কমেনি এতটুকু।

৫ বছরে ব্যারাকপুরে দায়িত্ব পেয়েছেন চার পুলিশ কমিশনার। তন্ময় রায়চৌধুরী, মনোজ বর্মা, অজয় ঠাকুর ও অলোক রাজোরিয়া। কিন্তু ছবিটা সেই একই। পুলিশকর্তা বদলালেও বদল হয় না ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি। এর মধ্যে অর্জুন সিং-এর ফুলবদল এবং টানা অশান্তির বিষয় তো আছেই। তাত্‍পর্যপূর্ণ বিষয় হল, খোদ শাসক দলই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে এই এলাকায়।

প্রশ্ন তুলেছেন খোদ পার্থ ভৌমিক। কিছুদিন আগে তিনি ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী। এখন ব্যারাকপুরের তৃণমূল সাংসদ তিনি। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে এই মুহূর্তে শাসক দলের প্রভাবশালী নেতাও বটে। তৃণমূল সাংসদ অভিযোগ করছেন, জেল থেকে বসে কোর্টে লোককে ডেকে পাঠাচ্ছে অভিযুক্ত। তাহলে পুলিশ কি দায় এড়াতে পারে? পার্থর অভিযোগের প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের আর এক তৃণমূল বিধায়কের গলায়। সঙ্গে কৌশলে জুড়ে দিয়েছেন প্রতিপক্ষ অর্জুন সিংকেও। তিনি

চার বছর আগে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের দাপুটে বিজেপি নেতা অর্জুন সিং ঘনিষ্ঠ মণীশ শুক্লা খুনে উঠে আসে বিহার যোগের কথা। বিহারের জেলে বসে কুখ্যাত দুষ্কৃতী সুবোধ সিং নাকি মণীশকে খুনের ছক কষে। বিজেপি নেতাকে খুনের সুপারি বাবদ ৫৫ লক্ষ টাকা নিয়েছিল গ্যাংস্টার সুবোধ সিং। পাঁচহাত ঘুরে তা পৌঁছেছিল সুবোধের বিহারের বাড়িতে। সেই টাকা নিয়েছিল তার মেয়ে। দীর্ঘ জেরায় টাকা নেওয়ার কথা সে স্বীকার করেছে বলে দাবি সিআইডি-র। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে একটার পর একটা ঘটনায় নাম জড়িয়েছে গ্যাংস্টার সুবোধের। ভাটপাড়ার গুলিতেও জেল থেকে অপারেশন! তেমন তত্ত্বই তো উঠে আসছে তৃণমূল নেতাদের গলায়। প্রশ্ন উঠেছে আদালতে নিরাপত্তার দায়িত্ব তো পুলিশের হাতে থাকে! তাহলে নজরদারি কোথায়! বিতর্ক বাড়ল পার্থ ভৌমিকের মন্তব্যে।

রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বর্তমান তৃণমূল সাংসদ বোঝাতে চাইছেন বিহারের কায়দায় জেলে বসে নিয়ন্ত্রণ করছে গ্যাংস্টার। তাহলে বিহারের মতো বাংলাতেও কি জেল থেকে সব নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে? ব্যারাকপুরে কেন গুন্ডারাজ থামানো যাচ্ছে না, তা নিয়ে অবশ্য রাজনীতি থেমে নেই। অর্জুন আঙুল তুলছেন তৃণমূলের দিকে, শাসক দল আবার বিজেপি নেতাকেই কাঠগড়ায় তুলছে।

তবে চাপানউতোর যাই থাক, তৃণমূল নেতার পরিবারও কার্যত ভরসা হারিয়েছে দলের প্রতি। ভাটপাড়ায় গুন্ডারাজ থামানো কঠিন, দলের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন নিহত নেতার ভাই।

Next Article