Asansol: বিল্ডিং উদ্বোধনের আগে কেবল একটা মাত্র ভুল! আর তাতেই আসানসোলের এই স্কুল এখন হানাবাড়ি

Asansol: তাই নতুন ভবন তৈরি করে নতুন আরেকটি বিদ্যালয় তৈরির প্রচেষ্টা শুরু হয়। সেই বিদ্যালয়টিকে সরকারি স্বীকৃতির চেষ্টা চালানো হয়। গ্রামের প্রবীণ মহিলা বিনোদিনী চট্টরাজ দু বিঘার বেশি জমি দান করেন নতুন স্কুল ভবনের জন্য।

Asansol: বিল্ডিং উদ্বোধনের আগে কেবল একটা মাত্র ভুল! আর তাতেই আসানসোলের এই স্কুল এখন হানাবাড়ি
আসানসোলের সেই স্কুলImage Credit source: TV9 Bangla
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 30, 2024 | 4:23 PM

আসানসোল: অপেক্ষার পর অপেক্ষা। আপার প্রাইমারি স্কুলের সরকারি অনুমোদন না মেলায় কবেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে আসানসোলের কুলটির মিঠানি বালিকা বিদ্যালয়। এখন পরিত্যক্ত হানাবাড়ির চেহারা নিয়েছে স্কুল বিল্ডিং। যে জমি ও যে স্কুল বিল্ডিং সরকারকে দিয়েছিল গ্রামের বাসিন্দারা, এখন তাঁরা চাইছেন সেখানে অবিলম্বে স্কুলের পঠন-পাঠন শুরু হোক নয়তো সেই জমি ফেরত দিক সরকার।

গ্রামের মানুষ চেয়েছিলেন, গ্রামের বালিকা বিদ্যালয়টি সরকারি স্বীকৃতি পাক। বিদ্যালয়টিকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ৩৪ বছর আগে স্বতঃস্ফূর্ত জমিদান করেছিলেন গ্রামের মানুষ। বিভিন্নভাবে আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তৎকালীন বিধায়ক সহ রাষ্ট্রয়ত্ত কোলিয়ারি ও কারখানাগুলি এবং সাধারণ মানুষ। কিন্তু বাম আমলে সেই স্কুল সরকারি স্বীকৃতি না পাওয়ায় বালিকা বিদ্যালয়টি বেসরকারি স্কুলে রূপান্তরিত হয়ে যায়। সেই স্কুলের পঠন পাঠনও বন্ধ হয়ে যায় ১৫ বছর আগে। স্বপ্নভঙ্গ হয়ে যায় গ্রামের মানুষের।

অব্যবহৃত স্কুল ভবন হানাবাড়ির রূপ নেয় গত কয়েক বছরে।  গ্রামবাসীদের এখন একটাই দাবি, বন্ধ পড়ে থাকা সেই স্কুলটির পরিকাঠামোকে কাজে লাগিয়ে নতুন করে আপারপ্রাইমারি স্কুল চালুর উদ্যোগ নিক জেলা শিক্ষা দফতর। তবে বছর চারেক আগে একসময়ের বালিকা বিদ্যালয় নতুনভাবে নতুন রূপে সরকারি স্বীকৃতি পাবে এরকম একটা সম্ভবনা তৈরি হয়েছিল ২০১৯ সালে। শুধু মিঠানি নয়, জেলায় ১৮টি নতুন আপারপ্রাইমারি স্কুল চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শিক্ষা দফতর। সেই তালিকায় নাম ছিল নাকি মিঠানির। এই খবরে খুশি হয়েছিলেন কুলটির মিঠানি গ্রামের বাসিন্দারা।

কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় স্কুলটির অনুমোদনআসে উর্দু মিডিয়াম হিসাবে। যদিও তৃণমূলের দাবি ওটা ছিল প্রিন্টিং মিসটেক। আপত্তি তোলেন জমিদাতারা। কারণ ওই গ্রামসহ আশেপাশে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজনের বসবাস নেই। ফলে উর্দু মিডিয়াম চালু হলে পড়ুয়ার অভাবে ওই স্কুলটি আবারও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই রাজ্য শিক্ষা দফতরকে পুনর্বিবেচনার জন্য চিঠি পাঠানো হয়। আটকে রয়েছে ফের অনুমোদন।

মিঠানি হাইস্কুলে একসময়ে ছাত্র ও ছাত্রী মিলে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণীতে পড়ানো হত। কিন্তু ততকালীন সময়ে ছাত্রীছাত্রীদের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। তুলনায় শিক্ষক শিক্ষিকার সংখ্যা পর্যাপ্ত ছিল না। ততকালীন স্কুল পরিচালন কমিটি পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রীদের আলাদা করে দেয়। ১৯৮৭ সালে গার্লস মর্নিং ইউনিট করে দেওয়া হয় পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত। মর্নিং গার্লসস্কুলের পঠন পাঠনে এগিয়ে আসেন স্থানীয় শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতীরা। এরপরেই নতুন বালিকা বিদ্যালয় তৈরির দাবি ওঠে। তখন এসএসসি ছিল না স্কুলপরিচালন কমিটির হাতেই ছিল সমস্ত ক্ষমতা।

তাই নতুন ভবন তৈরি করে নতুন আরেকটি বিদ্যালয় তৈরির প্রচেষ্টা শুরু হয়। সেই বিদ্যালয়টিকে সরকারি স্বীকৃতির চেষ্টা চালানো হয়। গ্রামের প্রবীণ মহিলা বিনোদিনী চট্টরাজ দু বিঘার বেশি জমি দান করেন নতুন স্কুল ভবনের জন্য। বিধায়ক ও সাংসদ নানা ফান্ড নিয়ে নতুন বিল্ডিং তৈরি হয়ে ৯৮ সালে পঠন পাঠন শুরু হয়। বিল্ডিং হওয়ার পর চেষ্টা চলতে থাকে স্কুলটিকে সরকারি অনুমোদন করানোর জন্য। কিন্তু ততদিনে স্কুলের শিক্ষক নিয়োগ থেকে স্কুলের সমস্ত কিছুর পরিচালন চলে যায় স্কুলসার্ভিস কমিশন তথা এসএসসির হাতে। ফলে জটিল নিয়মের মধ্যে স্কুলটি আর সরকারি স্বীকৃতি পায়না।

তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় নেতারা পরিত্যক্ত পড়ে থাকা ভবনটিকে কাজে লাগিয়ে নতুন সরকারি স্কুলের আবেদন নিবেদন করেন। স্থানীয় বাসিন্দা জেলা তৃণমূল এসসি এসটি সভাপতি মোহন ধীবর বলেন, “মন্ত্রী মলয় ঘটককের কাছে আবেদন করেছিলাম। মন্ত্রীর উদ্যোগী ভূমিকায় স্কুলটি সরকারি অনুমোদন পেয়ে যায়। কিন্তু ভুল করে উর্দু মিডিয়াম অনুমোদন আসে। আসলে ওটা ছিল প্রিন্টিং মিসটেক।” জমিদাতা বিনোদিনী চট্টরাজের ছেলে সুখেন্দু চট্টরাজ বলেন,  “স্কুল ভবনটি পরিত্যক্ত হয়ে নষ্ট হচ্ছে। জটিলতা কাটিয়ে এবার তাঁরা চান শীঘ্রই যেন স্কুলটি চালু হয়। নইলে জমি ফেরত দিয়ে দেওয়া হোক।”

জানাগেছে স্কুল ভবন সংস্কারের জন্য প্রথম ধাপে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা অনুমোদন করাও হয়। কিন্তু সব থমকে যায় মিডিয়াম গন্ডগোল নিয়ে। বর্তমান জেলা স্কুল পরিদর্শক সুনীতি সাপুই জানান, বিষয়টি জানা রয়েছে। তাঁর কথায়, “আমি সমস্ত কাগজপত্র পুনর্বিবেচনার জন্য রাজ্য শিক্ষা দফতর অর্থাৎ বিকাশ ভবনে পাঠিয়েছি। এখনও পর্যন্ত কোনও আপডেট মেলেনি।”