আসানসোল : কারখানায় দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক টানাপোড়েন জামুড়িয়ায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কথায়, দুর্ঘটনাগ্রস্ত শ্রমিকদের জন্য কারা বেশি দরদি? সেই নিয়ে প্রতিযোগিতায় নামতে দেখা গেল বিজেপি তৃণমূল সিপিএমকে। কারখানার মধ্যেই কখনও বাগবিতণ্ডা, কখনও সংঘাতে লাগতে দেখা গেল বিজেপি তৃণমূলকে। চলল শ্লোগান, পাল্টা শ্লোগান। ঘটনাটি ঘটেছে জামুড়িয়ার শিল্পতালুকে।
বৃহস্পতিবার রাতে জামুড়িয়া গগন ফেরোটেক কারখানায় জ্বলন্ত লোহা চলকে ঝলসে যান ৬ শ্রমিক। আবার কাকতালীয়ভাবে ওই রাতে কর্মরত অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় এক শ্রমিকের। খবর পেয়ে শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থলে যান বিজেপি বিধায়ক আগ্নিমিত্রা পাল। তারপরেপরেই কারখানায় ঢোকেন তৃণমূল কংগ্রেসের পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও আসানসোল পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র তথা আইএনটিটিইউসি জেলা সভাপতি অভিজিৎ ঘটক।
এই সময় মুখোমুখি তৃণমূল ও বিজেপি বিধায়কদের অনুগামীরা একে অপরকে কটাক্ষ করেন। শুধু তাই না, অভিযোগ অগ্নিমিত্রা পালকে কারখানায় ঢুকতে বাধা দেন জামুড়িয়া তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক হরেরাম সিংয়ের ছেলে যুব তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা প্রেমপাল সিং। তাঁর সঙ্গেও বচসায় জড়িয়ে পড়েন বিজেপি বিধায়ক। সেখানে কারখানার আধিকারিক নিরঞ্জন গৌড়শরিয়া অগ্নিমিত্রাকে নিয়ে কারখানায় ঢোকেন।
তৃণমূল বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বিজেপি নেত্রী অগ্রিমিত্রা পালকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “ঘোলা জলে মাছ ধরতে এসেছেন, কিছু লাভ হবে না। শ্রমিকরা তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে আছে। ওরা আমাদেরই কর্মী।”
কারখানার আধিকারিক নিরঞ্জন গৌরশারিয়া জানান, কারখানায় কেশর কেশরি বলে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে শারীরিক অসুস্থতাতেই। আসানসোল জেলা হাসপাতালে তাঁর ময়নাতদন্ত হচ্ছে। অন্যদিকে কারখানায় টব থেকে তরল লোহা উপচে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটে। তা শ্রমিকদের গায়ে এসে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটে। তার ফলেই বেশ কয়েকজন শ্রমিককে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি হয়। আহতদের পরে দুর্গাপুরের বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। কিশোরের ময়নাতদন্ত করিয়ে আসানসোল জেলা হাসপাতাল থেকে পরিবারের হাতে তুলে দেয় পুলিশ।
মৃত ও আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে রীতিমত ক্ষোভে ফেটে পড়েন পরিবারের সদস্যরা।
কারখানা কর্তৃপক্ষ পরিবারে সদস্যদের সঠিকভাবে কিছু জানায়নি বলে অভিযোগ। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ বলেন, মৃত ও আহতদের কারখানার নিয়ম অনুযায়ী যা যা করণীয় তা কারখানা কর্তৃপক্ষ নিশ্চয় করবে। এদিন অগ্নিমিত্রা পাল যখন কারখানায় ঢোকেন তখন কারখানার ভেতরে শ্রমিক সংগঠনের নেতা কর্মীরা স্লোগান তোলেন। অগ্নিমিত্রা পাল্টা স্লোগান তোলেন।
অন্যদিকে সিপিএম নেতা তাপস কবির নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল কারখানায় স্মারকলিপি জমা দিতে এলে তৃণমূলের সঙ্গে বচসায় জড়ায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে হয় পুলিশকে। বিজেপি তৃণমূল একযোগে অভিযোগ তোলেন এই কারখানায় ঘন ঘন দুর্ঘটনা ঘটে। শ্রমিক মারা যায়। শ্রমিকদের এখানে সুরক্ষার ব্যবস্থা নেই। তাদের জুতো টুপি দেওয়া হয় না। তৃণমূল জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, “দুর্ঘটনার সময় থেকে প্রতি মুহূর্তে আমাদের দলের লোকরাই ছিল। কোথায় ছিল বিজেপি সিপিএম? আসলে ওরা ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছে।”