আসানসোল: আসানসোলের জন্য প্রয়োজন মাস্টার প্ল্যানের। এই দাবি দীর্ঘদিনের। আসানসোলের বণিকসভা থেকে সাধারণ শহরবাসী বারবার দাবি তুলেছেন। আসানসোল শিল্পাঞ্চলে খনি ইস্পাত এমনকী রেলের মাধ্যমে রাজ্য আয় করছে। শিল্পাঞ্চল থেকে রাজ্যে পৌঁছয় লাভ। তবু দাবি থাকা সত্ত্বেও আসানসোলের জন্য প্রয়োজন মাস্টার প্ল্যান নেই। রাজ্য বাজেটের পর টুইট করে উসকে দিলেন আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র তথা বর্তমান বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তেওয়ারি। শুধু তাই না, তিনি কটাক্ষ করেন তৃণমূল নেতাদের সেই ক্ষমতা বা যোগ্যতা নেই যে বাজেটে আসানসোল মাস্টার প্ল্যান অন্তর্ভুক্ত করাতে পারে।
আসানসোল বাজারের ফুটপাত সহ শিল্পাঞ্চলের একাধিক বাজার এলাকা জবরদখল হয়ে গেছে। এই নিয়ে বহুবার সরব হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম বনিকসভা ফেডারেশন অফ সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফসবিকি)। বণিকসভার তরফে দাবি করা হয়, আসানসোল শহরের সামগ্রিক উন্নয়নে একটি মাস্টার প্ল্যান, বার্ণপুরের প্রস্তাবিত এয়ারপোর্ট দ্রুত চালু, বার্ণপুরের কালাঝড়িয়ার দামোদরে ব্রিজ তৈরি ও গাড়ুই এবং নুনিয়া নদীর আশপাশ দখল মুক্ত করে সংস্কার করতে হবে।
শুধু আসানসোল নয় পশ্চিম বর্ধমান জেলার বিভিন্ন বাজার এলাকা যেমন কুলটি, বরাকর, রূপনরায়ণপুর, জামুড়িয়া, রানিগঞ্জ, নিয়ামতপুর সহ বিভিন্ন এলাকার বাজারে বড়বড় দোকানের সামনে ফুটপাত দখল করে বসে রয়েছেন হকাররা। ব্যবসায়ীদের থেকে পুরনিগম ২ টাকা স্কোয়ার ফুট হিসেবে কমার্শিয়াল ট্যাক্স নিয়ে থাকে। অথচ হকারদের হাতে দখল হয়ে যাওয়া ফুটপাতে দখল মুক্ত করতে পুরপ্রশাসন কিছু করছে না। আসানসোল শহরের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য জিটি রোড ফ্লাইওভার সহ একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরির দাবি করা হয়েছে।
ফসবেকির সভাপতি শচীন রায় বলেন, “বেশ কয়েক বছর আগে আসানসোল বার্ণপুর সহ এই জেলার সঙ্গে পাশের জেলা বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বার্ণপুরের কালাঝড়িয়ায় দামোদরে একটি ব্রিজ তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শিলান্যাস হওয়ার পরেও সেই ব্রিজ হয়নি। আমাদের দাবি, ব্যবসায়ী সহ এইসব জেলার সাধারণ মানুষের কথা ভেবে এই ব্রিজ দ্রুত তৈরি করা হোক। প্রতি বছর বৃষ্টিতে
আশপাশের এলাকা জলমগ্ন হয়ে যায়। এর অন্যতম কারণ হল ওই এলাকায় থাকা দু’টি নদী গাড়ুই ও নুনিয়া সংস্কার না করা ও নদীর পাড় দখল হয়ে যাওয়া। এবারের বৃষ্টিতে আরো ভয়াবহ অবস্থা হয়েছিল। এরজন্য আলাদা করে আরও একটি মাস্টার প্ল্যান করা হোক। যাতে ভবিষ্যতে আর এইরকম পরিস্থিতি না হয়।”
প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তেওয়ারি বলেন আসানসোল শহরের উন্নয়নে মাস্টারপ্ল্যান তৈরির দাবি বহুদিন ধরেই রয়েছে। গত পৌরসভা নির্বাচনেও এটি একটি ইস্যু ছিল। তিনি বলেন, “আমি মেয়র থাকাকালীন আমরুত প্রকল্পের অধীনে মাস্টার প্ল্যানিংয়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। আসানসোল মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের
মাস্টার প্ল্যান তৈরি করার আগে, মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের ১০৬ টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের সাথে বৈঠক করা হয়েছিল। বৈঠক দশটি বরো স্তরে সংগঠিত হয়। সমস্ত বরোর সাথে যুক্ত কাউন্সিলররা এই বৈঠকে উপস্থিত থেকে পরামর্শ দিয়েছিলেন৷ যার ভিত্তিতে উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। এরপরে, এটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য নগর উন্নয়ন দফতরে পাঠানোর কথা ছিল। ততদিনে পুরনিগমের বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। জিতেন্দ্র তেওয়ারির অভিযোগ তারপর তিনি পুরবোর্ড থেকে বেরিয়ে আসেন। দল ছাড়েন। তিনটি বছর কেটে গেছে। কিন্তু মাস্টারপ্ল্যানের কাজ আর এগোয়নি।”
শুধু তাই না মঙ্গলবার আসানসোল পুরনিগমের এক বছর পূর্ণ হল। এখনও পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ বোর্ড গঠন হয়নি। পূর্ণ মেয়র পরিষদ পায়নি আসানসোল। ডেপুটি মেয়র এখনও শপথ গ্রহণ করেনি। বোরো চেয়ারম্যান এখনো নির্বাচিত হয়নি। আসানসোলের এই তৃণমূল কি করে আসানসোলের মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে পরিকল্পনা করবে ? কটাক্ষ করেন জিতেন্দ্র। যদিও পুর চেয়ারম্যান অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় বা তৃণমূল ব্লক সভাপতি তথা মেয়র পারিষদ গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আসানসোলের জন্য অনেক রকম পরিকল্পনা রয়েছে। রাজ্য বাজেটে আসানসোল বঞ্চিত হয়নি। ইসিএলের নতুন খনি হোক বা ইস্পাত শিল্পের সম্প্রসারণ কিংবা বার্নপুর এয়ারপোর্ট সবই মাস্টার প্ল্যানের অন্তর্ভুক্ত। যদিও জিতেন্দ্র তেওয়ারির অভিযোগ মাষ্টার প্ল্যান মানে সমস্ত দফতরকে একত্রিত করে সমস্ত সমস্যা গুলোকে একত্রিত করে একটি প্ল্যান তৈরি করা। যা কখনো হয়নি। আর এই সম্পর্কিত কোনও ধারণাই নেই বর্তমান পুর বোর্ডের।”