দুর্গাপুর: স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায় প্রায়ই নাকি অশান্তি লেগে যেত। এলাকার লোকজনের দাবি, ঝগড়াঝাটি কম হত না। অথচ তাঁরাই নিজেদের শেষ করলেন একসঙ্গে। শেষ ইচ্ছা হিসাবে দেওয়ালে লিখে গেলেন, ‘আমাদের একসঙ্গে জ্বালাবে’। সম্পর্কের বন্ধন বোধহয় এভাবেই আড়ালে আবডালে পোক্ত হয়। হঠাৎ ছিন্ন হলে বোঝা যায়, কতটা জোরাল ছিল তা। অন্ডাল থানার উখড়ার শ্যামসুন্দরপুর কোলিয়ারি ভুয়াপাড়া সংলগ্ন এলাকায় শুক্রবার সকালে হইচই পড়ে গিয়েছে।
নীলকণ্ঠ বাউরি (৪৭) পেশায় ছিলেন গাড়ির চালক। স্ত্রী লিলি বাউরি (৩৮) সংসার সন্তান সবটাই নিজে হাতে সামলাতেন। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে, ছেলে রোহিত বাউরি এখানে থাকে। তবে পাশেই রোহিতের মামারবাড়ি। বেশিরভাগ দিনই সেখানে রাতে গিয়ে থাকে সে। বৃহস্পতিবার রাতেও মামারবাড়িতেই ঘুমোতে যায় রোহিত।
শুক্রবার সকালে বাড়িতে এসে দেখে ঘরের দরজা বন্ধ। মা, বাবাকে চিৎকার করে ডাকলেও কোনও সাড়াশব্দ নেই। এরপরই পাড়া প্রতিবেশীদের ডেকে আনে সে। সকলে মিলে দরজা ভাঙতেই দেখে খাটে পড়ে মায়ের নিথর দেহ। সেই খাটের উপর দিয়েই ঝুলছেন বাবা। দু’জনের গলাতেই ফাঁস লাগানো। এরপরই ঘরের সবুজ দেওয়ালে চোখ যায় ছেলের। দেখে, সেখানে কালো রং দিয়ে লেখা, ‘আমাদের একসঙ্গে জ্বালাবে।’
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে অন্ডাল থানার পুলিশ। মৃতদেহ উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নীলকণ্ঠের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী লিলির নিত্যদিন ঝগড়াঝাটি হত। দু’জনের এই অশান্তি প্রায় প্রতিদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, স্ত্রী লিলিকে গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে মারার পরই নীলকন্ঠ গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
রোহিত বাউরি বলেন, “আমি সকালে ঘুম থেকে উঠে বাড়ি গিয়ে দেখি দরজা বন্ধ। প্রথমে ফোন করলাম। ধরল না। তারপর পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢুকে জানলা দিয়ে দেখি মা-বাবা ঝুলছে। ঝগড়া হয়েছিল কি না আমি বলতে পারব না। আমি তো ঘরে ছিলাম না।” ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে অন্ডাল থানার পুলিশ।