Uttarkashi Tunnel Collapse: মহাবীর খনির অন্ধকার গহ্বর থেকে সেদিন যেভাবে বেরিয়ে এসেছিলেন ৬৫ জন…

Chandra Shekhar Chatterjee | Edited By: Soumya Saha

Nov 24, 2023 | 6:53 PM

Mahabir Mine: সেদিন করে দেখিয়েছিল রানিগঞ্জের মহাবীর খনি। প্রায় তিন দশক আগে। উত্তরকাশীও কি পারবে? সেই আশাতেই প্রহর গুণছে কোটি কোটি দেশবাসী। মহাবীর খনি থেকে সেদিন কীভাবে বেরিয়ে এসেছিলেন ৬৫ জন শ্রমিক? রুদ্ধশ্বাস সেই অপারেশনের কথা শোনালেন জীবিত বেরিয়ে আসা শ্রমিক।

Uttarkashi Tunnel Collapse: মহাবীর খনির অন্ধকার গহ্বর থেকে সেদিন যেভাবে বেরিয়ে এসেছিলেন ৬৫ জন...
মিশন রানিগঞ্জ সিনেমার দৃশ্য
Image Credit source: Twitter

Follow Us

রানিগঞ্জ: উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে এখনও আটকে শ্রমিকরা। সুড়ঙ্গ থেকে তাঁদের জীবিত বের করে আনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে উদ্ধারকারী দল। শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা গেলেও, এখনও তাঁদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এদিকে উত্তরকাশীর এই ঘটনা ফিরিয়ে আনল তিন দশকেরও বেশি পুরনো মহাবীর খনির স্মৃতি। ১৯৮৯ সালের ১৩ নভেম্বরের কথা। ১২ তারিখ রাতের শিফটে খনিতে জল ঢুকে গিয়েছিল। ৩৪ বছর আগে মহাবীর খনিতে ধস নেমে আটকে পড়েছিলেন ৬৫ জন শ্রমিক। কোল ইন্ডিয়া, সিএমপিডিআইএল এবং বেসরকারি সংস্থার বিশেষ অপারেশনে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল তাঁদের।

এক রুদ্ধশ্বাস অপারেশন। খনির উপর থেকে ড্রিল করে ঢোকানো হয়েছিল বিশেষ এক ধরনের ক্যাপসুল। তারপর সেই ক্যাপসুলে করে একে একে খনি থেকে বের করে আনা হয়েছিল শ্রমিকদের। প্রতিটি মুহূর্তে ছিল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। খনির ওপর থেকে ড্রিল করে বিশেষ ক্যাপসুল ঢুকিয়ে এক এক করে শ্রমিকদের ওপরে উঠিয়ে আনা হয়। যা ছিল রুদ্ধশ্বাস ঘটনা। অত্যন্ত রোমাঞ্চকর এক অভিজ্ঞতা। ৩৪ বছর আগে যাঁরা মহাবীর খনি থেকে বেরিয়ে দ্বিতীয় জীবন পেয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে একজন জগদীশ প্রজাপতি। সেই সময়ে মরণ-বাঁচন লড়াইয়ের কথা আজও আবছা হয়নি তাঁর মন থেকে। আবছা হওয়ার কথাও নয়। সে এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা ছিল। খিদে-তৃষ্ণা সব ভুলে গিয়েছিলেন।

মাথায় ছিল একটাই চিন্তা। আদৌ কি এই অন্ধকার খনি থেকে জীবিত বেরোতে পারবেন তাঁরা? সেই চিন্তাই শুধু কুরে কুরে খাচ্ছিল অন্ধকার খনির মধ্যে। বাড়ির লোকেদের কথা বার বার মনে পড়ছিল। বড় মেয়ের বিয়ে ছিল সামনে। তিনি যদি জীবিত না বেরোতে পারেন, তাহলে মেয়ের বিয়ের কী হবে! এমন বিভিন্ন দুশ্চিন্তা ঘুরে ফিরে আসছিল তাঁর মনে। পাঁচ দিন অন্ধকার গহ্বরে আটকে থাকার পর, অবশেষে সূর্যের আলো দেখেছিলেন তাঁরা। জীবিতে বেরিয়ে এসেছিলেন মহাবীর খনি থেকে।

খনির ভিতরে আটকে থাকা মুহূর্তটা ঠিক কেমন ছিল? ভয়ঙ্কর সেই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন মহাবীর খনি বিপর্যয় থেকে জীবিত ফিরে আসা জগদীশ প্রজাপতি। খনির ভিতর জল ঢুকে গিয়েছিল। চারদিকে জল। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন। খনির মধ্যে একটি উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছিলেন জগদীশ-সহ মোট ৬৫ জন শ্রমিক। চারিদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার। পাশাপাশি বসে থাকা শ্রমিকরা, কেউ কাউকে দেখতে পাচ্ছিলেন না। প্রতি মুহূর্তে বুক ঢিপ ঢিপ করছিল। মৃত্যু ভয়ে। কিন্তু বেঁচে ফেরার আশা ছাড়েননি তাঁরা। অদম্য মনোবল। আর সঙ্গী ছিল খনির ভিতরের একটা টেলিফোন লাইন। ওটাই যেন ছিল তাঁদের জিয়নকাঠি। ওই টেলিফোনের মাধ্যমেই আটকে থাকা শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁরা খনির কোন অংশে আটকে আছেন, সেটা জানান ওই টেলিফোনের মাধ্যমেই। এরপর শুরু হয়ে অপেক্ষা। উদ্ধারের অপেক্ষা।

আর খনির বাইরে তখন যুদ্ধকালীন তৎপরতা। কোন জায়গা থেকে উদ্ধার করতে হবে শ্রমিকদের, সেটি ইসিএলের দক্ষ সার্ভেয়াররা নির্ভুলভাবে খুঁজে বের করেন। এরপর শুরু হয় গর্ত করার পর্ব। ১৩ নভেম্বর প্রথম গর্ত (বোর হোল) করা হয়। সেখান থেকে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলা হয়। তাঁদের খাবার ও পানীয় জল পাঠানো হয়। ধানবাদ থেকে ডেকে আনা হয় বিশেষ উদ্ধারকারী দল। কিন্তু খনির মধ্যে চারিদিকে জল। এমন অবস্থায় অভিযান চালানোর কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না ওই উদ্ধারকারী দলের। পিছু হটে তারা। এরই একপ্রকার ত্রাতার ভূমিকায় এগিয়ে আসে এক বেসরকারি মাইনিং সংস্থা। কোল ইন্ডিয়ার মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার যশবন্ত গিলের ভূমিকাও এখানে উল্লেখযোগ্য।

সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বিশেষ ক্যাপসুল পাঠানো হবে মাটির ভিতরে। সেটিতে করে উদ্ধার করা হবে শ্রমিকদের। সেই মতো ইসিএলের নিয়ামতপুর ওয়ার্কশপের শ্রমিকরা লোহার শিট দিয়ে শুরু করেন ক্যাপসুল তৈরির কাজ। ১৪ নভেম্বর রাত থেকে শুরু হয় ক্য়াপসুলের কাজ। ১৫ তারিখেই সেই ক্যাপসুল পৌঁছে যায় মহাবীর খনির বাইরে। কোল ইন্ডিয়ার ইঞ্জিনিয়ার যশবন্ত গিল নিজে নামেন ক্যাপসুলে করে। তখন গভীর রাত। একে একে ৬৫ জন শ্রমিককে জীবিত খনি গহ্বর থেকে বের করে আনে ওই ক্যাপসুল। উদ্ধার কাজ শেষ হতে হতে ১৬ তারিখ হয়ে যায়। মহাবীর খনির বাইরে তখন হাজার হাজার মানুষের ভিড়। চারিদিকে করতালি, হর্ষধ্বনি আর মানুষের চিৎকার।

সেদিন করে দেখিয়েছিল রানিগঞ্জের মহাবীর খনি। প্রায় তিন দশক আগে। উত্তরকাশীও কি পারবে? সেই আশাতেই প্রহর গুণছে কোটি কোটি দেশবাসী।

Next Article