আসানসোল: শিল্পের দেবতা বিশ্বকর্মা! কিন্তু রাজ্যের শিল্পাঞ্চলগুলিতেই আদর কমছে বিশ্বস্রষ্টার। একসময় যে শিল্প কারখানায় বিশ্বকর্মা পুজোর ধুমধাম ছিল, এখন তা জৌলুস হারিয়েছে। নতুন করে উল্লেখযোগ্য কারখানা হয়নি। বন্ধ হয়ে গেছে একের পর এক রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা। বন্ধ হয়ে গিয়েছে রূপনারায়ণপুর হিন্দুস্তান কেবলস কারখানা। বার্ন স্ট্যান্ডার্ড বার্নপুর ইউনিটও বন্ধ। বন্ধ একই কারখানার রানিগঞ্জের ইউনিট। ২০১১ সাল থেকে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে আসানসোলের বিখ্যাত ব্লু ফ্যাক্টরি। এই কারখানাগুলি সবই বন্ধ হয়েছে গত ১০ বছরে। যখন কারখানা চালু ছিল তখন ছিল অর্থনৈতিক প্রতিপত্তি। বিশ্বকর্মা পুজো মানে একটি কারখানায় একাধিক পুজো। হাজার হাজার লোকের খাওয়া দাওয়া। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দুর্গাপুজোর আগেই উৎসবের মেজাজ শুরু হত বিশ্বকর্মা পুজো ঘিরে। এখন সেই কারখানাগুলির কঙ্কালসার চেহারা। কোনও রকমে সম্পত্তি আগলে রেখেছেন কাজহারা শ্রমিকরা। বন্ধ কারখানায় কোথাও নমো নমো করে পুজো হচ্ছে। আবার কোথাও ধুপ প্রদীপও জ্বলেনি। কারখানায় পুজো হয়নি। বন্ধ কারখানায় কোনও মতে হচ্ছে বিশ্বকর্মার পুজো।
এ ছাড়াও আসানসোলের সেনরালের সাইকেল কারখানা বন্ধের পর কারখানার পরিকাঠামো বা স্ট্রাকচারও উধাও। এখন গড়ের মাঠ সেখানে। অথচ রাজ্যে সবুজ সাথী প্রকল্পে সাইকেল যখন বিতরণ হয় তখন সম্ভাবনা হয়ে তৈরি হয়েছিল এই কারখানাকে নতুন করে চালু করার। কিন্তু কোথায় কি! সাইকেল আসছে গুজরাট থেকে। তাই সেনরালে সাইকেল কারখানায় আর বিশ্বকর্মা পুজো হয় না। আসানসোল গ্লাস ফ্যাক্টরিও বন্ধ হয়ে গেছে বছর ২০ আগে। কুলটি ইস্কো কারখানা খুলেছ ঠিকই কিন্তু সেই জৌলুস নেই। কয়েকজন মাত্র আউটসোর্সিং শ্রমিক নিয়েই চলছে দেশের প্রথম লৌহ ইস্পাত কারখানা। যদি কুণাল ঘোষ বিশ্বকর্মা পুজোর সংখ্যা দিয়ে রাজ্যের শিল্পের হালের তুলনা করেছেন। যদিও তা মানে নারজ আসানসোল শিল্পাঞ্চলের কর্মীরা।
সেনরালে সাইকেল কারখানার প্রাক্তন চিপ মেডিক্যাল অফিসার চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্ত বলেছেন, “এই কারখানা বিশ্ব বিখ্যাত ছিল। একটি কারখানায় ১৩-১৪টি বিভাগ ছিল। সব বিভাগেই পুজো হত। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত। মানুষ ভিড় জমাতো। কিন্তু এখন আর কিছুই নেই। সব শেষ।” আসানসোল শিল্পাঞ্চলে বিশ্বকর্মা পুজোর জৌলুস রয়েছে কেবলই সেখানকার কর্মীদের স্মৃতিতে।