আসানসোল: ভোট এলে বুকের ভিতরটা এখনও ছ্যাঁৎ করে ওঠে জামুড়িয়ার মানোয়ারা, গীতাদের। এমনই এক ভোট তাঁদের কাছ থেকে কেড়েছে তাঁদের স্বামী। অকালে বিধবা হয়ে জীবন ভেসেছে এক অনিশ্চয়তার পথে। ভোট এলে, শিরোনামে হিংসার কথা উঠে এলে, এখনও শরীরে একটা অস্বস্তি হতে থাকে তাঁদের। চোখের সামনে ভেসে আসে ২০১৩ সালের সেই ভয়াবহ স্মৃতি। গীতা কোড়ার স্বামী ছিলেন রাজেশ কোড়া। মানোয়ারার স্বামীর নাম ছিলেন শেখ হাসমত সাগা। রাজেশ তৃণমূল করতেন, হাসমত ছিলেন সিপিএম কর্মী।
২০১৩ সালের ১৫ জুলাই পঞ্চায়েত ভোটের দিন তুমুল বোমাবাজি হয় জামুড়িয়ার মধুডাঙায়। অভিযোগ ওঠে, চুরুলিয়া পঞ্চায়েতের মধুডাঙার বুথের বাইরে হাসমতকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়। তৃণমূলের লোকেরা বোমা ছোড়ে। মৃত্যু হয় হাসমতের। সেদিনই ঘণ্টাখানেকের ব্যবধানে ‘খুন’ হন রাজেশ কোড়া। তৃণমূলের তরফে অভিযোগ তোলা হয়, সিপিএম কর্মীরা রাজেশকে মাথায় কুড়ুল মেরে খুন করে। কোনও দলই নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ স্বীকার করেনি। এরপর সময় গড়িয়েছে অনেকটাই।
রাজেশের স্ত্রী গীতা স্বামীর পথেই তৃণমূলে যোগ দেন। ২০১৫ সালে আসানসোলের পুরভোটে প্রার্থী হন তিনি। কাউন্সিলরও হন। রাজেশ যখন মারা যান তাঁদের দুই ছেলের বয়স ছিল ৫ ও ৩। এখন নবম শ্রেণি ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। শ্বশুরবাড়ির লোকজন দেখেন। কিন্তু গীতা বলেন, “আমি একটা চাকরি চেয়েছিলাম। ছেলেগুলোকে বড় করতে কারও মুখাপেক্ষি হতে হতো না।”
মানোয়ারাও রাজনীতিতে আসেন। চুরুলিয়া পঞ্চায়েতে ভোটে লড়েন, জেতেনও। তাঁরও এক ছেলে, এক মেয়ে। হাসমত একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন। স্বামীর পিএফের টাকা পেতেন একটা সময়। এখন অবশ্য ছেলে একটি বেসরকারি কারখানায় কাজ করে। তাতে চলে সংসার।
মানোয়ারা বলেন, “ভোট এলেই এই যে মানুষ মরে, ভাল লাগে না শুনতে। শুধু ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ের জন্য এই রক্তারক্তি বন্ধ হওয়া দরকার। এভাবে যে কত মানুষের সংসার ভেসে যায়, কেউ তো খোঁজও রাখে না।” গীতা কোড়ারও একই কথা। ভোটের থেকে মানুষের জীবনের দামটা একটু বেশি হোক, চান তিনি।