Daspur: দুপা বাঁধা শেকলে, ভরা শীতেও উলঙ্গ থাকেন এই ব্যক্তি, কেন জানেন?
Daspur: পরিবার সূত্রে খবর, মাত্র সতেরো বছর বয়সে মুরারীর বিড়বিড় বকা শুরু হয়, তারপর তা বাড়তে থাকে। ডাক্তার দেখালে কয়েক মাস ভাল থাকে। তারপর আবার যে কে সেই! পড়শিদের কথা মতো বাইশ বছরে বিয়েও দিয়েছিলেন বাবা-মা। কিন্তু ছেলে আর ভাল হল না। মাঝে মাঝে ভাল থাকে, মাঝে মাঝে বিগড়োয়।

দাসপুর: জরাজীর্ণ মাটির বাড়ি। সেখানেই দুপায়ে লোহার শিকলে বাধা অবস্থায় পড়ে ব্যক্তি। দীর্ঘ বারো বছর ধরে তিনি ওই অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। দেখার কেউ নেই সেই অর্থে। স্ত্রী ছিলেন। তিনিও ছেড়ে চলে গিয়েছেন। মারা গিয়েছে একমাত্র সন্তান। নিজেই নিজের শরীরে অ্যাসিড ঢেলে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। তবে তা তো হল না। উল্টে মুখ-দেহ বিকৃত হয়ে গিয়েছে। এই ভাবেই জীবন কাটাচ্ছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাপুরের সুরত পুরের বাসিন্দা মুরারীর। যার কষ্টে চোখে জল আসতে বাধ্য যে কারোর
মুরারী মোহন সাউ (৪১)। বাড়ি দাসপুর থানার সুরতপুরে। কৃষক পরিবারের জন্ম হয়েছিল তাঁর। লেখাপড়া টেনেটুনে ক্লাস সেভেন পর্যন্ত। তারপর মন দিয়ে তামার কাজ করতেন তিনি। কখনও আবার বাবার সঙ্গে চাষের কাজে হাত লাগাতেন। গরিবের সংসারে অভাব থাকলেও সুখের খামতি ছিল না। দুই ছেলে নিয়ে ভরা সংসার ছিল গৌরচন্দ্র ও মঞ্জরী দেবীর। তারপর একটা দমকা হাওয়ায় সব যেন সবটা শেষ হয়ে গেল। জীবনের অঙ্কের আর হিসেব মিলল না।
পরিবার সূত্রে খবর, মাত্র সতেরো বছর বয়সে মুরারীর বিড়বিড় বকা শুরু হয়, তারপর তা বাড়তে থাকে। ডাক্তার দেখালে কয়েক মাস ভাল থাকে। তারপর আবার যে কে সেই! পড়শিদের কথা মতো বাইশ বছরে বিয়েও দিয়েছিলেন বাবা-মা। কিন্তু ছেলে আর ভাল হল না। মাঝে মাঝে ভাল থাকে, মাঝে মাঝে বিগড়োয়।
বিবাহিত জীবন বছর খানেকের। তার মধ্যে সন্তান সম্ভবা হয়ে পড়েন মুরারী স্ত্রী। পরিবারের দাবি, সেই অবস্থায় চলে যান বাপের বাড়ি। আর ফিরে আসেননি। মুরারী বাবা-মায়ের কথায়, বৌকে কাছে না পেয়ে বদ্ধ উন্মাদ হয়ে যান মুরারী। মঞ্জরীদেবী বলেন, “কাছেই ছিল তামার কাজের অ্যাসিড। হঠাৎ একদিন নিজের গায়ে ঢেলে দিল। বেশ কিছুদিন ভুগে ভাল হয়েছিল ছেলে। কিন্তু ওকে আর ছেড়ে রাখা যাচ্ছিল না।”
জানা গিয়েছে, অ্যাসিড ঢালার পর একটা বাছুর আর পড়শির এক ছাগলকে পিটিয়ে মেরে ফেলে মুরারী। মঞ্জরী বললেন, “একদিন তো আমার গলায় আর কাঁধেও বঁটির কোপ বসিয়েছিল। অন্যদেরও যদি মারে, সেই ভয়ে আর আমরা ছেড়ে রাখতে পারেননি। ঘরের পিছনে লোহার শিকল দিয়ে বাঁধা সে।”
আজ পর্যন্ত একটুকুও উন্নতি নেই মুরারীর। মন ভাল থাকলে নাম ধরে ডাকলে সাড়া দেয়। নাহলে নিজের তালে থাকে। কনকনে এই শীতেও নগ্ন থাকে পোশাক দিলে ফেলে দেয়, কম্বল দিলেও গায়ে রাখে না। তবে চটের এই থলে সে ছাড়েনি। লাঠির আগায় করে খাবার ও জল পৌঁছে দেন ছেলের কাছে।
সত্তোরোর্ধ বাবা যেমন পারেন চাষবাস করে সংসার চালান। মোটামুটিভাবে চলে যায়। কিন্তু মুরারীর জন্য কোথাও থেকেও কোনও ধরনের সরকারি সাহায্য পান না বলে অভিযোগ বাবা মা-র। আজ পর্যন্ত মুরারির নামে রেশনটুকুও মেলেনি।
এই শীতের রাতে ছেঁড়া এক পাটের থলেতে নিজেকে ঢেকে রেখেছে। পরনে আর কিচ্ছু নেই। খাবার বলতে দুর থেকে পলিথিনে মুড়ে দু বেলা দুমুঠো ভাত মুড়ি লাঠির সাহায্যে তার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এক কথায় বলাই চলে দীর্ঘ বারো বছর ধরে এইভাবেই রয়েছে সে। এই বিষয়ে রাজনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান চিন্ময় চক্রবর্তীকে ফোন করা হলে তিনি বলেন,”আমি বিষয়টি জানতাম না, খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
