‘রাজ্যপালের সঙ্গে ছবি দেখিয়েছিল, সইও…’ কেন্দ্রীয় সরকারে চাকরি দেওয়ার নামে কোটি টাকার প্রতারণা! গ্রেফতার ৮

Government Job Scam: প্রতারিত যুবক-যুবতীদের অভিযোগ, ২০১৮ সালে কেন্দ্র সরকারের রোড সেফটি অর্গানাইজেশনের নামে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা দেখভালের সরকারি চাকরি দেওয়ার নামে কারোর থেকে ৮০ হাজার টাকা, কারোর থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছিল 'ফিউচার ইণ্ডিয়া' নামে সংস্থাটি।

'রাজ্যপালের সঙ্গে ছবি দেখিয়েছিল, সইও...' কেন্দ্রীয় সরকারে চাকরি দেওয়ার নামে কোটি টাকার প্রতারণা! গ্রেফতার ৮
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 06, 2021 | 4:03 PM

পূর্ব বর্ধমান: ভুয়ো ভ্যাকসিনকাণ্ড নিয়ে যখন তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি, তখন কেন্দ্রীয় সরকারে চাকরি দেওয়ার বদলে কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগ উঠল একটি ভুয়ো সংস্থার নামে। অভিযোগ, ‘ফিউচার ইন্ডিয়া’ নামে ওই সংস্থাটি দীর্ঘ তিন বছর গোটা রাজ্য জুড়ে তিন হাজারেরও বেশি যুবক-যুবতীর থেকে সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে কয়েক কোটি টাকার প্রতারণা করেছে।

প্রতারিত যুবক-যুবতীদের অভিযোগ, ২০১৮ সালে কেন্দ্র সরকারের রোড সেফটি অর্গানাইজেশনের নামে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা দেখভালের সরকারি চাকরি দেওয়ার নামে কারোর থেকে ৮০ হাজার টাকা, কারোর থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছিল ‘ফিউচার ইণ্ডিয়া’ নামে সংস্থাটি। বদলে, বেশ কিছু প্রশিক্ষণও দেওয়া হত। টাকা দিয়ে প্রশিক্ষণ নিলেই নিশ্চিত চাকরি মিলবে এই আশ্বাসই দেওয়া হয়েছিল ওই সংস্থার তরফে। অভিযোগ, কেন্দ্রীয় পরিবহন দফতর ও জাতীয় সড়ক সুরক্ষা নিগমে চাকরি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন প্রতারকেরা। প্রমাণস্বরূপ, খোদ রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সই করা শংসাপত্র এবং ছবিও দেখানো হয়েছিল। চাকরি পাওয়ার আশায় অনেকেই এই সংস্থায় প্রশিক্ষণ নিতে ভর্তি হয়।

প্রতারিত সত্যম রায় নামে এক যুবকের কথায়, “আমাদের বলা হয়েছিল জাতীয় সড়কে নিরাপত্তার কাজে আমাদের বহাল করা হচ্ছে। টাকা দিয়ে ট্রেনিং নিলেই মিলবে চাকরি। প্যানেলও বের করা হয়েছিল। এ সবই ঘটে ২০১৮ সালে। তখন আমার থেকে ৮০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। অনলাইনে প্যানেল লিস্টে আমার নাম ছিল ১৭১-এ। বলা হয়েছিল আমাদের মাসিক বেতন দেওয়া হবে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। শোনার পর এই সংস্থায় নিজের নাম নথিভুক্ত করি। তখনও জানতাম না। মুখের কথাতেই বিশ্বাস করেছিলাম। আমাদের রাজ্যপালের ছবি, অনুমোদনপত্র দেখানো হয়েছিল। ওঁ বোধহয় এই সংস্থার কো-অর্ডিনেটর বা এমন কোনও পদে ছিলেন বলে জানানো হয়েছিল ‘ফিউচার ইণ্ডিয়া’-র তরফে। তাই  কোনও সন্দেহ হয়নি। চাকরি পাওয়ার তাড়নায় তখন এত কিছু ভাবিনি। ভেবেছিলাম চাকরি পেলে একটা হিল্লে হয়। তাই অতটা মাথা ঘামাইনি।”

ছোটন দাস নামে অন্য এক প্রতারিত যুবক বলেন, “২০১৮ সাল থেকেই প্রশিক্ষণ দিয়ে চাকরি দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। আমি আমার এক পরিচিতের মাধ্য়মে ৯হাজার টাকা দিয়েছিলাম। মঙ্গলবার, শংসাপত্র আনতে গিয়ে শুনি আরও তিন হাজার টাকা দিতে হবে। সেই টাকা নিয়ে গিয়েছিলাম। তারপরেই শুনলাম, ভুয়ো সংস্থায় নাকি টাকা ঢেলেছি। ওই সংস্থার সকলকেই গ্রেফতার করা হয়েছে।”

মেমারির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ সিং রায় জানিয়েছেন, আর্থিক প্রতারণার ঘটনায় ওই সংস্থার আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদেরও তল্লাশি চলছে। শুধু মেমারি নয়, অন্য জেলার একাধিক যুবক-যুবতী এই প্রতারণার শিকার। ধৃতদের কাছ থেকে ১ লক্ষ ১০ হাজার নগদ টাকা ছাড়াও ৭টি মোবাইল, দুটি রেজিস্টার ও চারটি স্ট্যাম্প উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে বেশ কিছু জাল শংসাপত্র। তবে, প্রতারকদের কাছে রাজ্যপালের সই করা অনুমোদিত পত্রটি কীভাবে এল তা  নিয়ে ধন্দে পুলিশ।  ধৃতেরা জেরায় জানিয়েছে, তাদের মূল অফিস নিমতায়। তবে সেখানে আদৌ অফিস কি না বা এই চক্রের বিস্তৃতি কতদূর তা তদন্ত সাপেক্ষ।

এই বিষয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃনমুল কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, “রাজ্যপাল পশ্চিমঙ্গে থেকে কোনও খোঁজখবর না নিয়ে এই ধরনের প্রতারণা চক্রকে সাহায্য করেন। অথচ, বাংলার জন্য তিনি কিছু করেন না। বাংলায় কীভাবে মুখ্যমন্ত্রীর দোষ ধরা যাবে এবং বাংলাকে ছোট করা যাবে তার চেষ্টা করেন। এই ঘটনার সঙ্গে বিজেপিরও যোগ আছে।”

বর্ধমান সদর জেলা বিজেপির কনভেনার কল্লোল নন্দন পাল্টা বলেন, “যে রাজ্যে ভুয়ো ভ্যাকসিন এবং আইএএস, আইপিএস ধরা পড়ছে সেখানে রাজ্য়াপালের নামে ভুয়ো চিঠি, মোদীর চিঠি সবই দেখা যাবে। পুরো সিস্টেমটাকেই ভুয়ো বানিয়ে ছেড়েছে। প্রশাসন এর নিরপেক্ষ তদন্ত করুক।”

আরও পড়ুন: ‘দালালদের দিয়ে সব শেষ, বাড়িও বেচে দিয়েছি’, যুবতীর চোখের জলে বেরিয়ে এল মেডিক্যালের খোলনলচে