শক্তিগড়: একেবারে ফিল্মি কায়দায় বন্দুকবাজের হামলা। ভরসন্ধেয় জাতীয় সড়কে কয়লা মাফিয়া ‘খুন’। গুলিতে ঝাঁঝরা শরীর। শক্তিগড়ে জাতীয় সড়কে কয়লা মাফিয়া রাজু ঝা খুনে, প্রশ্নের মুখে জাতীয় সড়কে নিরাপত্তা। উঠে আসছে আরও একাধিক প্রশ্ন,আর তার সঙ্গে ঘনীভূত হচ্ছে সাদা ও নীল রঙা দুই গাড়ির রহস্যও। জানা যাচ্ছে, গরু পাচারে অন্যতম অভিযুক্ত এনামুল ঘনিষ্ঠ আব্দুল লতিফের সাদা বিলাসবহুল ফরচুনা গাড়িতে যাচ্ছিলেন কয়লা মাফিয়া রাজু। মাঝপথে তার পথ আটকায় একটা নীল গাড়ি। জানা যাচ্ছে, ওই নীল গাড়িতেই ছিল আততায়ীরা। সেই গাড়ির হদিশ ইতিমধ্যেই পেয়েছেন তদন্তকারীরা। পুলিশ সূত্রে খবর, জাতীয় সড়কের পাশে মিলেছে গাড়ি। প্রাথমিকভাবে তদন্তকারীরা মনে করছেন, ‘অপারেশনে’র পর অর্থাৎ কয়লা ব্যবসায়ী রাজু ঝাকে গুলি করে কলকাতার দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল আততায়ীরা। পরে বিপদ বুঝেই রুট বদল করে।
তদন্তকারীরা এটাই মনে করছেন, সাদা গাড়ি যখন গুলিতে ঝাঝরা, রক্তাক্ত অবস্থায় রাজু যখন ভিতরে কাতরাচ্ছেন, তখন আশপাশের দোকানি, পথ চলতি অন্যান্যদের নজরে বিষয়টি আসে। খবর যায় কাছাকাছি চেক পোস্টে থাকা কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদেরও। আততায়ীদের কাছে সেই বিষয়টি স্পষ্ট ছিল। পুলিশ মনে করছে, নাকাচেকিংয়ে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়েই বিপদ বুঝে রুট বদলে ফেলে আততায়ীরা। জাতীয় সড়কের ধারে গাড়়ি দাঁড় করিয়ে তারা সেখান থেকে পালায়। জাতীয় সড়কের ধারে শক্তিগড় রেল স্টেশনের কাছাকাছি জায়গায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে চলে যায়।
এখানেই শেষ নয়, পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, আততায়ীদের গাড়ির নম্বর প্লেটটাও পর্যন্ত নকল। আব্দুল লতিফের সাদা গাড়ি আগেই উদ্ধার করেছে পুলিশ। তদন্তকারীরা মনে করছে, গোটা বিষয়টি অত্যন্ত পরিকল্পনা করে করা হয়েছে। নম্বর প্লেটটা দেখেও যাতে পুলিশের হাতে কোনও ‘ক্লু’ না আসে, সেটাও ভেবে রেখেছিল আততায়ীরা।
আব্দুল লতিফের নামে রেজিস্ট্রার্ড সাদা গাড়ি কলকাতার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে ছিল। এই সাদা গাড়িটি বোলপুর আরটিও থেকে ২০২০ সালে রেজিস্টার হয়। সেটি অত্যন্ত বিলাসবহুল গাড়ি। তাতে চালকের পাশে সামনের আসনে বসেছিলেন রাজু ঝা। জানা যাচ্ছে, সন্ধ্যায় ওই সাদা গাড়ির ঠিক মুখোমুখি এসে দাঁড়ায় নীল ব্যালেনো গাড়ি। তারপর সেই নীল গাড়ি থেকে চালানো হয় এলোপাথাড়ি গুলি। গাড়ির সামনের কাচ ভেঙে গিয়েছে। রবিবার সকালেও দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গিয়েছে, ভাঙা কাচের টুকরো পড়ে রয়েছে। গাড়ির সিটেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় রাজু ঝায়ের। জানা যাচ্ছে, চালক সে সময়ে গাড়ি থেকে নেমে পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। গাড়ির ভিতরে পিছনে সিটে বসেছিলেন আরও এক জন। তিনি কোনওমতে সিটের পিছনে মাথা লুকিয়ে আত্মরক্ষা করেন। আরেক জনের উল্লেখ পাওয়া যায়, তাঁর নাম ব্রতিন মুখোপাধ্যায়, তাঁরও হাতে গুলি লাগে। গাড়ি থেকে নেমে ঘটনাস্থলে দৌড়ে অন্যত্র পালান। দুর্গাপুরে নিজের হোটেল থেকে রাজু যখন সাদা গাড়িতে ওঠেন, সেখানে চালককে নিয়ে চার জন ছিল।
আরও একটি বিষয় উল্লেখ্য, রাজু ঘনিষ্ঠরাই জানাচ্ছেন, সাদা গাড়িতে ছিলেন গরু পাচারে অন্যতম অভিযুক্ত এনামুল ঘনিষ্ঠ আব্দুল লতিফও। সিবিআই-এর চোখে তিনি কিন্তু ফেরার। তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে। এদিকে রাজু বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে কয়লা পাচারে। সেক্ষেত্রে কয়লা ও গরু পাচারের কোথায় যোগসূত্র, সেটাও ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।