Swapan Debnath: ‘করোনায় বাড়ি বসে বেতন নেন, দুঃস্থদের পাশে দাঁড়ান না শিক্ষকরা,’ মন্ত্রীর মন্তব্যে তীব্র বিতর্ক

Swapan Debnath: "করোনা (Corona) অতিমারির সময়ে শিক্ষকরা ঘরে বসে প্রতি মাসের বেতন নিয়েছেন, নিজের পরিবারের জন্য নিয়মিত বাজার করেছেন। কিন্তু সেই সময় দুঃস্থ মানুষের পাশে সেভাবে দাঁড়াননি শিক্ষকরা। এটা আমি লক্ষ্য করেছি।''

Swapan Debnath: 'করোনায় বাড়ি বসে বেতন নেন, দুঃস্থদের পাশে দাঁড়ান না শিক্ষকরা,' মন্ত্রীর মন্তব্যে তীব্র বিতর্ক
শিক্ষকদের নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্কে মন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 08, 2021 | 10:43 PM

কাটোয়া: “করোনা (Corona) অতিমারির সময়ে শিক্ষকরা ঘরে বসে প্রতি মাসের বেতন নিয়েছেন, নিজের পরিবারের জন্য নিয়মিত বাজার করেছেন। কিন্তু সেই সময় দুঃস্থ মানুষের পাশে সেভাবে দাঁড়াননি শিক্ষকরা। এটা আমি লক্ষ্য করেছি।” শুক্রবার  এভাবেই শিক্ষকদের সমালোচনা করতে শোনা গেল রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ (Swapan Debnath)। মন্ত্রী মশাই যখন এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে এই কথাগুলি বলছেন, তখন সংবাদমাধ্যমের দিকে তাঁর চোখ যেতেই ক্যামেরাকে বন্ধ করতে বলেন।

রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ এদিন কাটোয়ার রবীন্দ্র পরিষদে দুয়ারে শিক্ষক শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন। সেখানে তিনি বলেন, শিক্ষকরা মাটির দুর্গাকে প্রণাম করেন, পুষ্পাঞ্জলি দেন। কিন্তু নিজের বাড়িতে মাকে অভুক্ত রাখেন। প্রত্যেক শিক্ষকের বোঝা উচিত বাড়িতে বসে থাকা, জ্যান্ত মা কেন অভুক্ত থাকবেন, কেন অনাদরে পড়ে থাকবেন? নিজের মাকে অনাদরে রাখার সংখ্যা কম নয়। দুর্গামাকে প্রণাম করুন, কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু গর্ভধারিণী মাকে যেন অভুক্ত রাখবেন না। জ্যান্ত মাকে হাসিখুশি রাখুন।

এর পর স্বপনবাবু মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সদস্যদের কাছে প্রস্তাব রাখেন যে জেলায় প্রায় আট হাজার শিক্ষক শিক্ষিকা আছেন। তাঁদের প্রত্যেক সদস্য যদি দুটো করে দুঃস্থ শিশুর জামা-প্যান্ট কিনে দেন তাহলে অনেক শিশু পুজোয় নতুন জামা পরতে পারবে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষকগণ মন্ত্রীর কথা সঙ্গে সহমত পোষণ করলেও মন্ত্রীর এই মন্তব্য ঘিরে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

তাঁর এই বক্তব্যে মতানৈক্য দেখা দিয়েছে দলেও।জেলা শিক্ষক সমিতির সম্পাদক বিশ্বনাথ সাহা এই বিষয়ে জানিয়েছেন কাটোয়ার বিধায়কের উদ্যোগে কাটোয়া মহকুমায় করোনা কালে শিক্ষকরা যথেষ্ট ভাবে দুস্থ মানুষ জনের পাশে দাঁড়িয়েছিল। আর তা নিয়েই শুরু হয়েছে কাটোয়ার শিক্ষক মহলে বিতর্ক।

পূব বর্ধমান জেলা বিজেপির সহ সভাপতি অনীল দত্তের কথায়, “যে কথা মন্ত্রী বলেছেন তাতে দু’ রকম অর্থ উঠে আসছে। মন্ত্রী সরাসরি বলছেন যে শিক্ষকেরা করোনাকালে নিয়মিত বেতন পেয়েছেন অথচ দুঃসময়ে কাউকে সাহায্য করেননি। অথচ, তৃণমূলের শিক্ষক সমিতির সম্পাদক জানাচ্ছেন কাটোয়ার বিধায়ক (তৃণমূল) রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে মিলে শিক্ষকেরা যতেষ্ট সহায়তা করেছে। একই দলে কী করে দু’ রকম কথা হয়! আসলে তৃণমূল দলটাই এমন। এরা আগে ঠিক করুক মানুষকে কোন কথাটা বলতে হবে।” এর পর তিনি আরও যোগ করেন, এখান থেকেই পরিষ্কার যে তৃণমূলের কোনও নেতা নিয়ম নীতি মানেন না।

এদিকে নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির সদস্য কৌশিক দে-র প্রতিক্রিয়া, মন্ত্রীর এ হেন মন্তব্যে অপমানিত হল গোটা শিক্ষক সমাজ। করোনাকালে সাধ্যমতো শিক্ষকরা সাহায্য় করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে নিজেদের সাধ্যমতো অর্থ দান করেছেন তাঁরা। বহু শিক্ষক ব্যক্তিগত উদ্যোগেও এ কাজ করেছেন। তাই মন্ত্রীর এই মন্তব্য শিক্ষক সমজকেই ছোট করল।

প্রসঙ্গত, এর আগে রাজ্যের আরও এক মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী শিক্ষকদের উদ্দেশে এমনই মন্তব্য করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিলেন। শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষকদেরই একহাত নিয়েছিলেন রাজ্যের গ্রন্থাগার মন্ত্রী। শিক্ষকদের উদ্দেশে তাঁর কটাক্ষ ছিল, করোনাকালে বাড়িতে বসে বেতন নিয়েছেন তাঁরা। তার পর ছাত্র গঠনের দায়িত্ব কার ওপর বর্তাবে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি । এমনকি সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের পড়াশোনার মানের তুলনা টেনে শিক্ষকদের দায়িত্ববোধ সম্পর্কে টিপ্পনী করতে শোনা গিয়েছিল তাঁকে।

আরও পড়ুন: Subrata Mukherjee: ‘বিধানসভায় এর চেয়ে অনেক খারাপ কথা হয়’, সব্যসাচী-বিতর্কে মন্তব্য সুব্রতর, প্রতিক্রিয়া দিলেন অধ্যক্ষও