ঝালদা: সিবিআই তদন্ত করলেও এখনও ধরা রয়েছেন তপন কান্দু হত্যার মূল ষড়যন্ত্রকারীরা। এক বছর পরেও মূল মাথাদের ধরা যায়নি বলেই মন্তব্য করলেন তাঁর স্ত্রী পূর্ণিমা কান্দু। ঠিক এক বছর আগে এমন দিনেই আততায়ীদের গুলিতে খুন হয়েছিলেন পুরুলিয়ার ঝালদার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু। এই দিনটিকে শহিদ দিবস হিসেবে পালন করছে জেলা কংগ্রেস। এদিন সকাল থেকেই নিহত তপন কান্দুকে শ্রদ্ধা জানাতে সারাদিন নানা সামাজিক কর্মসূচির আয়োজন হয়েছিল ঝালদা জুড়ে। উপস্থিত ছিলেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো সহ অনেকেই। কিন্তু, ভয় আজও কাটেনি পূর্ণিমা দেবী। স্বামী আর নেই! সন্তানদের সুরক্ষার কথা ভেবেই প্রতিদিন দুশ্চিন্তায় কাটে তাঁর।
এক বছর আগের কথা মনে পড়লে আজও শিউরে ওঠেন পূর্ণিমা দেবী। এদিন সকাল থেকেই প্রচণ্ড আবেগ প্রবণ হয়ে পড়েছেন তিনি। সকাল থেকেই স্বামীর প্রতিকৃতির সামনে বসে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘সিবিআই তদন্ত শুরু করেছে। অনেকে গ্রেফতারও হয়েছে, কিন্তু খুনের পিছনে আরও অনেকে রয়েছেন, যাঁরা এখনও অধরা।’ তিনি জানিয়েছেন, তদন্তকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন তিনি। সন্তানদের একা হাতে মানুষ করাই এখন তাঁর মূল লক্ষ্য।
তপন কান্দু খুনের ঘটনাকে ঘিরে তোলপাড় হয় রাজ্য রাজনীতি। ঘটনার তদন্তে নামে জেলা পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল। যদিও এই ঘটনায় নিহতের পরিবার সিবিআই তদন্তের দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলে বিচারপতি সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন। সেই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার মোট ৭ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁরা জেল হেফাজতে রয়েছেন।
সিবিআই আগামিদিনে ঘটনায় যুক্ত সবাইকে গ্রেফতার করবে বলে আশায় রয়েছেন পূর্ণিমা। একই সঙ্গে নিজের দুই সন্তানের নিরাপত্তা নিয়েও প্রচণ্ড মানসিক চাপে রয়েছেন ঝালদা পুরসভার বর্তমান উপ পুরপ্রধান। তদন্ত নিয়ে খুব একটা খুশি নন জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো নিজেও। তাঁরও মত এখনও বহু দুষ্কৃতী অধরা। তবে সিবিআই-এর উপর ভরসা রয়েছে তার। ঝালদার সাধারণ মানুষও মনে করছেন এই খুনের ঘটনায় “বড় মাথা” এখনও গ্রেফতার হয়নি। তদন্তের যবনিকা পড়তে এখনও বাকি।
এদিকে সোমবার রক্তদান শিবির চলাকালীন হঠাৎ করে রক্তদান শিবিরে উপস্থিত হন ঝালদার প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা তৃণমূলের নেতা সুরেশ আগরওয়াল। তপন কান্দুর হত্যায় যুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে তিনি বলেন, ‘পারিবারিক বিবাদ থেকে এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে। রাজনৈতিক কোনও যোগ নেই এর সঙ্গে। সিবিআই প্রায় এক বছর ধরে তদন্ত করেও কোন রাজনৈতিক যোগাযোগ পায়নি।’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘ঝালদায় সবাই শান্তিতে বসবাস করেন। ছোট শহর প্রত্যেকের সঙ্গে প্রত্যেকের পরিচয় রয়েছে।’ প্রথম দিন থেকেই তাঁরাও তপন কান্দুর পরিবারের সঙ্গে সমব্যথী। এনিয়ে রাজনীতি তাঁরা চান না।
এখনও পর্যন্ত যে সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁরা হলেন দীপক কান্দু, নরেন কান্দু, আশিক খান, কলেবর সিং, সত্যবান পরামানিক, জাবির আনসারী, শশীভূষণ সিং।