পুরুলিয়া: শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় কোলের খেরোয়াল হেমব্রম। বাম পায়ে লিখে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে জঙ্গলমহলের আড়ষা ব্লকের সিরকাবাদ হাইস্কুলের এই আদিবাসী ছাত্র। তার পরীক্ষা কেন্দ্র স্বামী শ্রদ্ধানন্দ বিদ্যাপীঠ। পরীক্ষা কেন্দ্রের হোস্টেলেই হয়েছে পরীক্ষার আয়োজন। একদিন আগেই তাকে হোস্টেলে নিয়ে আসা হয়েছে।
বয়স যখন মাত্র কয়েকদিন তখনই জন্ডিসের শিকার হয় খেরোয়াল হেমব্রম। জন্ডিস কেড়ে নেয় তার স্বাভাবিক জীবন। অচল হয়ে যায় দুই হাত। তারপর ১৬ বছর ধরে চলেছে কঠিন সংগ্রাম। আজ মাধ্যমিকে পুরুলিয়ার খেরোয়াল। কোনও রাইটার না নিয়ে পায়ে লিখেই এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে আড়শা ব্লকের কলবনী গ্রামের এই কিশোর। পরীক্ষায় ভাল ফল নিয়েও যথেষ্ট আশাবাদী। স্থানীয় সিরকাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা। জীবনের প্রতিবন্ধকতাকে সঙ্গী করেই চলেছে হার না মানা লড়াই। দিন রাত এক করে চলেছে পড়াশোনা। অবশেষে পরীক্ষায় বসতে পেরে খুশি খেরোয়াল।
তার এই মনের জোর দেখে মুগ্ধ পরিবার-পরিজন থেকে বন্ধু-বান্ধবরাও। বৃহস্পতিবারই তাকে আড়ষা ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে পরীক্ষা কেন্দ্র স্বামী শ্রদ্ধানন্দ বিদ্যাপীঠের হোস্টেলে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এই হোস্টেলে থেকেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে সে। পরীক্ষা কেন্দ্রে তার জন্য ৪৫ মিনিট আলাদা সময় দেওয়া হয়েছে। যাতে কোন অসুবিধা না হয় তার জন্য সব রকম ব্যবস্থা নিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। খুশি খেরোয়ালও। বলছে, প্রস্তুতি ভালই আছে। পরীক্ষা দিচ্ছি। এবার দেখা যাক ফল কেমন হয়।
পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক বিজয় কুমার মণ্ডল বলছেন, “ওর জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাটিতে বসে যাতে ও ভাল করে পরীক্ষা দিতে পারে সেই ব্যবস্থা হয়েছে। হস্টেল থেকে ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওর জন্য ৪৫ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়েছে।” খেরোয়ালের বাবা অজিত হেমব্রম বলছেন, “ছোট থেকেই ওর অনেক চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু ঠিক হয়নি। হাত তো অচল। ঠিক মতো কথাও বলতে পারে না। কিন্তু ও হার মানেনি। পরীক্ষার জন্য দিন রাত পড়েছে। এবার দেখা যাক কেমন রেজাল্ট হয়।”