পুরুলিয়া: ভারত তখনও স্বাধীন হয়নি। পুরুলিয়ার পুঞ্চা তখন একটা গঞ্জ। ব্রিটিশ শাসনকাল। এখানেই ইংরেজ পুলিশ একটি পুলিশ ফাঁড়ি তৈরি করেন। ওসি ছিলেন জিটি লতিফ। ফাঁড়ি থেকে কিছুটা এগিয়ে এলেই পাহাড়ি এলাকা। কথিত আছে, জঙ্গলে ঘেরা সে এলাকায় ওই ওসি এক পাথরে দেবীর পায়ের ছাপ দেখেন। এরপরই তিনি স্বপ্নাদেশ পান। সেই থেকে ৭৭-৭৮ বছর হতে চলল চরণপাহাড়ি কালীপুজোর। যেহেতু মায়ের পদচিহ্ন পড়েছিল এই পাহাড়ি জঙ্গলে, তাই পাহাড়ের নাম হয় চরণপাহাড়ি। আর সেখানকার কালী হয়ে ওঠে চরণপাহাড়ি কালী।
উঁচু এক টিলার উপর চরণপাহাড়ির মন্দির। বছরভর ভক্তদের ভিড় সেখানে। কার্তিক মাসের অমাবস্যায় অবশ্য ভিড়টা একটু বেশিই হয়। দীপান্বিতা কালীপুজোয় দূর দূরান্ত থেকে ভক্ত আসে মায়ের দর্শনে। এলাকার লোকজনের কথায়, এ পুজো ভক্তি-বিশ্বাসের পুজো, সর্বধর্ম সমন্বয়ের পুজো। ব্রিটিশ আমলের পুঞ্চা ফাঁড়ি এখন পুঞ্চা থানায় উন্নীত হয়েছে। গঞ্জ ছেড়ে পুঞ্চা এখন আরও অনেক বেশি উন্নত। বাজার, দোকানের অভাব নেই।
তবে শোনা যায়, এক সময় পাহাড়ি দুর্গমতার কারণে এখানে খুব কম মানুষই যাতায়াত করতেন। কখনও কখনও তান্ত্রিকরা আসতেন পুজো করতে। তৎকালীন ওসি জিটি লতিফ এসেছিলেন এলাকা ঘুরে দেখতে। এরপরই স্বপ্নাদেশ, পুজোর সূচনা।
এ মন্দিরের রোজকার পুজো করেন শ্রীধরচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “মুসলমান এক ওসি ছিলেন এখানে। তিনিই এখানকার হিন্দু ধর্মাবলম্বী-সহ সমস্ত ধর্ম বর্ণের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এই পুজো চালু করেন। আজও সেই সম্প্রীতি বজায় রেখেই পুজো হয়ে চলেছে। বহু বছর হয়ে গেল এই পুজোর। এখানে সর্বধর্মের মানুষ আছেন। সকলে সহযোগিতা করেন। যিনি ওসি সাহেব ছিলেন, এখানে বসতেন। মা ওনাকে স্বপ্ন দেখান। প্রথমে পাথরই পুজো হতো। সেই চরণ থেকেই চরণপাহাড়ি। পরে মন্দির হল।”
২৫ বছর হয়ে গেল এই পুজোর সাক্ষী থাকেন নিত্যানন্দ ঘোষ। তিনিও বলেন, “জঙ্গলে ঘেরা পাহাড় ছিল। সেখানেই মায়ের পায়ের চিহ্ন দেখেছিলেন ওসি। স্বপ্নাদেশ পেয়ে এখানে পুজো শুরু হয়। সেই থেকে চরণপাহাড়ি।” কাঞ্চননগরের বাসিন্দা নন্দলাল মিত্র। তিনিও আসেন নিয়মিত। নন্দলাল বলেন, “এখানে পুজো খুব ধুমধাম করে হয়। জিটি লতিফ প্রতিষ্ঠাতা এই পুজোর। নিত্য পুজো হয় এখানে। কালীপুজোর সময় তো কথাই নেই। এখানে সর্বধর্মের মানুষের সমাগম হয়।”