মধ্যমগ্রাম: কোথাও কালী মুক্তকেশী, কোথাও কালী দিগম্বরী, কোথাও আবার গৃহীর আরাধ্য দেবী, কোথাও আবার ডাকাতদের আরাধনা। বাংলাজুড়ে কালীতীর্থগুলিতে বৈচিত্রের কোনও শেষ নেই। তবে সর্বত্র একটা একটা মিল রয়েছে। সর্বত্রই শিবের বুকের উপর কালী দন্ডায়মান। শোনা যায় প্রলয় থামাতে, কালীকে নিরস্ত্র করতে মহাকাল শিব কালীর পায়ের নীচে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু যদি উল্টো ছবিটা হয়? হ্যাঁ, এই উলোটপুরানই দেখা যাচ্ছে মধ্যমগ্রামে। বিশ্বে একমাত্র কালী-শিবের এমন পূর্ণাঙ্গ মূর্তি রয়েছে এই বাংলাতেই।
কালীর বুকের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছেন দেবাদিদেব শিব। মধ্যমগ্রাম বাদু রোডে বাবা-মাকালের মন্দিরে মহাকালের পায়ের নিচে শুয়ে রয়েছেন কালি। যেন প্রকৃতি রূপে কালীকে শাসন করছে মহাকাল। কিন্তু কেন এমন মূর্তি? কী তার রহস্য? নেপথ্যে রয়েছে এক বড় কারণ।
মন্দিরের সেবাইত অর্ঘ্য চক্রবর্তী বলছেন, “১৯৮০ সালে এখানে একটা ক্যালেন্ডার আসে। সেখানেই মহাদেবের এই রূপ প্রথম দেখা যায়। তখন থেকেই পুজোটা এভাবে শুরু হয়। প্রথমে যদিও ক্যালেন্ডারে পুজো হতো। তারপর মূর্তিতে।” মহাদেব এখানে চতুর্ভুজ, নীল বর্ণের। তিনি দক্ষিণা কালিকার দেহে পা রেখে দাঁড়িয়ে। অর্থাৎ সাধারণ কালী মূর্তির একেবারে উল্টো অবস্থান। এই মূর্তি যেন প্রকৃতি আর পুরুষের ভারসাম্যের প্রতীক। সেবাইত অর্ঘ্য বলছেন, এইভাবে পুজো কোথায় হয় না। তথ্য বলছে, এ ধরনের ব্যতিক্রমী মহাকালের মূর্তি ভূ-ভারতে আছে মাত্র তিনটি। বেনারস, উজ্জয়িনী এবং মধ্যমগ্রামে। পূর্ণাঙ্গ মূর্তি শুধু মধ্যমগ্রামে। এলাকার বাসিন্দা নীলাদ্রি ঘোষ কিন্তু দিচ্ছেন অদ্ভুত ব্যখ্যা। বলছেন, “আসলে এর মধ্যে দিয়ে বলতে চাওয়া হচ্ছে কাল স্থির নয়। যেটা একদিন নিচে আছে, সেটা উপরে হবে। আর যেটা উপরে আছে সেটা একদিন নিচে যাবে।”