সুন্দরবন: মরিয়ান খেজুর কোথায় হয়? মরুদেশে! কিন্তু কেউ কখনও ভাবতে পেরেছে লবণাক্ত মাটিতেও এই খেজুর চাষ হবে? আশ্চর্যজনক এই ঘটনা ঘটেছে সুন্দরবনের হাসনাবাদে। সেখানে আরবের খেজুরের বীজ লাগিয়ে তাক লাগালেন সুন্দরবনের হামিদ।
সুন্দরবনের হাসনাবাদ ব্লকের পাটলিখানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বেনা গ্রামের বাসিন্দা আবদুল হামিদ। এক সময়ে গাড়ির গ্যারাজে কাজ করতেন তিনি। এখন মন দিয়েছেন চাষবাসে। খেজুরের বীজ পুঁতছেন মাটিতে। আর তা থেকে ফলছে খেজুরও। এক-একটি গাছে ইতিমধ্যে খেজুরও ফলতে শুরু করেছে। আবদুলের আশা এই ফলন থেকেই একদিন তাঁদের কষ্টের দিন ঘুচবে।
আবদুলের বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী ও দুই ছেলে। জমি ও জায়গা থাকলেও তা বিশেষ কিছু নেই। চাষের জন্য রয়েছে দু’কাঠা জমি। আমফানের সময় পরিচিত এক ব্যক্তি আরব থেকে খেজুরের বীজ এনে দিয়েছিলেন আবদুলকে। তিন ধরনের খেজুরের বীজ পেয়েছিলেন তিনি। সেগুলি থেকে চারা তৈরি করেছেন হামিদ। এখন খেজুর চাষে মন দিয়েছেন।
একে একে তিরিশটি খেজুর গাছ তৈরি করেছেন হামিদ। তাঁর দাবি, এ বছর একটিতে ফলেছে প্রায় ১৫ কেজি খেজুর। যাঁরা দেখতে আসছেন, তাদের হাতে দুয়েক টুকরো খেজুর দিচ্ছেন তিনি। হামিদের আশা, বছর দুয়ের মধ্যে সব গাছে খেজুর হবে। ভাল দামও মিলবে।
তিনি জানান, তাঁর কাছে মোরিয়াম,সুক্কার ও আজোয়া তিন প্রজাতির খেজুরের চারা আছে। এই সব জাতের খেজুরের বাজারদর বেশ ভাল। হামিদের বক্তব্য, মোরিয়াম খেজুরের দাম কেজি প্রতি ৫০০ টাকা। সুক্কার প্রজাতির খেজুর বিক্রি হয় ৫০০-৮০০ টাকা প্রতি কেজি দরে। আজোয়া প্রজাতির খেজুরের দাম কেজি প্রতি ৮০০-২৫০০ টাকা।
খেজুর গাছের চারা বিক্রির ব্যবসাও শুরু করেছেন হামিদ। বাড়ির ছাদে বহু চারা তৈরি করেছেন তিনি। সেগুলির দাম এক হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। হামিদ জানান, “বিশেষ পদ্ধতিতে মাটি তৈরি করে বীজ রোপণ করতে হচ্ছে।” তিনি বলেন, “৩০ শতাংশ জৈব সার, ৩০ শতাংশ দোঁয়াশ মাটি, ২০ শতাংশ লাল বালি ও ২০ শতাংশ সাদা বালি দিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করা হয়। সেই মাটিতে বসানো হয় চারা।”
খেজুর চাষ নিয়ে হামিদ এখন অনেকটাই রপ্ত। গাছের পরিচর্যা শিখেছেন ইউটিউব দেখে। এ বার আরও বেশি পরিমাণ জমিতে খেজুর গাছ বসানোর কথা ভাবছেন তিনি। চারা গাছ এবং খেজুর বিক্রি করে সুদিন ফিরবে বলে আশা করেন তিনি।