Sundarban Royal Bengal Tiger: কলাগাছের তলায় লুকিয়ে বসেছিল, শেষে ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু কুমিরমারীর ত্রাস!
South 24 Pargana: বনকর্মীরা জানিয়েছেন, ওই বাঘিনীর বয়স খুব বেশি নয়। চার থেকে পাঁচ বছর। রবিবার গোটা দিন পর্যবেক্ষণ করা হবে ওই বাঘিনীকে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা: বাঘের আতঙ্কে ঘুম উড়েছে সুন্দরবনবাসীর। কুলতলির পর এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই ফের বাঘিনীর দেখা মিলল গোসাবা ব্লকের কুমারমারীতে। শনিবার রাতে বাঘিনীকে (Royal Bengal Tigress) ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু করেন বনকর্মীরা। শুক্রবার রাতে অফিসের পাশেই প্রথম পায়ের ছাপ দেখতে পাওয়া যায়। এরপর চলে চিরুনি তল্লাশি। অবশেষে শনিবার রাতে পাকড়াও করা হয় ডোরাকাটাকে।
বনদফতর সূত্রে খবর, শুক্রবার রাতে প্রথম বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পাওয়া যায় বাগনা ফরেস্ট অফিসের কাছে। খবর পেয়েই দ্রুত সেখানে রওনা দেন সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের বসিরহাট রেঞ্জের বনকর্মীরা। তাঁরা খতিয়ে দেখে জানান, ওই পায়ের ছাপ বাঘেরই।
এরপর কুমিরমারীতে চিরুনি তল্লাশি শুরু হয়। কিন্তু শুক্রবার রাত থেকে গোটা একদিন কাটলেও দক্ষিণরায়ের দেখা মেলেনি। বনদফতরের পক্ষ থেকে এলাকাটি জাল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। তারপর তাকে জঙ্গলে পাঠানোর চেষ্টা চলে। দেওয়া হয় ছাগলের টোপও। কিন্তু সে চেষ্টাও বৃথা! ধরা দেয়নি রয়্যাল বেঙ্গল।
অবশেষে, শনিবার রাতে ওই বাঘটিকে দেখা যায় বাগনা ফরেস্ট অফিসের পাশে কলাগাছের তলায় লুকিয়ে বসে থাকতে। দেখতে পেয়েই ঘুমপাড়ানি গুলে ছুড়ে বাঘটিকে কাবু করেন বনকর্মীরা।
বনকর্মীরা জানিয়েছেন, ওই বাঘিনীর বয়স খুব বেশি নয়। চার থেকে পাঁচ বছর। রবিবার গোটা দিন পর্যবেক্ষণ করা হবে ওই বাঘিনীকে। সব ঠিক থাকলে এদিনই তাকে মুক্তি দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে বনদফতর।
ঘটনায় বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “আমি মনিটারিং করছি। আমার ধারণা বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। তাই মাঝেমধ্যেই বাইরে বেরিয়ে আসছে। ওদের পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হচ্ছে। আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি। সাধারণ মানুষকে বলব, আপনারা শান্ত থাকুন। নয়ত ওকে ধরা কঠিন হবে।”
তবে কেবল কুমিরমারীতে নয়, বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়েছে, গোসাবা ব্লকের অন্তর্গত লাহিড়িপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গ্রামের বিধান কলোনিতে। শুক্রবারই চর এলাকায় একাধিক পায়ের ছাপ দেখতে পান তাঁরা। মৎস্যজীবীরাই গ্রামের দিকে থাকা গোমর নদীর চর ধরে এগোতে থাকেন। সেখানে পায়ের ছাপ দেখতে পান বলে দাবি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন বনকর্মীরাও।
বন দফতর গ্রামের দিকে নাইলনের জাল দিয়ে ঘিরে ফেলেন। যাতে নদী সাঁতরে আবার নিজের জঙ্গলে ফেরত যেতে পারে বাঘটি, সেই ব্যবস্থা করা হয়। সজনেখালি, বসিরহাট রেঞ্জের সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের আরও বন কর্মীরা সেখানে চলে যান। ছিলেন সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের উপ ক্ষেত্র অধিকর্তা জোন্স জাস্টিন।
সপ্তাহ খানেকও পেরোয়নি। ৬ দিন ধরে বাঘবন্দির খেলার সাক্ষী ছিলেন সুন্দরবনবাসী। বাঘকে ধরতে গিয়ে গত ছ’দিনে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি বনকর্মীদের। ট্রাঙ্কুলাইজার নিয়ে বনকর্মীদের অভিযান, পিয়ালি নদী থেকে দমকলকর্মীদের জল স্প্রে, জঙ্গলে লঙ্কা বোমা নিক্ষেপ- কী না করা হয়েছে! কিন্তু বাঘ ছিল তার নিজের অবস্থানেই। বন দফতরের কর্মীরা তাকে নাগালে পাননি। শোনা যাচ্ছিল তার গর্জন, চোখে পড়ছিল পায়ের ছাপ, শুধু দেখা দিচ্ছিল না সে-ই।
কয়েকদিন ধরে অভুক্ত ছিল বাঘটি। তাই সে যেখানে ছিল, সেখান থেকে বের হচ্ছিল না। বাঘটির দেখা মিলতেই পরপর দুটি ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়া হয়। গুলি করার কিছুসময় পরেই নিস্তেজ হয়ে পড়ে বাঘটি। পুরোপুরি নিস্তেজ হয়ে গেলে ডোরাকাটাকে পরীক্ষা করতে যান পশু চিকিৎসক ও অন্যান্য উচ্চ পদস্থ কর্মীরা।
গত বুধবার সাতসকালে বনদফতরের তরফে রামগঙ্গা রেঞ্জের অন্তর্গত ঢুলিভাসানি ৪ নম্বর জঙ্গলেরামগঙ্গা রেঞ্জের জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয় কুলতলির লোকালয়ে চলে আসা চালা বাঘটিকে।