কুলতলি: দু’দিকে ঘন জঙ্গল। মাঝখান দিয়ে সরু পিচ ঢালা রাস্তা। সেই রাস্তা দিয়েই সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ বাইক নিয়ে যাচ্ছিল দুই বন্ধু। একে শীতের সন্ধে, তারপর হু হু করে বইছে হাওয়া। কুয়াশাও আবার দোসর। এই অবস্থায় আচমকা দেখা গেল জঙ্গল থেকে বেরলো কিছু। কিন্তু কী? বাইকটা ধীর গতিতে একটু এগোতেই খাড়া হয়ে গেল শরীরের লোম। এ যে বাঘ! তাও আবার রয়্যাল বেঙ্গল। তারপরই ঘটল অদ্ভুত ঘটনা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলি ব্লকের অন্তর্গত মৈপীঠ কোস্টাল থানার গুড়গুঁড়িয়া-ভুবনেশ্বরী গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্য গুড়গুড়িয়া গ্রাম। সেখানেই বাঘের আতঙ্কে ঘুম উড়েছে এলাকাবাসীর। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, সুন্দরবনের মাকড়ি নদীর পার হয়ে লোকালয়ে চলে আসে একটি বাঘ। সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ বাইক নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁদের সামনে পড়ে যায় বাঘটি। ভয়ে-আতঙ্কে চিৎকার জুড়ে দেন তাঁরা। মনে-মনে ধরেই নিয়ে ছিলেন এই বুঝি দক্ষিণরায় ঝাঁপিয়ে পড়ল তাঁদের উপর। আর প্রাণটাই বুঝি গেল। মনে-মনে তখন ভরসা যেন ভগবান। বাঘ ঝাঁপিয়ে পড়ার আগেই চিৎকার জুড়ে দিলেন ওই বাইক আরোহীরা। বললেন, “বাঘ পড়েছে। বাঁচাও…।” তাঁদের চিৎকারে এলাকার লোকজন বাড়ি থেকে লাঠি নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন বাড়ি থেকে। ভয়ে ততক্ষণে জঙ্গলে ঢুকে গিয়েছে দক্ষিণরায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে একজন বলেই ফেললেন, “কপাল জোরে বেঁচে গিয়েছে। বাঘটা কিছু করতে পারেনি। অদ্ভুত ঘটনা। একে শীতের রাত…। যদি এই ভাবে চিৎকার না করতে শুনতে পেতাম না।”
এ দিকে, বনদফতরের কাছে ততক্ষণে পৌঁছে গিয়েছে এলাকায় বাঘ ঢোকার খবর। তড়িঘড়ি বনদফতরের লোকজন ঘটনাস্থলে চলে আস। এলাকায় আসেন পুলিশ কর্মীরাও। মশাল জ্বালিয়ে চলছে রাত পর্যন্ত চলে প্রহরা। সেই সঙ্গে বাজি-পটকা ফাটিয়ে বাঘকে তাড়ানো চেষ্টাও করা হয়। তবে বাঘ আদৌ গিয়েছে কি না তা জানা যায়নি। এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক।
গ্রামের এক মহিলা বলেন, “খুবই ভয়ে আছি। আতঙ্কও লাগছে। বুঝতে পারছি না তো বাঘটা লুকিয়ে কোথাও আছে নাকি চলে গিয়েছে? তারপর ওই ছেলেগুলোর কথা শুনেছি। ওরা তো কপালের জোরে বেঁচে গেল। রাত হলে বাইরে বেরতে ভয় লাগছে।”