বজবজ : কারও চারতলা, কারও পাঁচতলা, কারও বাড়ি মার্বেলে মোড়া, কারও আবার কাচে ঢাকা। রাজ্য জুড়ে তৃণমূল নেতাদের বাড়ি নিয়ে চর্চা হয়েছে বারবার। কাউন্সিলর বা বিধায়কদের বাড়ি যেন বিলাসবহুল প্রাসাদ। আর এবার অবৈধভাবে নির্মাণের অভিযোগে ভাঙা পড়ল খোদ তৃণমূল কাউন্সিলরের বাড়ি। একসময় বজবজ পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন শেখ লুৎফর হোসেন। বর্তমানে তিনি কাউন্সিলর। রাস্তার ধারে কার্যত ড্রেনের ওপর কীভাবে বহুতল তৈরি করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন স্থানীয় এক মহিলা। সেই মামলায় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের তরফে ওই বাড়ি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। অবশেষে মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হল সেই বাড়ি ভাঙার ক কাজ।
বজবজ থানার পুলিশ এবং পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে বজবজ পুরসভার প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান তথা বর্তমান ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শেখ লুৎফর হোসেনের নির্মীয়মাণ পাঁচতলা বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। ওই বাড়ি তৈরি নিয়ে অভিযোগ তুলে এক ভদ্রমহিলা কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করেন। সেই জনস্বার্থ মামলার রায়ে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব প্রথমে বিল্ডিংটি সিলকরার নির্দেশ দেন। সমস্ত প্রকার নির্মাণে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয় প্রধান বিচারপতি ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চের তরফে। পরে বজবজ পুরসভাকে ওই বিল্ডিংটি ভাঙার নির্দেশ দেয় আদালত। তবে কাউন্সিলর একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় পরিচয় গোপন রেখেছেন মামলাকারী।
আদালত নির্দেশ দেওয়ার পর পুরসভা নির্মাণ ভাঙার জন্য ১০ লক্ষ টাকা দেয়। মঙ্গলবার পুরসভার তত্ত্বাবধানে অবৈধ ওই নির্মাণ ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। পুরসভার বর্তমান তৃণমূল চেয়ারম্যান গৌতম দাস গুপ্ত আমাদের প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন, আদালতের নির্দেশ মেনে এই নির্মীয়মাণ বাড়িটি ভাঙার কাজ হাতে নিয়েছে পুরসভা। পাশাপাশি তিনি এও জানান এই বাড়িটি তৈরি করার জন্য পুরসভার রেকর্ড অনুযায়ী কোনও প্রকার অনুমতি নেওয়া হয়নি। প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান শেখ লুৎফর হোসেন বাড়িতে না থাকায় তাঁর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি তাঁর আত্মীয়ের বাড়িতে রয়েছেন তাই কোনও মন্তব্য করতে চান না। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে কোনও প্রকার অনুমতি ছাড়াই বজবজ ট্রাঙ্ক রোড সংলগ্ন কয়লা সড়কে এহেন প্রাসাদ প্রতিম বাড়ি বিনা অনুমতিতে কীভাবে তৈরি হচ্ছিল? আর তা কেনই বা সকলের দৃষ্টি গোচর হল না?
শাসক দলের নেতাদের বিপুল সম্পত্তি নিয়ে যখন চর্চা চলছে, তখন এরকম একটি ঘটনায় বিজেপি শমীক ভট্টাচার্য দাবি করেন, তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণেই এ ভাবে বাড়ি ভাঙা হয়েছে। দলে প্রতিপত্তি কমেছে বলই ভাঙা হল নেতার বাড়ি। এই প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, সব রাজ্যে একই অবস্থা। বাইপাস কিংবা বেলেঘাটা অঞ্চলে বহুতল তৈরি হওয়ায় জলস্তর নেমে যাচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।