বাসন্তী: বুথ বাসন্তীর ফুলমালঞ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়। বেলা সাড়ে বারোটা। আচমকাই বোমাবাজি। ভোটাররা থতমতো। বুথের সামনেই লুটিয়ে পড়লেন তৃণমূল কর্মী আনিসুর রহমান। তাঁর বৌদি তৃণমূলের প্রার্থী। বোমায় ঝলসে যায় তাঁর মাথার একপাশ। এই শুরু। বুথের ভিতরে তখন পোলিং অফিসাররা কিছুই সেভাবে বুঝে উঠতে পারেননি। মুহূর্তের মধ্যেই শয়ে শয়ে লোক, লাগাতার বোমাবাজি। প্রিসাইডিং অফিসার কার্যত মৃত্যু মুখে দাঁড়িয়ে। বাসন্তী ব্লকের ফুল মালঞ্চ গ্রাম পঞ্চায়েতের ফুল মালঞ্চ প্রাথমিক স্কুলে দুটি বুথ ১১৩ ও ১০৩। সেখানকার প্রিসাইডিং অফিসারের কথায় উঠে এল বাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচনের বিপন্নতার এক খণ্ড চিত্র।
মিনিট পনেরোর একটা ঘটনা। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২ টা থেকে পৌনে একটার মধ্যে। পোলিং অফিসারদের বয়ান অনুযায়ী, সকালে নির্বাচনপর্ব মোটামুটি ঠিকঠাকই চলছিল। আচমকাই সাড়ে ১২ টা নাগাদ এক দল দুষ্কৃতী ঢুকে পড়ে বুথের মধ্যে। প্রথমে বুথের ‘প্রবেশ’ ও ‘বাহির’ পথ বন্ধ করে দেয়। বুথে ঢুকে পড়ে এবং ব্যালট ছিনতাই করে ছাপ্পা দেওয়া শুরু করে। এরপর বুথের ভিতরেই শুরু হয় বোমাবাজি। কোনও ক্রমে একটি দরজা খুলে বাথরুমে গিয়ে লুকিয়ে পড়েন প্রিসাইডিং অফিসার। হাড়হিম ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি।
বুথের ভিতরেই পড়েছিল বাজারের ব্যাগ। তার মধ্যে তুষ রাখা। তাতেই বোমা রাখা ছিল। এক পোলিং অফিসার বলেন, “আরে ডিউটিই করতে এসেছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে নতুন করে জীবন পেলাম। এক্সিট ও এন্ট্রান্স আটকে ভিতরে বোমাবাজি চলছিল। আমরা কয়েকজন পোলিং অফিসার। কোনওভাবে দরজা খুলে পালিয়ে যাই। ঘটনার সূত্রপাত একদল এসে কোনওভাবে কাগজ ছিড়ে ফেলতে থাকে। অপর দল বোমাবাজি শুরু করল। এক জন জওয়ান ছিলেন। তিনিও মৃত্যুভয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন।”
ঘটনার কথা বলতে গিয়ে রীতিমতো কেঁদে ফেললেন এক পোলিং অফিসার। তিনি বললেন, “আমরা বারবার ফোন করছি। একজন সেক্টর অফিসার ফোন পর্যন্ত ধরেননি। আমাদের প্রাণ সংশয়। আমাদের বলছে বাহিনী যাবে, পুলিশ যাবে। কিন্তু কতক্ষণে আসতেন? আমার মারা যাওয়ার পর?” তিনি আরও কোনও কথা বলার মতো পরিস্থিতিতেই ছিলেন না। প্রশ্ন উঠছে, তাঁরা তো সরকারি কর্মী। এসেছিলেন ভোটের ডিউটিতে। তাঁদের কেন এভাবে মৃত্যুমুখে দাঁড়াতে হবে?