করোনায় মৃতদের দেহ সৎকারে রাতভর তদারকি পুরসভার চেয়ারম্যানের, সঙ্গী কাউন্সিলররা

সৈকত দাস |

Jun 05, 2021 | 12:01 AM

নিজে সুগার, ইউরিক অ্যাসিড ও হৃদযন্ত্রের অসুখ শরীরে বহন করেই মৃতদের পরম আত্মীয়ের বেশে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে শবদাহ করিয়ে চলেছেন পৌরপতি সন্দীপ বিশ্বাস। প্রিয়জন হারানোর বেদনার মাঝেই তাঁকে কুর্নিশ জানিয়েছেন মৃতদের পরিজনেরা।

করোনায় মৃতদের দেহ সৎকারে রাতভর তদারকি পুরসভার চেয়ারম্যানের, সঙ্গী কাউন্সিলররা
নিজস্ব চিত্র

Follow Us

রায়গঞ্জ: এ যেন যুদ্ধে অবতীর্ণ রাজা। রাজা ময়দানে থাকলে সৈনিকদের মনোবল বাড়ে এটাই কথিত। ঠিক তেমনই, কোভিডে মৃতদেহ দাহকার্যে নিযুক্ত কর্মীদের মনোবল বাড়াতে, তাঁদের সাহস যোগাতে কাজে নেমে পড়ছেন রায়গঞ্জের পুরপ্রধান। মানব সেবার কাছে হার মানছে ব্যক্তিগত শারীরিক অসুস্থতা। সুগার, ইউরিক অ্যাসিড ও হৃদযন্ত্রের অসুখ নিয়ে মৃতদের পরম আত্মীয়ের বেশে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে শবদাহ করিয়ে চলেছেন পৌরপতি সন্দীপ বিশ্বাস। প্রিয়জন হারানোর বেদনার মাঝেই তাঁকে কুর্নিশ জানিয়েছেন মৃতদের পরিজনেরা। ‘সাহস পাচ্ছি’ বলে মন্তব্য শ্মশান কর্মীদেরও।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তেই জেলাতেও বেড়েছে মৃতের সংখ্যা। আর তাতে রায়গঞ্জের বন্দর শ্মশানের বৈদ্যুতিক চুল্লিতে চলছে দাহ কাজ। দৈনিক রাত দশটা থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত সেখানে কোভিডে মৃত্যু দেহের সৎকার হয়। সেই কাজে নিযুক্ত পৌর কর্মচারীরা যাতে সংক্রমণের ভয়, আশঙ্কায় দূরে না থাকেন, তাদের কাজে যাতে কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা না হয়, তার জন্য নিজে দাঁড়িয়ে থেকে এই দাহকাজ সম্পন্ন করাচ্ছেন পৌরপিতা সন্দীপ বিশ্বাস।

আর পুরপিতার এই উপস্থিতিই তাঁদের মনের জোর বলে জানালেন শ্মশানের কর্মীরা। পাশাপাশি এই সময়ে না ফেরার দেশে চলে যাওয়া আত্মীয়ের সৎকাজ নিজেরা করতে না পারলেও পুরপিতার উপস্থিতিতে পুরসভার কর্মীদের মাধ্যমে প্রিয়জনের দাহকাজ সুষ্ঠুভাবে হওয়ায় খুশি মানুষজন। রায়গঞ্জ পুরসভা ও পৌরপতিকে কুর্নিশ জানিয়েছেন মৃতদের পরিবারের লোকেরাও।

নিজের শারিরিক অসুস্থতা বা সুগার, প্রেসার, ইউরিক অ্যাসিডের মত রোগ শরীরে বহন করেই অকুতোভয় পৌরপিতা সন্দীপ রাত জেগে শ্মশান কর্মীদের পাশে থাকছেন। তার কথায়, “এতে আমাদের কর্মীরা যাঁরা কোভিডের ডেডবডি দাহ করছেন তারা ভরসা পান। রায়গঞ্জ তথা বাইরে থেকে যারা মৃতদের আত্মীয় পরিজনেরা আসছেন তাঁরাও ভরসা পাচ্ছেন। এতদিন ধরে আমরা রয়েছি আমাদের কোনও সমস্যা হয়নি। আমরা মানুষের জন্য কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।”

দাহকাজে নিযুক্ত পৌর কর্মীরা বলছেন, রাজা যুদ্ধে থাকলে সৈনিকের মনের জোর বাড়ে, আমাদেরও সেরকমই। চেয়ারম্যান সাহেব ও অন্যান্য কাউন্সিলর আমাদের সাহস দিচ্ছেন। চেয়ারম্যান সাহেব নিজে থেকে সবটা দেখাশোনা করছেন। এটা আমাদের বাড়তি পাওনা।

“পুরসভার চেয়ারম্যান নিজে উপস্থিত থাকেন এবং এভাবে সৎকারের কাজে সাহায্য করছেন, এটা আমরা অন্য কোথাও দেখিনি। উনি যেন আমাদের সবার আত্মীয়”, জানালেন মৃতদের আত্মীয়রাও।

Next Article