চোপড়া: রাস্তায় ফেলে এক মহিলা ও এক পুুরুষকে লাঠির গোছা দিয়ে পেটাচ্ছেন ষণ্ডা মার্কা এক যুবক। আর দাঁড়িয়ে দেখছেন সকলে। চোপড়ার ভাইরাল ভিডিয়োর (যে ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি TV9 বাংলা) বিভৎসতা দেখে কেঁপে উঠেছে গোটা বাংলা। জল গড়িয়েছে জাতীয় স্তরে। যিনি মূল অভিযুক্ত, সেই তৃণমূল নেতা জেসিবি বিধায়ক হামিদুল রহমানের ঘনিষ্ঠ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা যখন ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’, তখন তাঁরই বিধায়ক এই বাংলাতেই আক্রান্ত নির্যাতিত মহিলার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। আক্রান্ত মহিলাকে সাফ বলে দিলেন, ‘তিনি দুশ্চিত্র।’ শনিবার চোপড়ার লক্ষ্মীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনার সময়ে জেসিবি ওরফে তাজমুলের কীর্তির ভিডিয়ো মোবাইলে বন্দি করেছিলেন এক ব্যক্তি। রবিবার সকালে তা প্রকাশ্যে আসে। ‘তালিবানি কায়দায়’ মারধরের সেই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসা মাত্রই কেঁপে ওঠে গোটা বাংলা। প্রতিক্রিয়া জানতে রবিবার সকালেই TV9 বাংলার তরফে ফোন করা হয়েছিল বিধায়ক হামিদুল রহমানকে। তিনি তখন গোটা বিষয়কে ‘তিলকে তাল বানানো’ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন। বিকালে নিজেই সাংবাদিক বৈঠক করেন। আর সেখানে ঘটনার বিষয়ে মুখ খুলে আরও বিস্ফোরক মন্তব্য করে ফেলেন বিধায়ক। রীতিমতো ‘নীতি পুলিশের’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।
বিধায়ক বলেন, “সমাজকে খারাপ করছিল। তাই গ্রামে সালিশি বসানো হয়েছিল। তাই শাসন করতে গিয়েছিল। কিন্তু যেটা করেছে, একটু বেশি বেশি করে দিয়েছে। তার জন্য আমরাও দুঃখিত। আগামী দিনে যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে, তার চেষ্টা করছি। অন্যায়টা মেয়েটাও তো করেছে না! নিজের স্বামী, নিজের সন্তানকে বাদ দিয়ে দুশ্চিত্র হয়েছে।”
রবিবার যখন TV9 বাংলার তরফে বিধায়ক হামিদুলকে ফোন করা হয়, তিনি বলেছিলেন, “আমি হোয়াটসঅ্যাপে এই ভিডিয়ো দেখেছি। ১ ঘণ্টা আগে ভিডিয়োটা দেখেছিলাম।” উল্লেখ্য, তখনও কিন্তু তাঁর ঘনিষ্ঠ জেসিবি ঘুরে বেড়াচ্ছে খুলে আম। বিধায়ক বলেছিলেন, “আমি জেসিবি-দের ডেকে পাঠিয়েছি। শুনতে হবে কী হয়েছিল আসলে। সবাই তৃণমূলের।” TV9 বাংলার প্রতিনিধি প্রশ্ন করেছিলেন, বিধায়ক কী পদক্ষেপ করেছেন? সে প্রশ্ন করতেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেছিলেন হামিদুল। তিনি বলেন, “তিলকে তাল করছেন কেন?”
রবিবার ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পর গোটা বাংলায় যখন শোরগোল পড়ে গিয়েছে, স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে জেসিবি-কে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বিধায়ক ঘনিষ্ঠ জেসিবি-র বিরুদ্ধে তালিবানি কায়দায় এক মহিলাকে মারধরের অভিযোগ উঠছে। আর সেখানে বিধায়ক প্রশ্ন তুলেছেন আক্রান্ত মহিলার চরিত্র নিয়েই?
বিধায়কের এই নীতি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সমাজকর্মীদের একাংশ। গোটা বিষয়টি এখন জাতীয় স্তরে পৌঁছে গিয়েছে। বিজেপি নেতা অমিত মালব্য টুইট করেছেন। বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, “বাংলায় এ ধরনের অজস্র ঘটনা ঘটে। কিন্তু অপরাধগুলোকে চেপে দেওয়া হয়।”