লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় ভোট হবে উত্তর দিনাজপুরে। তার আগে আজ, রায়গঞ্জে তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণ কল্যাণীর প্রচারে উপস্থিত হন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সভামঞ্চ থেকে বিজেপিকে কড়া বার্তা দেন তিনি।
বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মমতা বলেন, ‘বিধানসভায় বলেছিল ২০০ পার করবে। ৭৫-এই থেমে গিয়েছিল। এবার বলছে ৪০০ পার করবে। আমি বলছি ২০০-ও পার হবে না। সার্ভে রিপোর্টে বিশ্বাস করবেন না। বিজেপির টাকায় ওই সার্ভে হয়।’
‘আপনারা তো পুরনো ট্রেনকে রঙ করে বলছেন, সবথেকে বেশি গতি। দুরন্ত কোথায় গেল?’ বিজেপিকে প্রশ্ন মমতার। তিনি বলেন, ‘রাজ্য জমি দেয়, অর্ধেক টাকা দেয়। ওরা ২৫ শতাংশ দেয়, আর বলে ঘরে ঘরে আমরা জল দিয়েছি।’ হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, নদীর ওপর সেতু, মহিলা পুলিশ স্টেশন সহ জেলার উন্নয়নের কথা উল্লেখ করেন মমতা। তিনি উল্লেখ করেন, ইসলামপুর থেকে দক্ষিণবঙ্গে যেতে এবার মাত্র ৬ ঘণ্টা লাগবে, তৈরি হচ্ছে নতুন রাস্তা।
রাম নবমী প্রসঙ্গে মমতা বলেন, “ডিআইজি-কে বদল করলেন কেন? যে লোকটা জেলাটাকে চিনত, তাকে সরালেন কেন? এগুলো খুব স্পর্শকাতর জেলা। আমাদের অনেক কষ্ট করে সামলাতে হয়। মিছিল তো আমাদের লোকেরাও করেছে। এটা আপনাদের একার সম্পত্তি নয়। মিছিল তো প্রার্থনার জন্য, শান্তির জন্য করি।”
মমতা বলেন, “কে আক্রমণ করার অধিকার দিয়েছে? মা দুর্গাই অধিকার দেয়নি। মা দুর্গা অসুর বধ করেছিল, আপনাদের মতো অসুরদের বধ করার জন্য মা দুর্গার প্রয়োজন আছে। ১৯ জন আহত হয়েছেন। ওসি আহত হয়েছেন। আমার কাছে ছবি আছে। আমি উত্তেজনা ছড়াতে চাই না। রাম নবমীর আগের দিন কেন হঠাৎ করে ডিআইজি-কে সরিয়ে দিলেন? এই পরিকল্পনার জন্য?” এরপরই নিজের মোবাইলটি চেয়ে নেন তিনি। ছবি দেখিয়ে বলেন, ‘এই ছবিটা কার? মাথা ফাটিয়ে দিলেন আপনারা, মারলেন আপনারা। আর কমিশনে গিয়ে বলছেন তৃণমূল আক্রমণ করেছে। বিজেপি বিধায়ক কেন গ্রেফতার হবেন না?’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “মুর্শিদাবাদের ঘটনা আমি যদি বলি পরিকল্পিত! সংখ্যালঘুদের নামে মিথ্যা কথা বলতে বলা হয়েছে। পরশু দিনের ঘটনা কারা ঘটিয়েছিল? আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি বিজেপি। একই জায়গায় পরের দিন গিয়ে প্রথম আক্রমণ করল কারা? বিজেপির বিধায়ক দলবদল নিয়ে গেলেন। রামনবমী মিছিল করতে গিয়েছেন, অস্ত্র নিয়ে যেতে আপনাকে কে বলেছে?”
মিঠুন চক্রবর্তীকে আমি রাজ্যসভার এমপি করেছিলা। জানতাম না বাংলার আর এক জন বড় গদ্দার। আরএসএস অফিসে গিয়ে মাথা নীচু করে দিয়ে এসেছিল, শুধু নিজের ছেলেকে বাঁচানোর জন্য। ভয়ে আরএসএস অফিসে চলে গিয়েছিল। যাঁরা দো আঁশলা, যাঁদের আদর্শ নেই, তাঁদের আমি মানুষ বলে মনে করি না: মমতা।
রাজ্যে প্রচারে আসছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তাঁকে নিশানা করে মমতা বলেন, ‘উনি নাকি পাহাড়ে আসছেন ভাষণ দিতে। নিজের রাজ্যটাকে আগে সামলাও। উত্তর প্রদেশে তো কেউ কথা বলতে পারে না।’
বিজেপিকে কড়া বার্তা দিয়ে মমতা বলেন, “বিজেপির এত বড় সাহস, বলছে তিন মাস বাদে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ করে দেব। আমি বলি, কে হরিদাস? সাহস থাকলে দেখান। মায়ের আঁচলের কত দাম জানেন? আপনারা সারাজীবন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পাবেন, এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশ্বাস। মা লক্ষ্মীর অধিকার কাড়তে এসেছে? লজ্জা করে না?”
এরপরই মমতা বলেন, “মেয়েদের সম্মান জানাও। বিলকিস আজও কেঁদে কেঁদে ঘুরে বেড়াচ্ছে। হাথরাসের ঘটনার কোনও বিচার হয়েছে, হকির টিমের কোনও বিচার হয়েছে?”
‘বাংলায় বিজেপির সঙ্গে তৃণমূল একা লড়ছে। সিপিএম এখানে বিজেপির হয়ে কাজ করছে, কংগ্রেসও বিজেপির হয়ে কাজ করছে, মনে রাখবেন।’ ইন্ডিয়া জোট নিয়ে আরও একবার ব্যাখ্যা দিলেন মমতা। পাশাপাশি বিজেপিকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘বাংলায় ভোট পাবে বলে আসছ। কেন বাংলার মানুষ ভোট দেবে? তোমরা বাংলার জন্য একটা কাজ করেছ?’