Political Alliance: ‘রামধনু’ জোটের কাছে ফের গোহারা তৃণমূল, পঞ্চায়েত ভোটের আগে নতুন সমীকরণ বাম-কং-বিজেপি জোট?

Rupak Ghosh | Edited By: অংশুমান গোস্বামী

Apr 03, 2023 | 12:20 PM

এ বছরই কোলাঘাট, এগরার সমবায় নির্বাচনে বাম, বিজেপি, কংগ্রেসের জোট হয়েছিল। সেই জোটের কাছে সমবায় নির্বাচনে পরাস্ত হয় তৃণমূল।

Political Alliance: রামধনু জোটের কাছে ফের গোহারা তৃণমূল, পঞ্চায়েত ভোটের আগে নতুন সমীকরণ বাম-কং-বিজেপি জোট?
নির্বাচনে জয়ে উচ্ছ্বাস

Follow Us

ইটাহার: বাম, কংগ্রেস ও বিজেপির জোট সমীকরণ বদলে দিল উত্তর দিনাজপুরে। বিজেপি, বাম ও কংগ্রেসের জোট শিক্ষকদের কো-অপারেটিভ নির্বাচনে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে ৯-০ ভোটে হারালো। ত্রিমুখী জোটকে অশুভ আঁতাত এবং রামধনু জোট বলে কটাক্ষ ঘাসফুলের। বিজেপির পাল্টা দাবি, মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে তৃণমূল। এই ফল তারই প্রতিচ্ছবি বলে দাবি গেরুয়াশিবিরের। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়িয়েছে জেলা জুড়ে। উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারের প্রাইমারি টিচার্স এমপ্লয়িজ ক্রেডিট কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড-এর নির্বাচন ছিল রবিবার। ইটাহার বিডিও অফিসের পাশেই একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছিল নির্বাচন। মোট ৯টি আসনের লড়াইয়ে শাসক তৃণমূল কংগ্রেস সব কটিতেই প্রার্থী দেয়। অন্যদিকে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্যমঞ্চের তরফে ৯ টি আসনে প্রার্থী দেওয়া হয়। এই ৯টি আসনেই জোটের কাছে পরাস্ত হতে হয়েছে ঘাসফুল শিবিরকে। তবে স্থানীয় নির্বাচনে বাম, কংগ্রেস ও বিজেপির জোটের কাছে ঘাসফুল শিবিরের হার এই প্রথম নয়। সাম্প্রতিক অতীতে পশ্চিম মেদিনীপুরের এগরা, পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটে সমবায় নির্বাচনে রাম-বাম জোটের কাছে পরাস্ত হয়ে হয়েছিল তৃণমূলকে।

ফল ঘোষণার আগে থেকেই তৃণমূল শিক্ষক ঐক্যমঞ্চকে রাম, বাম, কংগ্রেসের জোট বলে কটাক্ষ করেছিল। বিরোধীরা কেউ প্রকাশ্যে জোটের কথা স্বীকারও করেননি। তবে কান পাতলেই শোনা গিয়েছে, ঐক্য মঞ্চের ৯ টি আসনের মধ্যে ৫টি আসনে প্রার্থী দেয় বিজেপি এবং বামেরা প্রার্থী দেয় ৪টি আসনে। আর এই ঐক্য মঞ্চকে সমর্থন করে কংগ্রেস। রবিবার রাতে গণনা শেষে তৃণমূল কংগ্রেসকে ৯-০ আসনে হারিয়ে, প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য মঞ্চের প্রার্থীরা জয়ী হয়।

এই জয় নিয়ে নির্বাচনের প্রার্থী তথা বাম শিক্ষক সংগঠনের নেতা অজয় চক্রবর্তী বলেছেন, “এটা প্রাথমিক শিক্ষকদের ঐক্য। এখানে মানুষের জোট হয়েছিল। রাজ্যে সুষ্ঠ ভাবে ভোট হলে কোনও দল নয়, মানুষের জয় হবে।” উত্তর দিনাজপুর বিজেপি জেলা সভাপতি বাসুদেব সরকার বলেছেন, “শাসক কী বলছেন তা খুব বড় নয়। জনগণ শাসক সম্পর্কে কী ভাবছে সেটাই বড় কথা। মানুষ শাসক তৃণমূলকে প্রত্যাখ্যান করছে। সে জন্যই উত্তর দিনাজপুরের লোকাল বডি নির্বাচনে শাসক দল পর পর হারছে।” পক্ষান্তরে জোটের কথাও স্বীকার করেছেন তিনি।

এই ভোটের ফল নিয়ে ইটাহার তৃণমূল কংগ্রেস ব্লক সহ সভাপতি কার্তিক দাস বলেছেন, “এটা অশুভ শক্তির জয়। রাজ্যের বিরোধীদের অশুভ আঁতাত। পঞ্চায়েত ভোটে এর কোনও ফল পড়বে না।” উত্তর দিনাজপুরে প্রাথমিক শিক্ষকদের কো-অপারেটিভ নির্বাচনের ঐক্যমঞ্চের কাছে শাসকের মুখ থুবড়ে পড়া উত্তরেও শাসকের জমি আলগা হচ্ছে বলেই অভিমত রাজনৈতিক মহলের। প্রাইমারি টিচার্স কো-অপারেটিভ সোসাইটি নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ পেতেই ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা যায় জোট সমর্থকদের মধ্যে। তবে নির্বাচন ও গণনার সময়ে বারেবারে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় ইটাহার প্রাথমিক স্কুল চত্বরে। জোট সমর্থকদের লক্ষ্য করে ইট-পাথর, বোমা ছোড়ার অভিযোগও ওঠে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। দুষ্কৃতীদের ছোড়া ইটের ঘায়ে গুরুতর জখম হন এক সাংবাদিকও। পরিস্থিতি সামাল দিতে মজুত ছিল ইটাহার থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী।

সাগরদিঘি উপনির্বাচনে হেরে যায় বিজেপি। বাম সমর্থিক কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাসের কাছে হেরেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। সেই ভোটে সরাসরি বিজেপির সঙ্গে জোট হয়নি বাম-কংগ্রেসের। যদিও বিজেপি নেতারা সাগরদিঘিতে প্রচারে গিয়ে বলেছিলেন, আমাদের ভোট না দিলে তৃণমূলকেও দেবেন না। সাগরদিঘিতে বিজেপির জেতার সম্ভাবনা ছিল না। লড়াই ছিল মূলত তৃণমূল ও বাম-কংগ্রেস জোটের। কিন্তু বিজেপি নেতাদের এই ধরনের বক্তব্য পক্ষান্তরে বাম-কংগ্রেস জোটকেই সমর্থনের বার্তা দিয়েছিল বলে মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের।

এ বছরই কোলাঘাট, এগরার সমবায় নির্বাচনে বাম, বিজেপি, কংগ্রেসের জোট হয়েছিল। সেই জোটের কাছে সমবায় নির্বাচনে পরাস্ত হয় তৃণমূল। যদিও স্থানীয় নির্বাচনে বিজেপি ও বামেদের এই জোটে বাম রাজ্য নেতৃত্বের অনুমোদন রয়েছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ দিন কয়েক আগে টিভি৯ বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু জানিয়েছিলেন, কোনও সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে জোট করবে না বামেরা। নাম না নিলেও বিজেপির প্রসঙ্গেই এই কথা বলেছিলেন বিমান। কিন্তু তা সত্ত্বেও উত্তর দিনাজপুর সাক্ষী থাকল জোটের। তাহলে কী স্থানীয় স্তরে পৌঁছচ্ছে না রাজ্য নেতৃত্বের বার্তা? না স্থানীয় নেতারা তৃণমূলকে হারাতে জোটকেই সঠিক রাস্তা বলে মনে করছেন?

Next Article