ভাঙছে বাড়ি-বাঁধ, ব্রিজের ওপর দিয়েই বইছে নদী, ভাসছে হাসপাতাল! জল-যন্ত্রণায় ত্রস্ত গোটা বাংলা
Water Logging Picture: কোথাও ভাঙল বাড়ি, কোথাও রাস্তায় ধস, কোথাও আবার হাসপাতালের ভিতরেই ঢুকল জল, বিধ্বস্ত রোগীরা।
TV9 বাংলা ব্যুরো: নিম্নচাপের বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত শহর থেকে জেলা, উত্তর থেকে দক্ষিণ! কোথাও ভাঙল বাড়ি, কোথাও রাস্তায় ধস, কোথাও আবার হাসপাতালের ভিতরেই ঢুকল জল, বিধ্বস্ত রোগীরা। দুর্ভোগের বাংলার খণ্ডচিত্র একনজরে।
উত্তর ২৪ পরগনা: (বারাসত); বারাসত পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় জলমগ্ন হয়ে রয়েছে। দফায় দফায় মুষলধারে বৃষ্টির ফলে বারাসত পুরো এলাকার হৃদয়পুর, আপনপল্লি, নিবেদিতা পার্ক, শরৎপল্লি, রামকৃষ্ণ পল্লি, বালক সঙ্ঘ, রথ তলা, কোকো বাগান, ইন্দ্রপ্রস্থ, বিজয়নগর এই সমস্ত এলাকায় জল জমে রয়েছে ।
উত্তর ২৪ পরগনা (বসিরহাট): বসিরহাট মহকুমার সুন্দরবনের সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ, হাড়োয়া, মিনাখাঁ সহ ৬টি ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত। একদিকে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে। অন্যদিকে চাষের জমিতে জল ঢুকে গিয়ে বর্ষাকালীন সব্জি যেমন কাঁচালঙ্কা, উচ্ছে, কুমড়ো ও বেগুন সহ বিভিন্ন রকমের সব্জি জলের তলায়। ইয়াশ বিপর্যয়ের দু’মাসের মধ্যেই আবার নতুন করে সুন্দরবনের মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা: (গোসাবা): ইয়াসের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই আবার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে জেরবার গোসাবাবাসীl ইয়াসের ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পুনর্গঠনের কাজে যখন গতি এসেছিল সরকারি তরফে, ঠিক তখনই নিম্নচাপের লাগাতার বৃষ্টিতে জলবন্দি খোদ প্রশাসনিক কর্তারা। গোসাবার প্রশাসনিক কেন্দ্র অর্থাৎ বিডিও অফিস চত্বরে জল থই থই অবস্থা। গ্রামবাসীদের অবস্থা তো শোচনীয়।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা: ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাসে দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূল এলাকার পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ। নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ কোস্টাল, পাথরপ্রতিমা, সাগর এলাকা থেকে মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বীরভূম: টানা বৃষ্টিতে বীরভূমের লাাভপুরে মাটির বাড়ি ভেঙে আহত একই পরিবারের বেশ কয়েকজন। লাভপুরের ইন্দাস হাটতলা বাসস্ট্যান্ডে সুনীল কর্মকারের মাটির বাড়ি ভেঙে যায়। ঘুমন্ত অবস্থাতেই চাপা পড়ে যান সুনীল কর্মকার, স্ত্রী, দুই ছেলে ও বাবা মা। সুনীলের বাবা ও মাকে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বৃদ্ধের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকিরা সকলেই আহত।
বাঁকুড়া: বাঁকুড়া ঝাড়গ্রাম ৯ নং রাজ্য সড়ক জলমগ্ন। খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না সিমলাপাল ব্রিজ। সেতুর ওপর দিয়েই কার্যত বইছে শিলাবতী নদী। বাঁকুড়া-সিমলাপালের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দারকেশ্বর, গন্ধেশ্বরী, কংসাবতী শিলাবতী, শালী, দামোদর সহ একাধিক নদীতে জল স্তর বেড়েছে। জঙ্গলমহল সংযোগকারী রাস্তা জলমগ্ন। বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসার প্রধান রাস্তাতেও হাঁটুর ওপর জল।
পশ্চিম মেদিনীপুর: শিলাবতী নদীর বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা দুই নম্বর ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা। চন্দ্রকোনা দু নম্বর ব্লকের বসনছোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের আকতকোলা ও যদুপুরে ভেঙে গিয়েছে শিলাবতী নদীর বাঁধ। আর এই বাঁধ ভাঙ্গার ফলে প্রায় ৫০ টিরও বেশি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছে ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরা।
পূর্ব মেদিনীপুর: ইয়াসের ক্ষত পূরণের আগেই ফের বিপর্যস্ত পূর্ব মেদিনীপুর। জোয়ার ও বৃষ্টির জমা জলে বিপর্যস্ত স্থানীয় বাসিন্দারা।
বর্ধমান: শহরের বাঁকা নদীর জল বাড়ায় সংলগ্ন বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড গত দু’দিন ধরেই জলমগ্ন ছিল। বৃহস্পতিবারের টানা বৃষ্টিপাতের ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেছে। বাঁকা নদীর জল বৃদ্ধি পাওয়ায় শহরের বিধানপল্লি, পীরবাহারাম, বাজেপ্রতাপপুর, লাকুর্ডি, ইছলাবাদ সহ বেশকিছু জায়গার মানুষ স্থানীয় স্কুল ও ক্লাবে আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়াও প্রবল বর্ষণে বর্ধমান শহরের বেশ কয়েকটি নীচু জায়গা জলমগ্ন হয়েছে। শহরের পার্কাস রোড, লস্করদিঘি এলাকা জলমগ্ন হয়েছে।
হাওড়া: জলে ভাসছে হাওড়া শহর। জল থইথই হাওড়ার একাধিক হাসপাতাল। জলবন্দি হাওড়ার মানুষ। জলে ভাসছে হাওড়ার সত্যবালা আইডি হাসপাতাল। হাসপাতালের নিচের তলা জলের তলায়। চেয়ার-টেবিল জল থই থই। মেন গেটও ভাসছে।
নিম্নচাপে বৃষ্টি (গত ২৪ ঘণ্টায়)
(চরম ভারী বর্ষণ) ডায়মন্ড হারবার: ২১৮
(অতি ভারী বর্ষণ) কালিম্পং: ১৫৭ আলিপুর: ১৫০ ব্যারাকপুর: ১৪৭ দমদম: ১৪৬ মেদিনীপুর: ১৩৪ সল্টলেক: ১২৩
(ভারী বর্ষণ) দার্জিলিং: ১০৭ বাঁকুড়া: ১০৬ হলদিয়া: ১০০ কলাইকুন্ডা: ৮৮ ক্যানিং: ৮৭ শ্রীনিকেতন: ৮৩ বর্ধমান: ৭৮ আসানসোল: ৭৪
* বৃষ্টির পরিমাণ মিলিমিটারে তথ্য: আলিপুর আবহাওয়া দফতর আরও পড়ুন: আর ক’দিন চলবে এই দুর্যোগ? স্পষ্ট করল আবহাওয়া দফতর