স্বাধীনতার মেয়াদ মাত্র ১০ বছর, ফের সেনাবাহিনীর হাতেই মায়ানমারের শাসন?
সেনাবাহিনীর তরফে অভিযোগ তোলা হয়, গত বছরের নভেম্বরের নির্বাচনে প্রায় এক কোটিরও বেশি ভোটে কারচুপি হয়েছে। ভোট সংখ্যা মিলিয়ে দেখতে নির্বাচন কমিশনকে ভোটার লিস্ট প্রকাশেরও নির্দেশ দেন সেনাবাহিনী।
ইয়াংগং: ব্রিটিশদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার পরও একপ্রকার পরাধীনই ছিল মায়ানমার! প্রায় ৫০ বছর মিলিটারি শাসনে থাকার পর গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা শুরু হয়েছিল মায়নমারে, সোমবার ফের একবছরের জন্য দেশে জরুরি অবস্থা জারি করল সেনাবাহিনী। আজ সকালেই সু কি (Aung San Suu Kyi) সহ দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের আটক করে সেনাবাহিনী, তাঁদের কোথায় আটক করে রাখা হয়েছে, তাও জানা যায়নি।
১৯৯১ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন মায়ানমারের ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (National League for Democracy)-র প্রধান আং সু কি, তাঁর বিরুদ্ধেই অভিযোগ নির্বাচনে কারচুপির। তবে কি ফের সেনাবাহিনীর হাতেই চলে যাবে মায়ানমারের শাসনব্যবস্থা?
মিলিটারি শাসন থেকে মুক্তি-
১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছিল মায়ানমার। তারপরই সেনাবাহিনীর হাতে চলে যায় রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা। ৪৯ বছর ধরে মিলিটারি শাসন চলার পর ২০১১ সালে প্রথম নির্বাচন হয় মায়ানমারে। এরপর ফের ২০২০ সালে নভেম্বর মাসে নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে জয়লাভ করে সু কির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি। কিন্তু নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে দীর্ঘদিন ধরেই সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিরোধ চলছিল সরকারের। সম্প্রতি সেই বিরোধ চরমে ওঠে।
আরও পড়ুন: মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান, সাতসকালেই আটক আং সু কি, ১ বছরের জরুরি অবস্থা জারি
নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ-
সম্প্রতি সেনাবাহিনীর তরফে অভিযোগ তোলা হয়, গত বছরের নভেম্বরের নির্বাচনে প্রায় এক কোটিরও বেশি ভোটে কারচুপি হয়েছে। ভোট সংখ্যা মিলিয়ে দেখতে নির্বাচন কমিশনকে ভোটার লিস্ট প্রকাশেরও নির্দেশ দেন সেনাবাহিনী। গত সপ্তাহেই মিলিটারি চিফ জেনারেল মিন আং লাঙেইং জানান, বিশেষ পরিস্থিতিতে হয়তো ২০০৮ সালের সংবিধান প্রত্যাহার করা হতে পারে। এরপরই সেনা অভ্যুত্থানের আশঙ্কা করেছিলেন কূটনৈতিকমহল।
সু কি-র ভূমিকা-
২০১০ সালে নির্বাচনে সেনাবাহিনীর হাত থেকে মায়নমারবাসীর মুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন আং সু কি। সেই নির্বাচনে আং সু কির দল নির্বাচন বয়কট করায় মিলিটারির সমর্থনপ্রাপ্ত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি জয় লাভ করে। ২০১২ সালের উপনির্বাচনে ৪৫টি আসনের মধ্যে ৪৩টি আসনই দখল করে এনএলডি। তিনিই দেশের প্রথম স্টেট কাউন্সিলরের পদে বসেন।
বিরোধী নেতা হিসাবে দীর্ঘ ২০ বছর বারবার গৃহবন্দি থাকার পর ২০১০ সালে সেনাবাহিনীর হাত থেকে মুক্তি পান সু কি। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা মুসলিম উচ্ছেদ ও গণহত্যার অভিযোগে নোবেল প্রাপ্ত সু কির ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তবে দেশের মানুষের কাছে সেই জনপ্রিয়তার কোনও প্রভাব পড়েনি। এরপর গত নির্বাচনেও সেনাবাহিনীর তরফে কারচুপির অভিযোগ করা হলেও নির্বাচন কমিশন সেই অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হয়।
মায়ানমারের সংসদের ২৫ শতাংশ আসন সেনাবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত থাকে। তিনটি মন্ত্রীত্বও তাঁদের জন্য সংরক্ষিত। কিন্তু কেবল ২৫ শতাংশেই নয়, দেশের সম্পূর্ণ শাসনব্যবস্থাই নিজেদের হাতে রাখতে চাইছে সেনাবাহিনী।
আরও পড়ুন: রুশ গোয়েন্দাদের ৪০ বছর গবেষণার ‘থিসিস পেপার’ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প!