৩ সন্তান চেয়ে রয়েছে মুখের দিকে, দুরু দুরু বুকেই বিমানবন্দরে যাত্রীদের স্বাগত জানাচ্ছে রাবিয়া

Afghan Women Return to Work: কাবুল বিমানবন্দর সচল হতেই শনিবার বিমানবন্দরের চেকিং পয়েন্টে দেখা যায় ছয় মহিলাকে। নীল রঙের স্যুট পরেই তাঁরা হাসি মুখে স্বাগত জানাচ্ছেন, মহিলা যাত্রীদের ব্যাগ পরীক্ষা করে দেখছেন তাঁরা।

৩ সন্তান চেয়ে রয়েছে মুখের দিকে, দুরু দুরু বুকেই বিমানবন্দরে যাত্রীদের স্বাগত জানাচ্ছে রাবিয়া
প্রতীকী ছবি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 12, 2021 | 5:20 PM

কাবুল: পেটের দায় হার মানাল বন্দুকের ভীতিকেও। দেশের শাসনভার তালিবানের হাতে চলে যাওয়ার পরই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল কাজ। কিন্তু সংসারও তো চালাতে হবে। সেই কারণেই এক মাস সময় কাটার আগেই ফের বিমানবন্দরের কাজে ফিরলেন কাবুলের ১২ জন মহিলা।

রাবিয়া জামাল নামক ওই আফগান মহিলা বিমানবন্দরের কর্মী। গত ১৫ অগস্ট তালিবানরা কাবুল দখল নেওয়ার পরই কাজে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।  কারণ তালিবানি ফতেয়ায় বলা হয়েছিল, মহিলাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত না হওয়া অবধি তারা যেন বাড়িতেই থাকেন। তবে তিন সন্তানের মা রাবিয়ার কাছে বাড়িতে বসে থাকার সুযোগও যে নেই।

কাবুল বিমানবন্দর সচল হতেই শনিবার বিমানবন্দরের চেকিং পয়েন্টে দেখা যায় ছয় মহিলাকে। নীল রঙের স্যুট পরেই তাঁরা হাসি মুখে স্বাগত জানাচ্ছেন, মহিলা যাত্রীদের ব্যাগ পরীক্ষা করে দেখছেন তাঁরা। ভয়ের পরিবেশের মাঝেও কাজে ফেরার কারম জিজ্ঞাসা করতেই রাবিয়া বলেন, “সংসার চালানোর জন্য আমার টাকার প্রয়োজন। টাকার অভাবে বাড়িতে সবসময় একটা অদ্ভুত চাপের পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। আমার খুব খারাপ লাগছিল। কাজে ফিরতে পেরে এখন ভাল লাগছে।”

রাবিয়ার বোন কুদশিয়া জামালও পাঁচ সন্তানের মা এবং পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। তিনি বলেন, “তালিবান যেভাবে ক্ষমতা দখল করল, তাতে আমরা সকলেই চমকে গিয়েছিলাম। আমার পরিবারও আতঙ্কিত ছিল, বারবার আমায় বলেছিল, কাজে যেন যোগ না দিই। কিন্তু পেটের দায়ে কাজে ফিরেছি। এখনও অবধি কোনও সমস্যার সৃষ্টিও হয়নি। আপাতত আমরা খুশিই রয়েছি, স্বস্তিতে রয়েছি।”

বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, আফগানিস্তানের সরকার পতনের আগে ৮০ জনেরও বেশি মহিলাকর্মী কাজ করতেন। কিন্তু তালিবানরা কাবুল দখলের পরই  সকলে কাজে আসা বন্ধ করে দেন। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বিমানবন্দর ফের একবার সচল হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গেই কাজে ফিরেছেন ১২ জন মহিলা কর্মী।

সূত্রের খবর, তালিবান মুখে নারী স্বাধীনতার কথা বললেও বাস্তবে অন্য রূপই দেখাচ্ছে। রাজধানী কাবুলে যে সমস্ত মহিলারা কর্মরত ছিলেন, তাদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজনকেই কাজে ফেরার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বাকিদের জানানো হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না আসা অবধি তারা যেন বাড়িতেই থাকেন।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল অবধি তালিবানের শাসনকালে আফগানিস্তানে জারি ছিল শরিয়া আইন। সেই আইনে মহিলাদের শিক্ষা ও কাজ করার অধিকার ছিল না। পর্দার আড়ালেই থাকতে হত তাদের। তবে ২০ বছর বাদে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসতেই তালিবান জানিয়েছে, তারা অনেক বদলে গিয়েছে। শরিয়া আইন মেনেই মহিলাদের শিক্ষা ও কাজ করার অধিকার দেওয়া হবে। তবে তালিবান সরকারের ঘোষণা হওয়ার পরই নয়া নির্দেশিকা বলছে অন্য কথা।

চলতি সপ্তাহেই তালিবানের সাংস্কৃতিক কমিশনের ডেপুটি প্রধান আহমাদুল্লাহ ওয়াসিক ঘোষণা করেন, “মহিলাদের খেলাধুলোর কোনও প্রয়োজন নেই। এতে শরীর প্রদর্শন হয়, যা আইন বিরুদ্ধ। তাই এতদিন ধরে আফগান মহিলারা ক্রিকেট সহ অন্যান্য যে ক্রীড়াগুলিতে অংশ নিতেন, সেগুলিতে আর অংশ নিতে পারবেন না।”

মহিলাদের শিক্ষাব্য়বস্থা নিয়েও নয়া নির্দেশিকা জারি করেছিল তালিবান। ফতেয়ায় বলা হয়েছিল, মহিলারা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারলেও তারা ছাত্রদের সঙ্গে একই কক্ষে বসতে পারবেন না। স্বামী বা রক্তের সম্পর্ক রয়েছে, এমন কোনও পুরুষ সঙ্গীর তত্বাবধানেই তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন। যদি আলাদা ক্লাসরুমের ব্যবস্থা না করা যায়, তবে ১৫ জনের বেশি পড়ুয়া থাকলেও মাঝখানে পর্দা টাঙিয়ে দিতে হবে। মহিলাদের ক্লাসও ৫ মিনিট আগে শেষ করতে হবে, যাতে বেরনোর সময় পুরুষদের সঙ্গে দেখা না হয়। মহিলাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার জন্য আবায়া ও নিকাব পরতে হবে।

শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও বলা হয় একমাত্র মহিলা শিক্ষিকারাই ছাত্রীদের পড়াতে পারবেন। একান্তই যদি শিক্ষিকা না পাওয়া যায়, তবে ভাল চরিত্রের কোনও বয়স্ক শিক্ষককে নিয়োগ করা হবে।

  আরও পড়ুন: Covid-19 positive: সর্দি, কাশি, খিদেও নেই তেমন! করোনার হাত থেকে নিস্তার পেল না গরিলারাও