প্রচণ্ড রেগে ছিল ওরা, ছোট্ট কুঠুরি নিয়ে গিয়েই শুয়ে পড়তে বলল, তারপর… তালিব বর্বরতার কথা শোনাল আহত সাংবাদিকরা

Afghan Journalist Share How Taliban Tortured Them: মাটিতে শুয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে বেধড়ক মারধর, লাথি ও  চাবুক দিয়ে মারধর করা হয়। যতক্ষণ না তিনি ও তাঁর সঙ্গী সংজ্ঞা হারান, ততক্ষণ মারতেই থাকে তালিবান।

প্রচণ্ড রেগে ছিল ওরা, ছোট্ট কুঠুরি নিয়ে গিয়েই শুয়ে পড়তে বলল, তারপর... তালিব বর্বরতার কথা শোনাল আহত সাংবাদিকরা
মারধরের পরের অবস্থার সেই চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 13, 2021 | 6:58 AM

কাবুল: সম্প্রতিই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল একটি চিত্র, যেখানে দেখা গিয়েছিল দুই আফগান সাংবাদিকের (Afghan Journalist) শরীর জুড়ে কালশিটে। তাদের অপরাধ ছিল একটাই, তালিবান সরকারের বিরুদ্ধে বের হওয়া মহিলাদের মিছিলের ছবি তুলছিলেন তারা। নির্যাতিত ওই দুই সাংবাদিকের মধ্যেই একজন এ বার মুখ খুললেন, কীভাবে তাদের উপর অত্যাচার চালিয়েছিল তালিবান(Taliban), তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিলেন।

গত সপ্তাহের বুধবার কাবুলে বের হওয়া মহিলাদের একটি মিছিলের সংবাদ যখন সংগ্রহ করছিলেন তাকি দারইয়াবি, সেই সময়ই হাজির হয় তালিবানরা। তাদের কার্য়ত অপহরণ করে পশ্চিম কাবুলের একটি থানায় নিয়ে যায় তারা। দারিয়াবি জানিয়েছে, থানায় প্রবেশ করা মাত্রই তাঁকে ছোট্ট একটি কুঠুরিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে মাটির দিকে মুখ করে শুয়ে পড়ার নির্দেশ দেয় তালিবান।

২২ বছরের ওই সাংবাদিক জানিয়েছে, ঠিক কতজন উপস্থিত ছিল, তা মনে করতে না পারলেও আন্দাজ কমপক্ষে আটজন তালিবান যোদ্ধা ওই জেলে উপস্থিত ছিল। মাটিতে শুয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে বেধড়ক মারধর, লাথি ও  চাবুক দিয়ে মারধর করা হয়। যতক্ষণ না তিনি ও তাঁর সঙ্গী সংজ্ঞা হারান, ততক্ষণ মারতেই থাকে তালিবান।

তবে তালিবানের অত্যাচার এখানেই শেষ নয়। মুখে ঠাণ্ডা জল ছুড়ে মেরে তাদের জ্ঞান ফেরায় তালিবানিরা। ফের শুরু হয় মারধর। যতবারই ব্যাথ্যায় তারা সংজ্ঞা হারাচ্ছিলেন, তাদের জ্ঞান ফিরিয়ে ফের মারধর শুরু করছিল তালিবান বাহিনী। ওই সাংবাদিকের সঙ্গী নেহমাতুল্লাহ নাকদিও তালিবানি অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। তাঁকেও একটি ছোট ঘরে নিয়ে গিয়ে মারধর করে ১০ জন তালিব বাহিনীর সদস্য। একবার মার শুরু হলে সংজ্ঞা হারানো অবধি সেই মারধর থামছিল না বলেই জানান তিনি।

চোখে মুখে আঘাতের চিহ্নগুলি দেখিয়ে তিনি বলেন,”ওরা যখন আমায় লাঠি, তার, রাবার ব্যান্ড, চাবুক দিয়ে মারধর করছিল, তখন মনে হচ্ছিল মরেই যাব। এত যন্ত্রণা হচ্ছিল যে মনে হচ্ছিল এক্ষুণি মরে যাব।” তালিবান বাহিনী তাদের মুক্তি দেওয়ার পর হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করালেও, বাড়ি ফিরে এখনও তারা হাত-পা নাড়াতে পারছেন না বলেই জানিয়েছেন।

আফগানিস্তানের অন্যতম বিখ্যাত সংবাদ মাধ্যম এটিলাট্রোজ় ওই দুই সাংবাদিকের গায়ে নীলচে কালে দাগের ছবি প্রকাশ্যে আসতেই সকলে চমকে ওঠেন। জানা যায়, তাকি দায়রাবি ও নেমাতুল্লাহ নাকদি নামক ওই সাংবাদিক ও  ভিডিয়ো এডিটর বুধবার পশ্চিম কাবুলের কার্ট-ই-চার এলাকায় মহিলাদের একটি প্রতিবাদ মিছিলের ছবি তুলছিলেন। সেই সময়ই আচমকা চড়াও হয় তালিবানরা।তাদের তুলে নিয়ে যায় থানায়। সেখানেই দুটি ভিন্ন ঘরে তাদের প্রচন্ড মারধর করা হয়।

এটিলাট্রোজ় সংবাদপত্রের প্রতিষ্ঠাতা তথা প্রধান সম্পাদক জ়াকি দারইয়াবিও জানান, গত ১৫ সেপ্টেম্বর তালিবান ক্ষমতা দখলের পরই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে ,ন্দিহান হয়ে পড়েছিলেন। তিনি নিজের সংস্থার ৪৫ কর্মচারীকেই দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু মাত্র ১০ জনই দেশ ছেড়ে পালাতে পেরেছে। যারা আফগানিস্তানেই থেকে গিয়েছি, তারা কাজ শুরু করতেই তালিবানি বর্বরতার মুখে পড়ল।

আরও পড়ুন: খুনের আগে উপড়ে নেওয়া হচ্ছে নখ, মাথা লক্ষ্য করে পরপর গুলি! সন্ত্রাস দমন বাহিনীকেই খতম করছে তালিবান