Syria New President: আইসিস-আল কায়দা পেরিয়ে প্রেসিডেন্ট! সিরিয়ায় আমেরিকার ‘নতুন বন্ধু’কে চিনুন
প্রথমে সিরিয়ায় নয়া প্রেসিডেন্ট তথা প্রাক্তন আল-কায়দা নেতার সঙ্গে তিনি সৌদি আরবে হ্যান্ডশেক করলেন। আর এবার ডিক্রি সই করে জানিয়ে দিলেন দামাস্কাস আর ওয়াশিংটনের স্যাংশনের আওতায় থাকছে না।

দিন পনেরো আগেই দামাস্কাসের গির্জায় বোমা ফেটেছিল। মৃত ২৫ জন। আহত পঞ্চাশের বেশি। নতুন সরকার খুব শক্ত হাতে দেশ চালাচ্ছে, সংখ্যালঘুরা শান্তিতে আছেন – নিশ্চয়ই এরপর বলা যাবে না। রেজিম চেঞ্জ হওয়ার পর ছয় মাস কেটে গেছে। কবে ভোট তা দূরবীন দিয়েও দেখা যাচ্ছে না। ফলে, একনায়ক বাসার অল-আসাদের পতনের পর যে সিরিয়ায় গণতন্ত্রের সুপবন বহিছে, তাও বলা যাবে না। তবুও ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন বলছেন সমস্ত ভালো হচ্ছে, তাহলে তো বলতেই হবে যে সব ভালো হচ্ছে। তাই, পশ্চিমী দুনিয়া চুপচাপ। আর সেই ফাঁকে সিরিয়ার ওপর থেকে উঠে গেল মার্কিন নিষেধাজ্ঞা। কথায় বলে রাজনীতিতে চিরস্থায়ী বন্ধু কিংবা শত্রু বলে কিছু হয় না। নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রবচনটাকে অন্যমাত্রায় নিয়ে গেলেন আর কী।
প্রথমে সিরিয়ায় নয়া প্রেসিডেন্ট তথা প্রাক্তন আল-কায়দা নেতা আহমেদ আল-শারার সঙ্গে তিনি সৌদি আরবে হ্যান্ডশেক করলেন। আর এবার ডিক্রি সই করে জানিয়ে দিলেন দামাস্কাস আর ওয়াশিংটনের স্যাংশনের আওতায় থাকছে না। মার্কিন অর্থ দফতর জানিয়ে দিয়েছে সিরিয়ার উন্নয়ন, সরকার চালানো ও দেশের পরিকাঠামো পুনর্গঠনের কাজে ইউএস স্যাংশন আর বাধা হবে না। শুধু তাই নয়, আসাদকে সরানোর জন্য আল-শারার তৈরি করা বিদ্রোহী বাহিনীতে যেসব জঙ্গিরা ছিল, তারা এবার যোগ দিচ্ছে সিরিয়ার সরকারি সেনায়। নতুন সিরিয়ান প্রেসিডেন্টকে এই বিষয়েও ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট কার জন্য আসন পেতে গায়ে হাওয়া করে দিচ্ছেন জানেন? প্রেম এতই, যে ভুলেও ভাবছেন না, সুন্নি জেহাদিরা সেনায় ঢুকলে এবার সিরিয়ায় সংখ্যালঘু শিয়াদের কী অবস্থা হবে।
ভদ্রলোকের বায়ো-ডেটা কীরকম জানেন? জন্ম সিরিয়ার গোলান হাইটসে। আমেরিকা যখন ইরাক আক্রমণ করল তখন সাদ্দামের সেনার হয়ে লড়তে ইরাকে চলে গেলেন। তারপরে সিরিয়ায় ফিরে এসে আইসিসে যোগদান। কিছুদিনের মধ্যেই আইসিসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে ঢুকে গেলেন আল-কায়দায়। আমেরিকা তখন এঁরই মাথার দাম ধার্য করেছে ভারতীয় মুদ্রায় ৭৫ কোটি টাকা। আল-কায়দাতেও মন টিকল না। এবার আহমেদ আল-শারা তৈরি করলেন নিজের আলাদা জঙ্গিগোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম। আইসিস নেতা আবু বকর আল বাগদাদি মারা যাওয়ার পর সিরিয়ার ইদলিব সংলগ্ন এলাকায় প্যারালাল গভর্মেন্ট চালানো শুরু করে দেন তিনি। সেখানে রুশপন্থী আসাদের সেনা ঢোকার জো ছিল না। ব্যাস! বাউন্টি উঠে গেল। আমেরিকার চোখের মণি হয়ে উঠলেন এই আহমেদ আল-শারা। তারপর, গত ৮ ডিসেম্বর বাসার আল-আসাদের পতন। ১২ বছরে যেটা করা যায়নি, মাত্র ১২ দিনে সেটা করে দেখিয়ে দেন আল-শারা। এরপর তাঁর ওপর আমেরিকার কৃপাদৃষ্টি কী আর না পড়ে পারে!
স্যাংশন ওঠার জন্য তিনটি প্রধান কারণের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। প্রথমত, ক্ষমতায় এসে সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন যে তাঁর দেশে রাশিয়ার সেনাঘাঁটি আগের মতোই থাকবে। ট্রাম্প চাইছেন, আল-শারা আস্তে আস্তে সিরিয়া থেকে কুলোর বাতাস দিয়ে রুশ সেনাকে বিদায় করুন। সে জায়গায় ঢুকে পড়বে মার্কিন সেনা। দুই, নিষেধাজ্ঞা তুলে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর জন্য ইনসিওরেন্স কিনলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিশ্চিত করতে চাইলেন সিরিয়ার মাটি থেকে ইজরায়েলের ওপর অদূর ভবিষ্যতে আর হামলা হবে না। আর তিন নম্বরটা অমোঘ। সিরিয়ায় অবাধে বিকোবে মার্কিন পণ্য। সিরিয়ার নতুন সেনা আমেরিকার থেকে অস্ত্র কিনবে। একটা কথা স্পষ্ট, আসাদ পরিবারের স্বৈরাচার থেকে সিরিয়াকে মুক্তি দিতেই যদি বিদ্রোহী বাহিনীকে সাহায্য করে থাকে আমেরিকা। তাহলে এখনই আহমেদ আল-শারাকে ট্রাম্পের বলা উচিত, আপনি দেশে ভোট করান। না হলে আরেকটা আসাদই তৈরি হবে। আর ইতিহাসের লিখন বলে, তাহলে নতুন আসাদকেও আগের আসাদের মতোই যেতে হবে।





