ঢাকা: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রায় দিয়েছিল, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ করা হবে। কোটি বিরোধী আন্দোলনকারীদের দাবি প্রায় পুরোটাই মিটেছিল। মনে করা হয়েছিল, তাতে আগুন নিভবে। কিন্তু না, পুরো বাংলাদেশ ফের ক্ষোভের আগুণে পুড়ছে। কোটা-বিরোধী আন্দোলনকারীরা মূলত ছিলেন শিক্ষার্থী। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা উপজেলায় তাদের সমর্থনে রাস্তায় নেমেছেন সাধারণ মানুষও। জেলায় জেলায় ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে আন্দোলনকারী এবং পুলিশের মধ্যে। ক্ষমতাসীন আওয়ামি লিগের ছাত্র ও যুব সংগঠনের সদস্যরাও নাকি সশস্ত্র অবস্থায় আন্দোলনকারীদের শায়েস্তা করতে মাঠে নেমেছেন। এরই মধ্যে শনিবার (৩ অগস্ট), চন্নাপাড়া উপজেলার গাজীপুরের বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে প্রাণ গিয়েছে মহম্মদ জাহাঙ্গির আলম (৪৫) নামে এক যুবকের। আর এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত শাহবাগ মোড় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান বিক্ষোভ করছেন আন্দোলনকারীদের একটি অংশ। তাদের দাবি একটাই, এই সরকারের পদত্যাগ চাই।
এদিন দুপুরে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে তাতে অংশ নেন হাজারো মানুষ। হাজার হাজার আন্দোলনকারীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে জনসমুদ্রে পরিণত হয় ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার এলাকা। রিকশাওয়ালা, দিনমজুর, ফেরিওয়ালা, শিক্ষক, মৌলানা, ডাক্তার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব-সহ নানা শ্রেণির, নানা পেশার মানুষ বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। সামরিক বাহিনী প্রাক্তন কর্মকর্তারাও বাস্তায় নেমে বিক্ষোভকারীদের প্রতি সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। অবস্থান বিক্ষোভ থেকে স্লোগান ওঠে, ‘এক, দুই, তিন, চার, শেখ হাসিনা স্বৈরাচার’, ‘আমার ভাই কারাগারে, খুনী কেন বাহিরে’, দফা এক দাবি এক, হাসিনার পদত্যাগ’।
আন্দোলনের নেতৃত্ব জানিয়েছেন, শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নন, এই সরকারের সকল মন্ত্রীকেই পদত্যাগ করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে, দ্রুত ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের জন্য সর্বস্তরের নাগরিক, ছাত্রসংগঠন ও সব পেশাজীবী মানুষের সঙ্গে মিলে সম্মিলিত মোর্চা ঘোষণা করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার বিলোপ করার ডাক দিয়ছেন তাঁরা। রবিবার থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন করারও ডাক দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারকে কর না দেওয়া, বিদ্যুৎ-জলের বিল না দেওয়ার মতো পদক্ষেপ করার কথা বলা হয়েছে।
এদিকে, কুমিল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে আওয়ামি লিগ, ছাত্রলিগ, যুবলিগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ও সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জানিয়েছেন, পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়েছন। এছাড়াও ৩০ আরও জনের মতো আহত হয়েছেন। এদিন প্রথমে কুমিল্লা জেলা স্কুলের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিল। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ তাঁরা পূবালী চত্বরে আসে। সেখানেই তাদের উপর হামলা হয় বলে অভিযোগ।