ঢাকা: বর্তমানে অগনিত টাকার মালিক আরাভ খান। অথচ, বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখার ইনস্পেক্টর মামুন এমরান খানকে হত্যার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। পালিয়ে ভারতে এসে আত্মগোপন করেছিলেন। থাকতেন কলকাতার পাশেই নরেন্দ্রপুরের বস্তি এলাকায়। এখন তিনি দুবাইয়ের বুর্জ খলিফায় কোটি টাকার ফ্ল্যাটের বাসিন্দা, সোনার গয়নার ব্যবসা করেন। দুদিন আগেই দুবাইয়ে আরাভের একটি জুয়েলারি শোরুমের উদ্বোধন করেন বংলাদেশি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, অভনেতা হিরো আলম, চলচ্চিত্র নায়িকা দিঘি-সহ বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন সেলিব্রিটি। এরপরই ফের চর্চায় আরাভ খানের নাম। সামনে এসেছে তাঁর অনেক অজানা কাহিনী। আর, সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে সাকিবদের।
২০১৮ সালে পুলিশ কর্তা মামুন ইমরান খানকে হত্যার পর পেট্রল ঢেলে তার দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। তারপর দগ্ধ দেহটি গাজীপুরে এক জঙ্গলের ভেতর ফেলে দেয় দুর্বৃত্তরা। এই মামলার মূল অভিযুক্ত ছিলেন আরাভ খান। সেই সময় থেকেই তিনি পলাতক। বাংলাদেশ পুলিশের জয়েন্ট কমিশনার হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তিনি গা ঢাকা দেন পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ফরতাবাদ এলাকায়। আসল পরিচয় গোপন করে, সেখানকার উদয় সংঘ ক্লাবের পাশে জনৈক জাকির খানের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন আরাভ ও তাঁর স্ত্রী সাজেমা নাসরিন। চালাকি করে জাকির খান ও তার স্ত্রী রেহানা বিবিকে বাবা-মা বলে ডাকতেন তাঁরা। আর সেই সম্পর্ককে কাজে লাগিয়েই জাকির ও রেহানার ভারতীয় আধার কার্ড চুরি করে ভুয়ো ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করেছিলেন আরাভ। পাসপোর্টে তাদের ঠিকানা রয়েছে, কন্দর্পপুর, উদয় সংঘ ক্লাব, রাজপুর-সোনারপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা-৭০০০৮৪। এরপর ওই পাসপোর্ট নিয়ে তারা দুবাই পাড়ি দেন।
যে জাকির খানকে বাবা বলে পরিচয় দিয়েছিল আরাভ, বছর দুয়েক আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। জাকিরের স্ত্রী রেহানা বিবি খান বলেছেন, “পাঁচ বছর আগে ভাড়াটিয়া হিসেবে এসেছিল আরাভ। আমাদের বাড়িতে এক বছর ভাড়া ছিল, তারপর দুবাই চলে যায়। বাড়ির মালিকের সঙ্গে একজন ভাড়াটিয়ার যে সম্পর্ক থাকে, আরাভ খানের সঙ্গে আমাদেরও সেই সম্পর্ক ছিল। তবে এলাকার লোকের সঙ্গে খুব একটা মেলামেশা করত না আরাভ। বাইরেও খুব একটা বের হত না।” কন্দর্পপুরের স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন তাঁরা প্রত্যেকেই ব্যক্তিগতভাবে আরাভকে চিনতেন। বিএমডব্লিউ বাইক নিয়ে ঘুরতেন তিনি। এলাকায় নিজেকে একজন ফিল্ম আর্টিস্ট বলে পরিচয় দিয়েছিলেন।
এহেন আরাভ খানের সোনার গয়নার দোকানের উদ্বোধন করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান-সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের তারকারা। এদিকে আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলামের দাবি, পুলিশ ইন্সপেক্টর মামুন এমরান খান হত্যার সঙ্গে তিনি কোনওভাবেই জড়িত নন। শুক্রবার, বাংলাদেশের সময় দুপুরে একটা নাগাদ এক ফেসবুক লাইভ করে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নস্যাৎ করেছেন।
ফেসবুক লাইভে আরাভ খান দাবি করেছেন, “আমি খুনের সঙ্গে জড়িত নই। ওই দিন আমি ছিলাম না। মামলায় আমার বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগও আনা হয়েছে। সেটা যদি আমার অপরাধ হয়, আমি মেনে নিচ্ছি যে, গুমের সঙ্গে আমি জড়িত। সেই শাস্তি আমি মাথা পেতে নেব। ২০১৮ সালে বনানীতে (ঢাকা) আমার অফিস ছিল। ‘আপন বিল্ডার্স’ নামে আমার রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা ছিল। আমার সহকারী ফোনে খুনের বিষয়টি জানিয়েছিল। আমি তখন বাড়িতে ভাত খাচ্ছিলাম। যিনি খুন হয়েছিলেন তিনি একজন পুলিশ কর্তা। সেটা একটি দুর্ঘটনা ছিল। আমার অপরাধ ছিল আমি ওই অফিসের মালিক। আমার আমেরিকান গ্রিন কার্ড আছে। কানাডিয়ান পাসপোর্ট আছে। কই আমি তো চলে যাইনি। আমি খুনের সঙ্গে জড়িত না। জড়িত থাকলে পালিয়ে যেতাম। আমার অফিসে খুন হয়েছে। এই কারণে বিচার হলে আমি মাথা পেতে নেব।”