ঢাকা: চলছে রমজান মাস। সামনেই ইদ। বাংলাদেশের ঘরে ঘরে এখন থেকেই আসন্ন উৎসবের আনন্দের মেজাজ দেখা যাচ্ছে। ইদের সময় নতুন জামা-কাপড় কেনার পরিকল্পনাও চলছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকেই মানুষ আসেন ঢাকায় কেনাকাটা করতে। আর এই ক্ষেত্রে সকলেরই প্রথম পছন্দ ছিল বঙ্গবাজার। গুলিস্তানের এই বাজার মূলত পাইকারী বাজার হলেও, সাশ্রয়ী মূল্যে খুচরা জামা-কাপড়ও বিক্রি হয় এখানে। ক্রেতাদের ভিড়ের আশায় ইদের আগে অনেক বেশি বেশি জিনিসপত্র তুলেছিলেন বঙ্গবাজারের ক্রেতারাও। কিন্তু, মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সকালের এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে এই বাজারের ব্যবসায়ীদের স্বপ্ন। ভয়াবহ আগুনে পুড়ে গিয়েছে অন্তত সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার দোকান। এদিন সকাল থেকেই বঙ্গবাজার এলাকার পুরো আকাশ ঢেকে গিয়েছিল কালো ধোঁয়ায়। আর সেই অন্ধকারই নেমে এসেছে ব্যবসায়ীদের জীবনে। সর্বস্ব খুইয়ে পথে বসেছেন বঙ্গ বাজারের বহু পোশাক ব্যবসায়ী।
বঙ্গবাজার এলাকা জুড়ে এখন শুধুই হাহুতাশ শোনা যাচ্ছে। ইদের বাজারের কথা মাথায় রেখে, অনেক নতুন মাল তুলেছিলেন পোশাক ব্যবসায়ী ইব্রাহিম। তিনি জানিয়েছেন, সব মিলিয়ে তাঁর দোকানে ২০ লক্ষ টাকারও বেশি মূল্যের মাল ছিল। কিন্তু, এদিন সকালের আগুনে সবকিছু পুড়ে ছাই গিয়েছে। বঙ্গবাজারের আরেকটি দোকানর মালিক বলেছেন, “আমি নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি। কীভাবে বাকি জীবন চলবে, জানি না।” আরেক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, শুধু তাঁরই নয়, তাঁদের পরিবারবর্গের আরও বেশ কয়েকটি দোকান রয়েছে বঙ্গবাজারে। ইদ উপলক্ষে সকলেই নতুন পোশাকে দোকান ভরিয়েছিলেন। এমনকি, তার জন্য এদিক-ওদিক ধার-দেনাও করেছেন। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর সেই সব দেনা মেটাবেন কী করে, তাই বুঝে পাচ্ছেন না ওই ব্যবসায়ী। তাঁর মতে, এই ধাক্কা কোনও সাময়িক ধাক্কা নয়। এই আগুন তাঁর মতো ব্যবসায়ীদের বাকি জীবনটাও পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। হতভাগ্য ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বঙ্গবাজারের সঙ্গে প্রায় দেড় লক্ষ মানুষের জীবন ও জীবিকা জড়িত। আগুনের ভয়াবহতায় সকলেই প্রায় নিঃস্ব হয়ে গিয়েছেন।
বঙ্গবাজারের ঠিক উল্টোদিকেই রয়েছে বাংলাদেশ দমকল বিভাগের সদর দফতর। তার পাশেই ঢাকা সিটি কর্পোরেশন বা নগর ভবন। তার পাশে বাংলাদেশ পুলিশের সদর দফতর। এই রকম ‘হাই সিকিওরিটি’ এলাকায় কীভাবে এত বড় আগুন লাগল এবং কেউ টের পেল না, সেই বিষয়ে প্রশ্ন উঠছে। সবথেকে বড় কথা, গুলিস্থানে এই বঙ্গবাজারের কাছেই গত মাসে এক বড় মাপের বিস্ফোরণে ২২ জনের প্রাণ গিয়েছিল। সেই ঘটনার পরও ওই এলাকায় অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, সেই প্রশ্নও উঠছে। এদিন, সকাল ৬ টা বেজে ১০ মিনিট নাগাদ বঙ্গবাজারে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। দমকলের ৫০টি ইঞ্জিন এসে ৬ ঘণ্টার চেষ্টায় সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তাদের সঙ্গে হাত লাগিয়েছিল, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনীর ৩টি হেলিকপ্টার ইউনিট, বিজিবি, ব়্যাব এবং বাংলাদেশ পুলিশ। আর ছিলেন হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবী। তবে অগ্নি নির্বাপণ এবং উদ্ধারকাজের সার্বিক মনিটরিং ও সমন্বয় করেন খোদ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার পর, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনেও দ্রুত ও কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা।