ঢাকা : “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো, একুশে ফেব্রুয়ারি (Ekushe February) আমি কি ভুলিতে পারি! ছেলে হারা শত মায়ের অশ্রু গড়ায়ে ফেব্রুয়ারী। আমার সোনার দেশের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি।” লক্ষ লক্ষ ভিউ, কোটি কোটি লাইকের বন্যায় বর্তমানে অনেকের ইউটিউবের প্লে লিস্টের শীর্ষ তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছে এই কবিতা, গান। কিন্তু, কীভাবে একটি কবিতা ভাষা আন্দোলনের (Language Movement of Bangladesh) অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠল? কীভাবে প্রভাতফেরির একমাত্র গান হয়ে উঠল সেই কবিতা? কীভাবে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের প্রেরণা হয়ে উঠল তা জানতে আমাদের ফিরে যেতে হবে ১৯৪৮ সালে। ওই বছর থেকেই ধীরে ধীরে তীব্র হয়ে উঠতে শুরু করেছিল ভাষা আন্দোলন।
১৯৫২ সালের শুরু থেকেই পূর্ববঙ্গে আরও বেড়েছিল ভাষা আন্দোলনের ঝাঁঝ। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে রাস্তায় নেমেছে তখন আপামর জনতা। একুশে ফেব্রুয়ারি গুলি চলে সেই আন্দোলনে। পুলিশের গুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, শফিউর, জব্বর সহ ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অনেক ছাত্র নিহত হন। মাতৃভাষা বাংলার অধিকারের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে রাজপথে শহীদ হন বাংলার দামাল ছেলেরা। তারপরই লেখা হয়েছিল একুশের এই গান। গানটির মধ্য দিয়ে ছাত্রদের উপর পুলিশের নির্বিচারে গুলি চালানোর তীব্র প্রতিবাদ করা হয়। এতে ফুটে ওঠে ভাষা আন্দোলনের শহীদের মহান আত্মত্যাগের কথা। গানটি লিখেছিলেন আব্দুল গফফর চৌধুরী। একুশের স্মৃতিচারণায় তিনি বলেন, “একুশের গানটি আকস্মিকভাবে লেখা। একজন ভাষা শহীদের লাশ দেখার পরে আমার মনে যে অনুভূতিটা এসেছিল সেটাই আমি কবিতার আকারে লিখি। সেই কবিতাটি গান হয়।”
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “এই গানটি লেখার পিছনে আব্দুল গফফর চৌধুরীর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া কাজ করেছে। কিন্ত, কখনও কখনও তাৎক্ষণিকতা চিরায়ত হয়ে ওঠে। এই গান তারই প্রমাণ।” আন্দোলনের প্রথম প্রকাশিত লিফলেটে একুশের গান শিরোনামে গানটি প্রকাশিত হয়। যদিও তখন গীতিকারের নাম ছাপা হয়নি। পরবর্তীতে ১৯৫৪ সালে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত একুশে সংকলনে গীতিকারের নাম সহ প্রকাশিত হয় গানটি। যদিও তৎকালীন সরকার গানটি নিষিদ্ধ করে। তবে তারপরেও এই গানের ব্যাপক জনপ্রিয়তাকে ঠেকানো যায়নি। আব্দুল গফফর চৌধুরীর মতে, “এই গানটির জনপ্রিয়তা শুধু তার কথার জন্য নয়, সুরের জন্যও হয়েছে। প্রথমদিকে শ্রেষ্ঠ সুরকার আব্দুল লতিফও এই গানের সুর দিয়েছিলেন। সেটিও জনপ্রিয় হয়েছিল।”